বৃহস্পতিবার, মে ১৬, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়ইন্টারনেট-ডিস বন্ধের ঘোষণা স্থগিত

ইন্টারনেট-ডিস বন্ধের ঘোষণা স্থগিত

ইন্টারনেট এবং ক্যাবল ডিস সংযোগ বন্ধ করার ঘোষণা স্থগিত করায় সাধারণ ভোক্তা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট মহলে স্বস্তি বিরাজ করছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে যথাযথ সমাধানের আশ্বাসে এখন বেশ স্বস্তিতে আছে খোদ আইএসপিএবি এবং কোয়াব। একই সঙ্গে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছেন গ্রাহকেরা। ঝুলন্ত তার অপসারণে কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের তার কেটে ফেলার প্রতিবাদে ১৮ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে ইন্টারনেট এবং ক্যাবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার কর্মসূচি দিয়েছিল আইএসপিএবি এবং কোয়াব। ইন্টারনেট সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি এবং ডিশ ক্যাবল সংযোগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন কোয়াবের এমন সিদ্ধান্তে জনমনে বেশ উদ্বেগ ও আতঙ্কের সঞ্চার হয়। তবে ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ডাক ও টেলিযোগাযো মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে এক জরুরি অনলাইন সভায় অংশ নেয় সংগঠন দু’টি। তার কাটার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হবে এবং সুষ্ঠু সমাধান করা হবে এমন আশ্বাসে অবশেষে এক সপ্তাহের জন্য সাময়িকভাবে কর্মসূচি স্থগিত করে সংগঠন দু’টি।

এমন সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরে পাচ্ছেন ইন্টারনেট এবং ডিস টিভির সাধারণ গ্রাহক, বিভিন্ন ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বাসাবো এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রায় দু’সপ্তাহ যাবত ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যায় ভুগছি। সিটি কর্পোরেশন তার কাটে, আবার তার দেয় আইএসপি আবার তার কাটা পড়ে। এর মাঝে ইন্টারনেট ও ডিশ বন্ধ থাকার সিদ্ধান্তে বেশ চিন্তায় ছিলাম। সরকার আর ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্বে বলির পাঠা হচ্ছি আমরা গ্রাহকেরা। আমরা তারের টাকা দেই, আমরা মাসে মাসে সংযোগের টাকা দেই কিন্তু আমাদেরকেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। আশা করছি এখন এই সমস্যার স্থায়ী এবং দীর্ঘ মেয়াদে সমাধান হবে। তাহলে আমাদের গ্রাহকদের ভোগান্তি কমবে।

সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এবং আইএসপিএবি-কোয়াবের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, আমরা এখন বলতে গেলে ইন্টারনেটেই নিশ্বাস নিয়ে থাকি। এই সমস্যার শুরু থেকেই আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলাম। সর্বশেষ আমাকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব জানিয়েছেন যে, রোববার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করা হবে এবং এবিষয়ে আলোচনা হবে। বিষয়টি সংগঠনগুলোকে জানালে তারা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের ওপর আস্থা রাখার জন্য সংগঠগুলোকে আমি সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে শুধু বিপজ্জনক না বরং চরম বিপজ্জনক হতে পারতো এমন একটি কর্মসূচি থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

এদিকে ১৮ অক্টোবর সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন আইএসপিএবি এবং কোয়াব নেতারা। তবে সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ওপরই ভরসা রাখছেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, বিষয়টি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হবে কাজেই তার সিদ্ধান্তের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। আর আমাদের বিশ্বাস তিনি সঠিক নির্দেশনাই দেবেন। সেক্ষেত্রে দক্ষিণের মেয়র বা অন্য কেউ কী সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা সেকেন্ডারি বিষয়।

সম্মিলিত উদ্যোগে সংগঠনগুলোকে কঠোর কর্মসূচি থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পলক বলেন, একটা সম্মিলিত চেষ্টার ফলেই আমরা তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এবং তারা এমন কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে এসেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন সেই লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

তবে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রতি জোর দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিস। সংগঠনটির পরিচালক দিদারুল আলম সানি বলেন, আমরা এখন যে প্রযুক্তি নির্ভর জীবনযাপন করি তার মূল বিষয়টি হচ্ছে ইন্টারনেট কানেকটিভিটি। বিষয়টির আপাতত সমাধান হলেও এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে। তার কেটে ফেলাও সমাধান না আবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখাও সমাধান না।

একইসঙ্গে সরকারের প্রতি ভরসা রাখছে আইএসপিএবি। সংগঠনটির সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, আমাদের দাবিদাওয়াগুলো সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সমাধানের আশ্বাস পেয়েছি আমরা। এরজন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়, আইসিটি বিভাগ এবং সর্বোপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমরা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরাও ঝুলন্ত তারের সমাধান চাই কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপট কী সেটা সকলকে বুঝতে হবে; বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনকে। আমাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরায় গণমাধ্যমের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আগামীকাল ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি তিনি বাস্তব অবস্থা বুঝে আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ