সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনআন্দোলনের মুখে আনাস মাদানীকে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি

আন্দোলনের মুখে আনাস মাদানীকে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি

দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষা সচিব ও হেফাজতের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি এ মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পুত্র। ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা সদস্য ও মেখল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা নোমান ফয়জী এ ঘোষণা দেন। মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর সভাপতিত্বে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। পরে আন্দোলনরত ছাত্ররাও মাইকে সেটা ঘোষণা করে জানিয়েছেন। এর আগে, দুপুর থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা পাঁচ দফা দাবিতে  মাদ্রাসাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তারপর থেকে মাদ্রাসার মাইক থেকে ছাত্ররা দফায় দফায় তাদের দাবি উপস্থাপন করেন। এরপর সন্ধ্যার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় সিনিয়র শিক্ষকরাসহ মাদ্রাসার শুরা কমিটির তিনজন সদস্য বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং ছাত্রদের কোন প্রকার হয়রানি করা হবে না এবং তাদের বাকি দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদান করা। হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা কমিটির সদস্য ও বাতুয়া মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা ওমর ফারুক বলেন বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শুরা কমিটির তিন সদস্য বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা আনাস মাদানীকে অব্যাহতি দিব এবং ছাত্রদের বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।

এদিকে রাত সাড়ে দশটার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার বড় মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, আনাস মাদানীকে অব্যাহতি দেওয়াসহ তাদের কয়েকটি দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। বাকি দাবিগুলোর জন্য আগামী শনিবার মাদ্রাসায় শুরা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাটহাজারী মাদ্রাসাসহ সারা বাংলাদেশের সমগ্র কওমি মাদ্রাসার একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে আন্দোলনরতদের পক্ষ থেকে।  হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনে দুপুর থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার রশিদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রাজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল, রাঙ্গুনিয়ার  সার্কেলের এসপি মো. আনোয়ার, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ উল্লাহ্, হাটহাজারী থানার ওসি মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ওসি তদন্ত রাজিব শর্মা, ওসি অপারেশন এএমআই তৌহিদুল করিমসহ পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য। পাশাপাশি উপস্থিতি রয়েছেন র‌্যাব ৭ চট্টগ্রামের হাটহাজারী সিপিসি ২ এর উপ পরিচালকসহ র‌্যাব সদস্যরাও। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার রাশেদুল হক বলেন, ‘দুপুর থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা মাদ্রাসা অবরুদ্ধ করে রাখার খবর পাওয়ার পর পর আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকি। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য পুলিশ র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, মাদ্রাসা অবরুদ্ধ রাখার বিষয়টি মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ বিষয়। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনসহ জেলা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে। এর আগে দুপুর থেকে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলন চলছে। আর মাদ্রাসার মসজিদের মাইক থেকে বার বার একটি আওয়াজ ভেসে আসছিল, প্রশাসনের কেউ ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করবেন না। অযথা আতংক সৃষ্টি করে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে সারাদেশের কওমি অঙ্গনে তা ছড়িয়ে পড়বে। এই রক্তপাতের দায় আপনাদেরকেই নিতে হবে। আরো বলা হয়- বাউন্ডারি ওয়াল ডিঙিয়ে পুলিশ ও র‍্যাব এর সদস্য ভাইয়েরা মাদ্রাসা অভ্যন্তরে ঢুকার চেষ্টা বন্ধ করুন। ওই সময় মাইকে আরও বলা হয়েছিল, ‘আমরা যথাযত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই সৃষ্ট জটিলতার সুরাহা করবো। এটা সরকার বিরোধী কোন আন্দোলন নয়। মনে রাখবেন, এটা কোন মহল বা সরকার বিরোধী আন্দোলন নয়। এটা আমাদের কওমি আকিদা রক্ষার, ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ