বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদটপঅপরিচিত কারো সাথে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগে!

অপরিচিত কারো সাথে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগে!

পরিচয় না জেনে সেলফি তোলা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগে!

অনুপ্রবেশকারী এবং প্রতারকদের একের পর এক ঘটনায় বিব্রত আওয়ামী লীগ। সাহেদ-পাপিয়া এবং সর্বশেষ লোপার ঘটনায় আওয়ামী লীগের মধ্যে তোলপাড় চলছে। এই ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগে তোলপাড় হতো না যদি না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সমস্ত দুর্বৃত্ত-প্রতারকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ছবি না দেখা যেত।  দেখা যাচ্ছে প্রতারক সাহেদ, প্রতারক পাপিয়া বা লোপা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন, ছবি তুলেছেন, তারা মুজিব কোট পরেছেন।  এই সমস্ত ছবিগুলো নিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা হচ্ছে এবং এই সমস্ত নেতৃবৃন্দ সমালোচিত হচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে যে, এই নেতৃবৃন্দ এদের সঙ্গে ছবি তুললেন কিভাবে? নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে এদের সখ্যতাই বা কিভাবে গড়ে উঠলো? অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, যে কেউ একজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে এবং নেতারাও তখন এই ধরণের ছবি তোলার ব্যাপারে তাঁদের সম্মতি দেন এবং তাঁরা ছবি তোলেন। কিন্তু প্রতারকরা এসব ছবি ব্যবহার করেন তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে এবং অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে প্রতারকরা এই সমস্ত ছবিগুলো তাদের অফিসের দেয়ালে এবং ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতাবান হিসেবে জাহির করতে চেষ্টা করেন। তারা প্রমাণ করতে চান যে সরকারের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে এবং এগুলো ব্যবহার করে তারা মানুষদের ঠকান, ভয়ভীতি দেখান, নিয়োগ-বাণিজ্যসহ নানারকম অপকর্ম করে থাকেন। এই কারণেই আওয়ামী লীগ এখন শীর্ষ নেতাদের এধরনের ছবি তোলার ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন যে, যার তার সাথে কেন আওয়ামী লীগের নেতারা ছবি তোলেন। এ নিয়ে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এরপরই কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় নেতারা যেন কেউ কারও পরিচয় না জেনে না তোলে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা দুটি কৌশল অবলম্বন করে।

প্রথমত; তারা বিভিন্ন নেতার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে, তাদেরকে নানা রকম উপঢৌকন দিয়ে বা তাদের বশ্যতা স্বীকার করে, তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়। ঘনিষ্ঠ হয়ে তারা নিজেদেরকে আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচয় দেয়। এই পরিচয় দিয়ে তারা বিভিন্ন বড় বড় নেতার অফিসে বা বাসায় যায় এবং সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরির চেষ্টা করে। এই সখ্যতা দেখিয়ে তারা বিভিন্ন মহলে দেন দরবার তদ্বির করে এবং অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে।

দ্বিতীয়ত; এই সমস্ত অনুপ্রবেশকারীরা তাদের বিভিন্ন রকম অপকর্ম করার জন্য আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে। মুজিব কোর্ট পরাসহ নানারকম বেশ ধারণ করে। আওয়ামী লীগের নামে বিভিন্ন ভুইফোড় সংগঠন খুলে তারা প্রতারণার জাল বিস্তার করে।

এই দুই ধরণের প্রতারনার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় নেতাদেরকে। এই সমস্ত সেলফি এবং ছবির মাধ্যমে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে নেতাদের সঙ্গে তাদের গভীর সখ্যতা রয়েছে।

অবশ্য আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করেন যে, এই সব ছবি তোলার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। একজন ব্যক্তির পরিচয় না জেনেই তার সাথে কেন ছবি তোলা হয় সে প্রশ্ন এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে। তবে কোন কোন নেতা বলছেন, একজন রাজনৈতিক নেতার মূল কাজ হল জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থাকা। জনগণকে নিয়ে উঠাবসা করা। কে প্রতারক কে ভালো মানুষ এটা চেনার কোন সহজ তরিকা নেই বা কারো গায়ে লেখাও থাকে না যে তিনি প্রতারক তিনি ভালো লোক। সেজন্য একজন কর্মী বা একজন ব্যক্তি যদি এসে ছবি তোলতে চান, তাহলে পরে তাকে না করাটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারপন্থী। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, যে সমস্ত প্রতারকদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ এবার এই ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করেছে। একজন ব্যক্তির পরিচয় সম্বন্ধে সুনিশ্চিত না হয়ে তার সঙ্গে ছবি তোলার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। শুধু ছবি তোলা নয় গণভবন বা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যারা আমন্ত্রিত হন তাদের তালিকা পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে এবং নিশ্চিত পরিচয় না জেনে কাউকে এই ধরণের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যাতে ডাকা না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ