শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়বিজ্ঞান ও গণপূর্তের তিন বিল সংসদে পাস

বিজ্ঞান ও গণপূর্তের তিন বিল সংসদে পাস

একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের তৃতীয় দিনে তিনটি বিল পাশ হয়েছে। এরমধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দুটি বিল রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সীমিত সংখ্যক জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ‘নিয়ম রক্ষার’ অধিবেশনে এসব বিলে চূড়ান্ত অনুমোদন এসেছে। ৮ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয় অধিবেশনের কার্যক্রম।

অধিবেশনের শুরুতেই গাজীপুরের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও আবাসনের জন্য পরিকল্পনা নিতে ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-২০২০’ সংসদে পাশের জন্য উত্থাপন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। বিলটির ওপরে সংসদে বিরোধী দল ও বিএনপি’র সংসদ সদস্যরা নানান ধরণের সংশোধনী নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময়, সমালোচনাকারীদের অনেকেই বিলটি ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে নিজেদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। একপর্যায়ে, বিলটি পাশ না করে এটি নিয়ে বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জনমত যাচাইয়ের পরামর্শ দেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। দীর্ঘ সময় আলোচনার পরে, বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করার পর, উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের কণ্ঠভোটে বিলটি পাশ হয়।
উল্লেখ্য, গেলো ১৮ ফেব্রুয়ারি বিলটি সংসদে তোলা হয়। বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও পাঠানো হয় রীতিমাফিক। মূলত চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো করেই গাজীপুরের জন্য আলাদা এ আইন করা হচ্ছে।
একজন চেয়ারম্যান, চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য, গাজীপুর জেলা প্রশাসক, বুয়েটের নগর অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান, গণপূর্ত, ভূমি, পরিবেশ এবং বিমান মন্ত্রণালয়ের একজন করে উপসচিবসহ মোট ২০ জনকে নিয়ে এই কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে।
এছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা, গাজীপুরের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, সরকার মনোনীত ওই এলাকার একজন নারীসহ তিনজন বিশিষ্ট নাগরিক এবং গাজীপুর শিল্প ও বণিক সমিতির একজন প্রতিনিধি এবং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব থাকবেন এই কর্তৃপক্ষে।
মনোনিতরা তিন বছর মেয়াদে এই কর্তৃপক্ষের সদস্য হবেন। চেয়ারম্যান ও সার্বক্ষণিক চারজন সদস্যকে সরকার তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেবে। নতুন করে প্রণয়ন করা এই বিলে ‘পরিকল্পনার বাইরে কেউ জমি ব্যবহার করলে ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে’।
বিলটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, ‘বিলটি আইন হিসেবে প্রণীত হলে কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত এলাকায় একটি আধুনিক নগরী প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ওই অঞ্চলের সুপরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
জাতীয় প্রয়োজনে প্রকৌশল বিজ্ঞানের প্রায়োগিক ক্ষেত্রসহ সব ধরনের অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, মালামালের নকশা প্রণয়ন, উৎপাদন-রক্ষণাবেক্ষণ ও গুণগত মান নির্ধারণে প্রকৌশল গবেষণায় নতুন আইন করতে সংসদে ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল বিল-২০২০’ বিল পাস হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে সংসদে চলমান অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। পরে কণ্ঠ ভোটে তা পাস হয়। এর আগে বিলটির ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। উল্লেখ্য, গেল ১৫ জানুয়ারি বিলটি সংসদে তোলার পর সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
নতুন এই বিল অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হবে। এই কাউন্সিলের কাজের মধ্যে রয়েছে জাতীয় প্রয়োজন অনুযায়ী প্রকৌশল বিজ্ঞানের প্রায়োগিক ক্ষেত্র যেমন পূর্ত, যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিকসহ সকল প্রকার অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, মালামালের নকশা প্রণয়ন, উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও গুণগত মান নির্ধারণ করা। কাউন্সিল পরিচালনায় থাকবে একটি গভর্নিং বডি। যার চেয়ারম্যান নিয়োগ করবে সরকার। এছাড়া একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে, পদাধিকার বলে যার চেয়ারম্যান হবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী।
বিলটিতে বলা হয়েছে, কাউন্সিল তার কাজের স্বার্থে সর্বোচ্চ ৬ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল থাকবে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, পেশাজীবী, শিল্প উদ্যোক্তা বা শিক্ষাবিদের সমন্বয়ে প্যানেল গঠিত হবে।
বিলটি পাশের গুরুত্ব তুলে ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল বিল আইন হিসেবে প্রবর্তিত হলে টেকসই জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণু প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিদ্যার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া প্রযুক্তি ও প্রকৌশল গবেষণার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদেরকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে সহায়ক হবে নতুন এই আইন।
এছাড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস বিল-২০২০ উত্থাপিত হলে, সেটিও কণ্ঠভোটে পাশ হয় সংসদে। পরে, বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত চলমান অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ