শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......করোনা ভ্যাকসিনকে পুঁজি করে শত কোটি ডলার পকেটে ভরছেন করপোরেট নির্বাহীরা!

করোনা ভ্যাকসিনকে পুঁজি করে শত কোটি ডলার পকেটে ভরছেন করপোরেট নির্বাহীরা!

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এই ভাইরাসের তাণ্ডবে দিশেহারা বিশ্বের ২১৩টি দেশ। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকার।  ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও ব্রাজিলও পরিণত হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞে।  এখনও পর্যন্ত কার্যকরী কোনও প্রতিধেষক আবিষ্কার সম্ভব না হওয়ায় বিশ্বব্যাপী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই ভাইরাস। এমন পরিস্থিতিতে একটি সফল ও কার্যকরী ভ্যাকসিনের অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।  কিন্তু এরই মধ্যে করোনার ভ্যাকসিনকে পুঁজি করে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়ে গেছে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল।

২৬ জুন হঠাৎ করেই সাউথ সান ফ্রান্সিসকোর প্রতিষ্ঠান ভাক্সার্ট ঘোষণা দিল-তারা করোনাভাইরাসের যে টিকা নিয়ে কাজ করছে সেটি যুক্তরাষ্ট্র সরকার অপারেশন র্যাপ স্পিডের (কেন্দ্রীয় সরকারের করোনার টিকার দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প) জন্য নির্বাচিত করেছে। ব্যস, এরপরই বাড়তে শুরু করে ভাক্সার্টের শেয়ারের দাম। কয়েক দিনের ব্যবধানে শেয়ারের দাম বাড়ল ছয় গুণ।  কোম্পানি সুরক্ষা ফান্ডে তাৎক্ষনিক মুনাফা হিসেবে জমা হলো ২০ কোটি ডলার!

করোনার টিকা উন্নয়নে এই মুহর্তে বিশ্বে প্রতিযোগিতায় আছে শতাধিক প্রতিষ্ঠান। করোনায় পর্যদুস্ত হয়ে মরিয়া বিশ্ববাসীর কাছে কোটি কোটি কিংবা শত শত কোটি ডোজ টিকা বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জনের জন্য ইতোমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী বাজী ধরে রেখেছেন। ফার্মাসিউটিক্যালস ও মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ও বোর্ড সদস্যরা টিকা উন্নয়নের এই গতিকে পুঁজি করছেন। ইতিবাচক উন্নয়ন ঘোষণা করে কোটি কোটি ডলার কামিয়ে নিচ্ছেন তারা। এর মধ্যে আবার তারা কাজে লাগাচ্ছেন সরকারের সহযোগিতাকে।

তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইকুইলারের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, অন্তত ১১টি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের ঘোষণা দিয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান, যাদের ভাগ্য প্রায়ই ঝুলে থাকে একটি ওষুধের সফলতা ও ব্যর্থতার ওপর। গত মার্চ থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি কামিয়ে নিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোম্পানির পরিচালক ও শীর্ষ কর্মকর্তারা শেয়ার নিয়মিত কেনাবেচা করে মুনাফা কামিয়েছেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে শেয়ারের দাম যখন আকাশচুম্বি হয়ে ওঠে তখন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা দ্রুত তাদের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে নগদ অর্থ কামিয়ে নিয়েছেন।

ফেব্রুয়ারিতে নিউ ইয়র্কের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান রিজিনিরন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসের সঙ্গে যৌথভাবে করোনার টিকা উন্নয়নের ঘোষণা দেয়। এর পরপর রিজিনরনের শেয়ারের দাম প্রায় ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ওই সময় থেকে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ নির্বাহী ও বোর্ড সদস্যরা প্রায় ৭০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী লিওনার্দ স্কিলিফার মে মাসের একদিনেই বিক্রি করেছেন ১৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারের শেয়ার।

ক্যামব্রিজভিত্তিক আরেক টিকা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান মর্ডানা বিশ্বের করোনার টিকা উন্নয়নে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে আছে তার মধ্যে অন্যতম। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রার পর এ পর্যন্ত কোনো টিকাই বাজারে আনতে পারেনি। গত জানুয়ারিতে মর্ডানা করোনার টিকা নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দেয়। এরপরই এর শেয়ারের দাম বেড়ে যায় তিন গুণের বেশি। শেয়ার বিবেচনায় এখন প্রতিষ্ঠানটির দাম তিন হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারিতে করোনার টিকা উন্নয়নের ঘোষণার পর এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা ২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের শেয়ার বিক্রি করেছেন। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ন্যুবার আফিইয়ান ২১ মে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডলারের বেশি শেয়ার বিক্রি করেছেন।

ম্যারিল্যান্ডের গাইথার্সবার্গের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নোভাভাক্স চলতি বছরের প্রথম থেকে করোনার টিকা উন্নয়নে কাজ শুরু করে। এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ছিল ২৪ ডলারের নিচে। শরতে নোভাভাক্স করোনার টিকার প্রাথমিক সাফল্য ঘোষণা করে এবং জানায় তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ১৬০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম রকেটের গতিতে বেড়েছে। ২৪ ডলারের শেয়ারের দাম ১৩০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। কাগজপত্রে এখন প্রতিষ্ঠানটির অন্তত চার জন নির্বাহীর শেয়ারের দাম ১০ কোটি ডলারের বেশি। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, আউটলাইন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ