বৃহস্পতিবার, মে ২৩, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে পাইলিন, নিহত ৫

ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে পাইলিন, নিহত ৫

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

ভারতের  উড়িষ্যার উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ২০০ মাইল বেগের ঝড়ো হাওয়া নিয়ে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় পাইলিন। ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে উড়িষ্যার গোপালপুরের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড়টি। উপকূল পার হতে এর এক ঘণ্টার মতো সময় লাগবে।পাইলিনের প্রভাবে শুরু হয়েছে প্রবল ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি।  শনিবার বিকেল থেকেই শুরু হয় এ বৃষ্টি। প্রাথমিকভাবে পাঁচজন জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এ পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকা থেকে সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছেড়েছে।  রয়টার্সের খবরে আবহাওয়া ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা জানান, ঘূর্ণিঝড় পাইলিনের আঘাতে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উড়িষ্যা ও অন্ধ প্রদেশের এক কোটি ২০ লাখ মানুষ। পাইলিন আঘাত হানার আগে রাজ্য দুটিতে শুরু হয়েছে দমকা হাওয়া। বাতাসের বেগে গ্রামগুলোর বেশির ভাগ নারকেলগাছ ভেঙে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, গাছের নিচে চাপা পড়ে দুজনের প্রাণহানি হয়েছে। কাঁচা ঘরের দেয়াল ভেঙে আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশের মানুষ আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। ভীত শিশুকে কোলে নিয়ে মা ছুটছেন আশ্রয়ের সন্ধানে। শহর ছেড়েও পালিয়েছে অনেকে। অনেকে মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। উপকূলে কাঁচা ঘরে বসবাসকারী কৃষক ও জেলেদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

 জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শশীধর রেড্ডি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে ভারতে এবার সবচেয়ে বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের হিসাবে চার লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছেড়েছে। নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন তারা। তারা চেষ্টা করছেন যাতে প্রাণহানি কম হয়।

 পাইলিন রাতের যেকোনো সময় ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যায় আঘাত হানতে পারে বলে জানা গেছে। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় পাইলিন আজ উড়িষ্যার দিকে ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসছে। এ কারণে সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে।

 এদিকে আজ ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবরে বলা হয়, উড়িষ্যায় অতিরিক্ত গাছ কেটে ফেলার কারণে প্রাকৃতিকভাবে ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধ করার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। ওই অঞ্চলে সরকারিভাবে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, যা ওই অঞ্চলের জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি।

খবরে বলা হয়, উড়িষ্যার জাতাধারি নদীর দুই কিলোমিটারের মধ্যের গ্রামটিতে একসময় প্রচুর পরিমাণে ঝাউজাতীয় ক্যাসুরিনা ও কাজুবাদামের গাছ ছিল। সেগুলো এখন কেটে ফেলা হয়েছে। ক্যাসুরিনাগাছ ঝোপ আকারের হয় এবং এই গাছ ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। যেকোনো ধরনের ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় এই গাছ প্রাকৃতিক শক্তি হিসেবে কাজ করে।

 নোলিয়াসাসি গ্রামের বাসিন্দা মহাদেব বলেন, ‘নির্বিচারে গাছ কেটে এই এলাকা উজাড় করার জন্য প্রশাসন দায়ী। আজ যেকোনো মুহূর্তে আমাদের গ্রামে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে। এই ভয়ে গত কয়েক দিন আমরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।’

এ ছাড়া পাশের পোলাঙ্গা ও গাদাকুজাং গ্রামেও ঘূর্ণিঝড় পাইলিন আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে বলা হয়েছে। দুই বছর আগে ওই এলাকায় পোসকো স্টিল প্লান্ট স্থাপনের সময় সরকারিভাবে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়।

এর আগে ১৯৯৯ সালে ওডিশায় একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। এতে কুজাং ও ইরসামা গ্রামে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। উড়িষ্যার নওগাঁ অঞ্চলের বাসিন্দা পবিত্র বলেন, ‘যখন এই অঞ্চলে গাছপালা ছিল, তখন অনেক শান্তিতে ছিলাম। ক্যাসুরিনাগাছসহ অন্যান্য গাছপালা ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের মোকাবিলা করেছে। এ কারণেই ১৯৯৯ সালের পর এখানে আর বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়নি। এখন গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। এখন আমাদের কে রক্ষা করবে?’ সূত্র: রয়টার্স, টাইমস অব টাইমস।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ