শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়ঋন বিতরণে কোনো অভিযোগ পেলে দায়ী ব্যাংক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

ঋন বিতরণে কোনো অভিযোগ পেলে দায়ী ব্যাংক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় প্রণোদনা সুবিধার আওতায় কৃষকদের অনুকূলে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্যাকেজের ঋণ বিতরণে অনিহার কারণে গত সপ্তাহে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরপরেও এই প্যাকেজের আওতায় চলতি মূলধন এবং শস্য ও ফসল খাতে কৃষিঋণ বিতরণ করছে না ব্যাংকগুলো। তবে কৃষি খাতে তুলে ধরতে এই ঋন বিতরণে কোনরূপ অনীহা বা শৈথিল্য প্রদর্শন করার সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে দায়ী ব্যাংক বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি মাসের ১ তারিখে মোট ৪৩ টি ব্যাংকে এ ধরনের একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবেলায় প্রণোদনা সুবিধার আওতায় কৃষকের অনুকূলে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে বর্ণিত খাতসমূহ চলতি মূলধন এবং শস্য ও ফসল খাতে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে কৃষিঋণ বিতরণে কোনরূপ অনীহা প্রদর্শন এবং অসহযোগিতা করা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। উল্লেখ, এ ধরনের জাতীয় সংকটকালে সরকারের পাশাপাশি ব্যাংকই সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া কৃষি খাতে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল বরাদ্দ’সহ সুদ ভর্তুকি প্রদানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপরন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতি-সহায়তা প্রদানের পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে।

এমতাবস্থায় স্বচ্ছতা ও হয়রানিমুক্ত ভাবে প্রণোদনা সুবিধার আওতায় ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম থেকে চলতি মূলধন এবং শস্য ও ফসল খাতে কত কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগে প্রদান করার পরামর্শ দেওয়া হলো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক অশোক কুমার দে অর্থসূচককে বলেন, ব্যাংকগুলোর মাঝে কৃষিঋণ বিতরণে অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ কারণেই সতর্কতামূলক এই চিঠি। এই প্যাকেজের আওতায় বিতরণকৃত ঋণের তথ্য রাখার জন্য কৃষিঋণ বিভাগে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতি সপ্তাহে ঋণ পরিস্থিতির আপডেট রাখবে। প্রতিটি ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন এবং কৃষি ঋণ বিতরণ কার্যক্রম মনিটরিং করবে। এতে কোন ব্যাংকের অনীহা বা অসহযোগিতা দেখা দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর এ অনীহার কারণে দুই দফায় নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে সার্কুলার জারি করে জুলাইয়ের মধ্যে বেশিরভাগ এবং আগস্টের মধ্যে প্যাকেজের পুরো টাকা বিতরণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে আগেই লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। গভর্নর ফজলে কবির অনলাইনে বৈঠকে করে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ঋণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে ঋণ বিতরণের অগ্রগতি জানতে তদারকি বাড়ানোর অংশ হিসেবে প্রতি ১৫ দিন পর পর তথ্য জানাতে নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে মাসিকভিত্তিতে জানানোর নির্দেশনা ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর এক কর্মকর্তা জানান, কৃষি ছাড়া অন্যান্য খাত গুলোতে মহামারী কালীন সময়ে ও ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিল সরবরাহ করা হলেও এই খাতে ঋণ দিতে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলো। কারণ কৃষিখাতের ইন দিলে ব্যাংক মালিকরা মানিলন্ডারিং করতে পারেনা। ম্যানেজাররা ঘুষ খেতে পারে না। তাছাড়া এ খাতে ঋণ বিতরণ করলে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার। ৪ শতাংশ গ্রাহকের কাছ থেকে নিলে ব্যাংকের খরচ হবে মাত্র ১ শতাংশ। সুতরাং অন্যান্য খাতের ঋণের চেয়ে তহবিলের এই ঋণ বিতরণের মুনাফা অনেক বেশি। কিন্তু তার পরেও অনীহা লক্ষণীয়। যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ