শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনচট্টগ্রামে করোনার ভয়াবহ বিস্তার ।। নির্ধারিত ১২ হাসপাতাল গায়েব

চট্টগ্রামে করোনার ভয়াবহ বিস্তার ।। নির্ধারিত ১২ হাসপাতাল গায়েব

স্বাস্থ্য বিভাগ চট্টগ্রামের পার্কভিউ, ইম্পেরিয়াল, সিএসসিআর, ম্যাক্স, মেট্রোপলিটন,ডেল্টা, ন্যশনাল, মেডিক্যাল সেন্টার, রয়েল, সার্জিস্কোপ-২, সিএসটিসি, এশিয়ান হাসপাতালসহ মোট ১২ বেসরকারি হাসপাতাল কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের নির্দিষ্ট সংখ্যক সিসিইউ ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ ক্লিনিক/ হাসপাতাল মালিক প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। করোনা প্রাদুর্ভাব দ্রুত সামাল দিতে সরকারি হাসপাতালের বাইরে ক্রমান্বয়ে এসব হাসপাতালের ইউনিট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য সরকারি তরফে করোনা চিকিৎসা সরন্জামসহ বিপুল আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজও যুক্ত ছিল। বিভিন্ন মিডিয়ায় খবরটি গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হলে নগর ও বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষ নতুন ভরসার আলো পায়।
কিন্তু ক্ষমতাধর অদৃশ্য শক্তির চাপে সিদ্ধান্তটি ফাইলেই আটকে আছে এখনো। আন্দরকিল্লা সরকারি জেনারেল হাসপাতাল কভিড-১৯ চিকিৎসা কাজে অনেক বিলম্বে ব্যবহার শুরু হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের বৃহত্তম সরকারি চমেক হাসপাতালেও ১০০ বেডের করোনা ইউনিট চালু হয়।
এদিকে ফৌজদার হাটে নাভানার খালি জমিতে নতুন ফিল্ড হাসপাতাল গড়েছেন, প্রবাস ফেরত ডা,বিদ্যুৎ বড়ুয়া। এটার বিরুদ্ধে একজন মৃত্যু পথযাত্রী মুক্তিযোদ্ধা রোগীকে রাত তিনটায় বাসায় ফেরত পাঠানোসহ কিছু বিতর্ক উঠেছে। জোর করে ফেরত পাঠানোর দু’ঘন্টার মাঝেই রোগী মারা যান বলে অভিযোগ পরিবারের।
এরমাঝে চট্টগ্রামের বহু রোগি এমনকী চিকিৎসকও প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। মারা গেছেন পুলিশ সদস্যসহ অনেক করোনা যোদ্ধা। সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে দেশের বৃহত্তম কর্পোরেট গ্রুপ এস আলম এর অন্যতম পরিচালক মোর্শেদুল আলম চৌধুরীর মৃত্যু পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসা ঘাটতি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। পূর্ণাঙ্গ আউসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটরের অভাবে মোর্শেদ সাহেবকে ভাইয়ের ভেন্টিলেটর ভাগাভাগি করতে হয়। এর চে’ দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে! অথচ এস আলম গ্রুপ ম্যাক্সসহ চট্টগ্রামে বেশ কটি উন্নত বেসরকারি হাসপাতাল গড়ার মোটা মূলধন যুগিয়েছে। মাত্র ১০ টি ভেন্টিলেটর নিয়ে চৌকস করোনা লড়াকু টিম ছাড়াই জেনারেল হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা চলছে। এর বাইরে চমেক হাসপাতালের নতুন ১০০ বেডেও করোনা রোগীর চাপ সামলানো সম্ভব হচ্ছেনা। ফিল্ড হাসপাতালটি পুরোই দান ও স্বেচ্ছাসেবী নির্ভর হওয়ায় সীমাবদ্ধতা ও পেশাদারিত্বের ঘাটতি থাকছেই। ব্যাপক ঢাকঢোল পিটানো হলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল। এর বাইরে ফৌজদার হাট BITID তে করোনা পরিক্ষা ছাড়াও ৩০ বেডের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা সেবা চলছে। পরিত্যক্ত হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে সিটি মেয়রের উদ্যোগে ১০ বেডের হাসপাতাল উদ্ভোধন হলেও চিকিৎসা সেবায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা পেতে অনেক দেরি আছে।
কিন্তু করেনা মহামারি এখন সব আশঙ্কাকে ছাড়িয়ে পুরো চট্টগ্রামকে গ্রাস করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে সংক্রমণের হার যেভাবে বাড়ছে, সীমিত আসনের সরকারি হাসপাতালে রোগী সামাল দেয়া অসম্ভব। তাছাড়া নেই পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সুবিধার পর্যাপ্ত বেড। ভেন্টিলেটর স্বল্পতাতোও আছেই। এ’ অবস্থায় আরো ভয়ঙ্কর অঘটন চট্টগ্রামে ঘটে যেতে পারে। এমনকী হাসপাতালে সিট না পেয়ে রাস্তা-ঘাটেও করোনায় মানুষ মারা যেতে পারে। যা কল্পনা করতেও গায়ে কাঁটা দেয়!
বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো এখন সাধারণ সর্দিকাশির রোগীও ভর্তি করছেনা। ফলে বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় সাধারণ রোগেও মারা যাচ্ছেন। অথচ সাধারণ অবস্থায় এগুলো নানা অজুহাতে লাখ লাখ টাকা বাড়তি হাতিয়ে নেয় রোগীর পকেট থেকে। সবসময় জমজমাট ব্যবসা চলে। মাছহাটার মত রোগীর ভীড়তো থাকেই। এসব হাসপাতালে ঈদ বোনাস বা কর্মিদের বেতন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। ম্যাক্স, ডেল্টা, ন্যাশনাল হাসপাতালের কর্মিরা বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করে। যার জের এখনো চলছে। তাহলে কার জন্য, কেনইবা এসব হাসপাতাল? আর চট্টগ্রামের বাপ মা দাবিদার বড় বড় নেতারা কই! কেন চরম দুঃসময়ে তারা মানুষের পাশে নেই!
অভিযোগ উঠেছে, সিলেট ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ও পার্ক ভিউ হাসপাতালের এম ডি, ডা, রেজাউল ও ম্যাক্সের এম ডি, ডা, লিয়াকতকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট প্রভাব খাটিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সিদ্ধান্ত আটকে দিয়েছে। নেপথ্য সহযোগিতা দিচ্ছে সরকারি দলের কতিপয় প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতা। তারা সিটি মেয়রকে ভুল বুঝিয়ে বাতিল হলি ক্রিসেন্টকে জোড়াতালির করোনা হাসপাতাল খোলার উদ্যোগ নিয়েছে তাঁর মাধ্যমে। এখন জোড়াতালির উদ্যোগ নেয়ার সময় নয়, চট্টগ্রামকে বাঁচাতে দ্রুত নির্ধারিত ১২ হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু সময়ের দাবি। সবগুলো হাসপাতালে দক্ষ চিকিৎসক, জনবল এবং অবকাঠামো সুবিধা রয়েছে। সরকারি তরফে আর্থিক প্রণোদনাসহ সব ধরনের “লজিস্টিক সাপোর্ট”তো থাকছেই। আশা করি কভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহতা ঠেকাতে শিগগিরই সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। ১২ হাসপাতালে আরো ২০০+ করোনা বেড চালু হলে আপাতত চিকিৎসা সেবা থেকে কোন রোগী বঞ্চিত হবেননা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ