নিজাম চৌধুরী, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট। একজন রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক এবং টেলিভিশন টকশো ব্যাক্তিত্ব। সম্প্রতি তিনি করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ব্যাপক ত্রান বিতরন কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এসব বিষয় এবং বাংলাদেশসহ বিশ্ব করোনা পরিস্হিতি নিয়ে কথা বলেছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সরকারের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নিজাম চৌধুরী বলেন, নিউইয়র্ক যাকে সারা পৃথিবীর অর্থনৈতিক ক্যাপিটাল বলে হয়ে থাকে , যেখানে কোন কিছুরই কোন অভাব ছিলনা, কিন্ত এ মহামারি মোকাবিলা করার সকল প্রকার প্রয়োজনীয় উপকরনের কিন্ত অনেক অভাব ছিল। আমরা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয়ান দেশ গুলেকে প্রথম বিশ্ব বা ফাষ্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি বলে থাকি, আপনি যদি ২১ শে মে পর্যন্ত ডাটা পর্যালোচনা করলে দেখবেন তারা কিন্ত বেশীর ভাগ দেশই এ বিশ্ব মহামারী মোকাবেলায় তাদের নিজেদের সাফল্যে, তারা নিজেরাও শতভাগ হেপি নয় । ব্যাতিক্রম শুধু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দৃষ্টিতে তিনি কোন কিছুতেই ব্যার্থতা স্বীকার করতে রাজি নন।
যাহোক যদি বাংলাদেশের আংগিকে বলি তাহলে ১৮ কোটি মানুষের বিশাল জনসংখ্যার এ ছোট্ট দেশটিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে করোনা সংকট মোকাবিলা করেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন সেটা একটি মডেল হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। ইতিমধ্যেই আমেরিকাসহ প্রথম বিশ্বের অনেকগুলো দেশ আমাদের নেত্রীর ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। বিভিন্ন দেশের আক্রান্ত, মৃত ও
ভাল হয়ে যাওয়ার সংখ্যাগুলি প্রতিনিয়ত আমরা সবাই মিডিয়ার মাধ্যমে দেখছি বিধায় তা এখানে উল্লেখ করলাম না।
তবে একটা বিষয় এখানে উল্লেখ করলে পাঠকরা বুঝতে পারবেন, যেখানে প্রতিদিন দেশে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর হার দুই হাজারেরও বেশী সেখানে এ যাবত সরকারী-বেসরকারীসহ যত প্রকার হিসাবই আপনি করুন না কেন বাংলাদেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা এখনও এক হাজার অতিক্রম করে নাই বিগত দুই মাসেরও বেশী সময়ে। আমি মনে করি ১৮ কোটি মানুষের এ দেশে এটা একটা বিরাট সাফল্য।
তবে আমাদেরকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এখন এবং করোনা পরবর্তী জীবন যাপন প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হওয়া, সর্বদা মাস্ক পরিধান করা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন থাকার কোন বিকল্প নেই ।
করোনায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জনগনের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তা করেছে নিজাম চৌধুরী। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বিগত দুই মাস যাবত তার এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০টি পরিবারের মাঝে দুই দফায় খাদ্য ও ইফতার সামগ্রী বিতরন করেছেন যার মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা হলো ১০৪০ জন।
তিনি বলেন, আমি এ সহযোগীতা কার্যক্রমের কোন প্রকার প্রচার চান নাই বিধায় এত দিন শুধু মাত্র আমার ছোট বোন যিনি গ্রামের বাড়ীতে থাকেন এবং সহযোগীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে ত্রান দেয়া মার্চের শুরু থেকেই শুরু করে, এখনও চলমান আছে । পরিস্থিতি স্্ভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এটি চলমান থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মে মাসের ১৮ তারিখ কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড এর পক্ষ থেকে ১নং সিন্দুরপুর ইউনিয়নের বেশী ক্ষতিগ্রস্ত ২০০ পরিবারের মাঝে পরিবার প্রতি ২০০০ দুই হাজার টাকা করে নগদ অর্থ বিতরন করা হয় আমার পক্ষ থেকে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর নবী, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ফেনী শাখার ম্যানেজার ও কমর্কতারা বিতরন কাজে সহযোগিতা করেছেন । এখানেও মোট উপকার ভোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০০ জন।
১৯ শে মে আমাদের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমাদের নির্বাচনী এলাকার আমার উপজেলা দাগনভুইয়াতে উপজেলা কমপ্লেক্স এ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ফেনী জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন আমার
পক্ষ থেকে ১৫০ জন ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে পরিবার প্রতি ২০০০ দুই হাজার টাকা করে বিতরন করেন।এখানে ও উপকার ভোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০০ জন।
২০ শে মে আমাদের আরেকটি উপজেলা সোনাগাজীতেও ৩০০ টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন
আমার পক্ষ থেকে নগদ টাকা বিতরন করেন। এখানেও উপকার ভোগীর সংখ্যা প্রায় ১২০০ জন।
নিজাম চৌধুরী আরো বলেন, মোট ৭ বারের ত্রান কার্যক্রমে সর্বমোট ৪৪৪০ জন লোক উপকৃত হয়েছে। প্রথমদিকে পুরো ত্রান কার্যক্রমটি পুরোপুরি
গোপনে করার ইচ্ছা ছিল। কিন্ত পরবর্তীতে কিছু সংখ্যক শুভাাকাঙ্ক্ষীর অনুরোধ এবং পরামর্শক্রমে আমি এটা প্রকাশ করলাম শুধুমাত্র অন্যদের অনুপ্রানীত করার জন্য। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঘনিষ্ট বন্ধু জসিম উদ্দিন হলের আমাদের সময়কার জি,এস মোস্তফা কামাল বর্তমানে একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি সে আমার অনুপ্রেরনা পেয়ে তার এলাকা বান্চারামপুরে গিয়ে বড় ধরনের ত্রান বিতরন করে এসে আমার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের ধনী লোক বলতে যাদেরকে
বুঝায় তাদের তালিকায় আমার মত লোকের কোন স্হান নেই। যদি আমাদের এ সামান্য ত্রান বিতরনের সংবাদ দেখে ধনী ভাইয়েরা অনুপ্রানিত হলেই আমি ধন্য হবো। সুসংংবা হলো বাংলাদেশের অনেক ধনবান ব্যাক্তিরা ইতিমধ্যে অনেকে ত্রান বিতরন করেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন।
প্রবাসী এই উদ্দোক্তা আরো বলে, আমার আত্মতৃপ্তি একটি জায়গায়, সেটা হলো আমাদের যার যার আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী এই চরম বিপদের দিনে মানুষের সামান্যতম উপকারেও যদি আসতে পারি তাহলে এর চাইতে চরম ও পরম আনন্দের বিষয় আর কি হতে পারে ?
নিজাম চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এখন দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অসহায়-কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দেশের এমন ক্রান্ত্রিলগ্নে এলাকার মানুষের পাশে থাকতে পারাটা সৌভাগ্যের। আমি বরাবরে ন্যায় এলকার জনগণের সাথে তাদের যে কোন প্রয়োজনে ছিলাম, আছি ও ভবিষ্যতে থাকবো।
মানবিক ও সামাজিক দায়বোধ থেকে আমি বছরব্যাপি তাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করে আস। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নিজাম চৌধুরী ।
ভিন্ন এক প্রশ্নের জবাবে নিজাম চৌধুরী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার নামে একটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়াতে এ যাবত ১৫০০ জব সৃ্ষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি । যার উপকারভোগী আজ বাংলাদেশের শত শত পরিবার। প্রতি পরিবারে ৪ জন করে হিসাব করলে এখানেও ৬০০০ ছয়
হাজার লোকের উন্নত জীবন যাপন করার
সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিলে বিগত ৬ বছর যাবত অন্যান্য ব্যাংকগুলোর সাথে আমরাও যে পরিমান অনুদান দিয়েছি, সেগুলোর উপকারভোগী সারা বাংলাদেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠি। করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠিকে সহযোগীতা করার জন্যও আমরা মাননীয় প্রা্রধানমন্ত্রীর ত্রান
তহবিলে সর্বাগ্রে অনুদান দিয়েছি।
তিনি বলেন, এভাবে যদি আপনি দেখেন-আমরা পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠা করেছি সেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের মাধ্যমে দেশের বাসা বাড়ী কল কারখানা চলছে। ঐ সকল প্রতিষ্ঠানে কাজ করে শত শত পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।
দেখুন আমার মত একজন সাধারন মানুষ বিগত দীর্ঘ ২৮ বছর আমেরিকা থাকার পর বিগত দশ বছরে বাংলাদেশে এসে যে সকল প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেছি সেগুলোর মাধ্যমে আমার চাইতেও দেশের জনগন, শিক্ষিত বেকার যুবক যারা চাকুরী করছে তারা এবং তাদের পরিবার অনেক বেশী লাভবান হচ্ছে।
আমরা আর ক’দিন বেচে থাকবো কিন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তো যুগ যুগ ধরে
থাকবে ইনশাআল্লাহ, এবং এগুলোর মাধ্যমে জনগন সবসময় উপকার পেতে থাকবে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।
আর এক প্রশ্নের উত্তরে নিজাম চৌধরী বলেন, ব্যাংক, বীমা , পাওয়ার প্ল্যান্ট এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন ব্যাক্তি গত মালিকানা হয়না।হয়ত ব্যাক্তিরা এগুলো প্রতিষ্ঠা করে পরে এগুলো জনগনের তথা প্রজাতন্ত্রের সম্পত্বিতে পরিনত হয়।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রতিষ্ঠাতা
নিজের জীবন বাজী রেখে সকল প্রকার বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে, অনেক কষ্ট করে প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেন, এমনও হয় যে জীবদ্দশায় হয়তোবা এর সুফল তিনি/তারা ভোগ করে যেতে পারেন না।
করোনা ভাইরাসের প্রসঙ্গে নিজাম চৌধুরী বলেন, আজকের মহামারিতে এই পরিবর্তিত বিশ্ব থেকে আমরা কে কখন যে চলে যাবো সেটা একমাত্র আল্লাই ভাল জানেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের এ চরম সন্ধিক্ষনে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা সবাই সবার জন্য দোয়া করি, বিশেষ করে আমার অত্যন্ত কাছের আমেরিকা প্রবাসী বাঙালি, সারা বিশ্বের সকল প্রবাসী বাঙ্গালী, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষসহ বিশ্ব মানবতাকে মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়ে বিশ্বকে পুনরায় শান্তিতে ভরিয়ে দেবেন এই আশাবাদ ব্যাক্ত করে সবাইকে ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি “ঈদ মোবারক”।।
উল্লেখ্য জনাব নিজাম চৌধুরী শারীরিক অসুস্থতার কারণে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন । আর করোনার কারণে তিনি বর্তমান সেখানে আটকা পড়েছেন তাই তার এলাকার ত্রাণ কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।