রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......গ্রেনেড বিস্ফোরণ : হারুন ইজহার হাটহাজারী শ্বশুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার

গ্রেনেড বিস্ফোরণ : হারুন ইজহার হাটহাজারী শ্বশুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

নগরীর লালখান বাজার মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান (একাংশ), মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি ইজহারুল ইসলামের ছেলে মুফতি হারুনকে এক দেহরক্ষীসহ গতকাল বুধবার ভোর রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দেহরক্ষী জুনায়েদ নামের এ যুবকের বাড়ি বাঁশখালিতে। আদালতে নেয়ার পর পুলিশ সাতদিন করে রিমান্ডের আবেদন করলে হারুন, ইজহারকে দুটি মামলায় পাঁচ দিন করে দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
এছাড়া তাঁর দেহরক্ষী জুনায়েদকে বিস্ফোরক আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন একই আদালত। একই মামলায় ওই মাদ্রাসা  থেকে  গ্রেপ্তার হওয়া আরও পাঁচজনকে তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সৈয়দ মাশফিকুল ইসলাম বুধবার এ রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন।  নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) এস এম নূরুল হুদা বলেন, ‘মুফতি হারুনের দশদিন ও তার  দেহরক্ষীর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। বাকিদের তিনদিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। তাদের সবার সাতদিনের রিমান্ড চেয়েছিল পুলিশ।’
তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পাঁচজন হল : মাদ্রাসার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক তফসির আহমেদ (৫০), হেফজখানা শিক্ষা (আরবি) বিভাগের শিক্ষক মো. এছহাক (৩৩), হাদিস বিভাগের মাধ্যমিক শাখার শিক্ষক আব্দুল মান্নান (২৬) এবং কিতাব বিভাগ  শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান (২৪) ও  বোর্ডিং সুপার মনির হোসেন (৫৫)। এর আগে বুধবার দুপুর আড়াইটায় মুফতি হারুন ও জুনায়েদকে আদালতে হাজির করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় রিমান্ড আবেদনের উপর শুনানি শুরু হয়ে  সোয়া ৪টায় তা শেষ হয়। পাঁচলাইশ জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানান, হাটহাজারী উপজেলার ইছাপুর গ্রামের জান আলি চৌধুরী বাড়ি (শ্বশুর বাড়ি) থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই বাড়িতে তারা আত্নগোপনে ছিলেন।
গোপন সংবাদ পেয়ে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম মহিউদ্দিন সেলিম ও খুলশী থানার পরিদর্শক ময়নুল হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত ৬৫ জনের একটি দল রাত একটা থেকে  অভিযান শুরু করে। রাত তিনটার সময় দেহরক্ষী জুনায়েদসহ মুফতি হারুন বিন ইজহারকে গ্রেপ্তার করা হয়। লালখান বাজার মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ ও এসিড উদ্ধারের ঘটনায় দুটি মামলায় তিনি আসামি। আটকের পর দু’জনকে  ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় রাখা হয়।
সহকারী পুলিশ কমিশনার জানান, ‘আগে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুলিশ কমিশনার মহোদয় জানাবেন।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,  সোমবার  গ্রেনেড বানাতে গিয়ে মাদ্রাসার  যে কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটে তার পাশের কক্ষেই ছিল মুফতি হারুন ইজহারের কার্যালয়। বিস্ফোরণের পরপর তিনি পালিয়ে যান।
মুফতি ইজহারুল ইসলামও ওইদিন সন্ধ্যায় আত্মগোপনে চলে যান। পিতা-পুত্র পালিয়ে  যেতে সক্ষম হওয়ায় চাপে পড়ে পুলিশ। এরপর মঙ্গলবার মুফতি হারুনকে গ্রেপ্তার অভিযান নামে পুলিশ। কৌশলে হারুন ইজহারের অবস্থান নিশ্চিত করে গভীর রাতে ইছাপুরের জানা আলি-চৌধুরীর বাড়িতে অভিযান চালায়। সোমবার (৭  সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে নগরীর লালখান বাজারে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলাম পরিচালিত জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজন ছাত্র আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’ছাত্র মারা যায়।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ল্যাপটপ চার্জার  থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করে। তবে পুলিশ ওই কক্ষ তল্লাশী করে চারটি তাজা  গ্রেনেড এবং বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। রাতে মুফতি ইজহারের বাসায় তল্লাশী করে ১৮  বোতল পিকরিক এসিড পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে নগরীর খুলশী থানায় বিস্ফোরক ও এসিড আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে। দু’টি মামলাতেই মুফতি ইজহার ও ছেলে হারুনকে আসামি করা হয়।
মারা গেছে আরো একছাত্র : মুফতি ইজহারুল ইসলামের মাদ্রাসায় গ্রেনেড বানাতে গিয়ে আহত আরও এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম জোবায়ের আহমেদ (২৪)। বুধবার  ভোর ৬টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জোবায়ের মারা যান। তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার গোলগাঁ সরকার বাড়ি গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক পংকজ বড়ুয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লালখান বাজার মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় এ নিয়ে দু’জন নিহত হলো।
সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে নগরীর লালখান বাজারে  হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলাম পরিচালিত জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজন ছাত্র আহত হয়। এর মধ্যে চার ছাত্রকে  গোপনে চিকিৎসা নেয়ার সময় আটক করে পুলিশ। নগরীর হালিশহরে একটি ক্লিনিক থেকে আটক করা হয় সালমান ও হাবিব নামে দু’জনকে। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর সোমবার গভীর রাতে হাবিব মারা যায়।
এছাড়া, জোবায়ের এবং নূরনবী নামে দু’জনকে আটক করা হয় পাঁচলাইশ থানার কাতালগঞ্জ এলাকায় সার্জিস্কোপ ক্লিনিক থেকে। এদের মধ্যে  জোবায়ের বুধবার সকালে মারা গেছে। আহত নূরন্নবীকে গুরুতর অবস্থায়  সোমবার রাতে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। মারা যাওয়া হাবিব এবং  জোবায়ের উভয়ই লালখান বাজার মাদ্রাসার ইসলামী আইন অনুষদের ফতোয়া বিভাগের ছাত্র ছিলেন। আহত সালমানও একই বিভাগের ছাত্র। আহত নূরনবী চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তিনি একটি  বেসরকারি  কোম্পানিতে প্রায় এক বছর কর্মরত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ