বলিউড তারকারা বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় তাদের অভিনয় মেধা আর সৌন্দর্য দিয়ে। পর্দায় যা কিছু তারা ফুটিয়ে তোলেন, অনেক ক্ষেত্রে তাদের জীবনে এর অনেক কিছুর ছিটেফোটাও পাওয়া যায় না। যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে…
নানা রকম প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা মানুষেরা বলিউডে এসে তারকা হয়ে উঠেছেন। কেউ কেউ আছেন উচ্চ শিক্ষিত, কেউবা কলেজের গন্ডি পেরুতেই পড়ালেখাকে বিদায় জানিয়েছেন। এখন দেখা যাক, বলিউড তারকাদের পড়ালেখায় কার দৌড় কতদূর?
অমিতাভ বচ্চন
তাকে বলা হয় বলিউড শাহেনশাহ। উপাধিটা শুধু অভিনয়ের জন্য হলেও শিক্ষাদীক্ষার বেলায়ও মানানসই। বাবা বিখ্যাত ভারতীয় কবি হরিবংশ রাই বচ্চনের ছেলে অমিতাভ বচ্চন। পড়ালেখাও তাই করেছেন পুরোদমেই।
কলা বিভাগে গ্রাজুয়েশন ভারতের উত্তর প্রদেশের নৈনিতালের শেরউড কলেজে। পরবর্তীতে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কিরোরি মল কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। সেই ষাটের দশকে অমিতাভ যা অর্জন করেছেন নতুন শতকের অনেকে অতদূর হাটেননি।
শাহরুখ খান
অভিনয় খ্যাতির মত পড়ালেখায়ও অমিতাভের কাছাকাছি শাহরুখ খান। দিল্লীর হ্যান্সরাজ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি নিয়েছেন শাহরুখ। পরবর্তীতে নয়াদিল্লীর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া কলেজে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হন। তবে অভিনয়ে ব্যস্ততার জন্য আর সে ডিগ্রি সম্পন্ন করা হয়নি।
সালমান খান
বিয়ে না করার খাতিরে এখনো ব্যাচেলরই আছেন সালমান খান। তবে নিদারুণ সত্যি হচ্ছে, এই ব্যাচেলর ডিগ্রিটা পড়ালেখায় নেয়াই হয়নি সল্লু বাবার। কে জানে এ জন্যই ব্যাচেলরই আছেন কিনা! চাউর আছে মুম্বাইয়ের বান্দ্রার ন্যাশনাল কলেজ থেকে ড্রপ আউট ছাত্র আজকের সল্লু বাবা।
সালমান পড়াশোনা শুরু করেছেন গোয়ালিয়রের স্কিডয়া স্কুল দিয়ে। পরে মুম্বাই, বান্দ্রার সেন্ট স্টেনিসলাস হাইস্কুলে পড়েছেন। সালমানের পরিবার শোবিজ জগতের। বাবা সেলিম খান একজন প্রখ্যাত অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকার। তাই ছোটবেলাতেই ধারণা করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত অভিনেতাই হবেন সালমান। হয়েছেনও তাই। পড়াশোনার প্রতি মনোযোগটা তেমন ছিল না। ‘বিশাল দেহীর মাথা থাকে না’ কথাটা বোধহয় সালমানকে দিয়ে খানিকটা হলেও সত্যি হয়েছে।
আমির খান
তাকে বলা হয় মিস্টার পারফেকশনিস্ট। আসলে কী সব জায়গায় পারফেকশন ঠিক আছে? আমির খান মুম্বাইয়ের নার্সী মঞ্জি কলেজ থেকে ১২ তম স্টান্ডার্ড শেষ করেছেন। ক্লাসে ছিলেন নিয়মিতভাবে অনুপস্থিত। থ্রি ইডিয়টসের এ করা চরিত্রের মতোই অন্যকাজেই ব্যস্ত ছিলেন বেশি। তবে ছবির শেষে যেমন বিজ্ঞানী হয়েছেন তার কাছাকাছিও যাওয়া হয়নি তার। পড়ালেখার চৌকাঠ না মাড়িয়ে মনোযোগ দিয়েছেন অভিনয়ে। সালমানের মত আমিরের পরিবারও বলিউডের সাথে আগ থেকেই জড়িত। তার বাবা তাহির হুসেইন ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক। তার চাচা নাসির হুসেইন ও প্রযোজক এবং অভিনেতা।
অক্ষয় কুমার
খিলাড়িও পড়ালেখা বিশেষ করেননি। মুম্বাইয়ের কিংস সার্কেলে ডন বসকো হাইস্কুল এবং গুরু নানক খালসা কলেজে পড়েছেন কিছুদিন। কিন্তু মনোযোগ সবসময় ছিল খেলাধূলায়। কলেজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ব্যাংককে মার্শাল আর্ট শিখতে চলে গেছেন। করেছেন নানান জায়গায় চাকরী। বাংলাদেশে হোটেল পূর্বাণীতেও কাজ করেছেন আশির দশকে।
সাঈফ আলী খান
বনেদী পরিবারের সন্তান, পড়ালেখাটাও তাই ভালোই করেছেন ছোট নবাব। সানাওয়ারে লরেন্স স্কুল এর পর যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ারে লকার্স পার্ক স্কুল। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত পাবলিক স্কুল উইনচেস্টার কলেজেও ছিলেন গর্বিত ছাত্র।
ঋত্বিক রোশান
গ্রাজুয়েশন কমার্সে সিডেনহাম কলেজ, মুম্বাই থেকে। এর আগে বোম্বাই স্কটিশ স্কুলে। সবসময় চেয়েছেন মুভিস্টার হতে। তাই পড়ালেখা নিয়ে উচ্চাশা ছিল না।
জন আব্রাহাম
শিক্ষিতদের একজন। বিশালদেহী এই নায়কের সালমানের সাথে পার্থক্যটা এ জায়গায়। প্রথমে বোম্বাই স্কটিশ স্কুল। পরে জয়হিন্দ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন। এমইটি (মুম্বাই এডুকেশনাল ট্রাস্ট) থেকে এমবিএ ডিগ্রি।
ইমরান হাশমী
সিডেনহাম কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন। অবশ্য খুবই নরমাল কলেজ লাইফ। কিসার হিসেবে পরিচিত এই নায়ক পড়েছেন মুম্বাই ইউনিভার্সিটিতেও। তবে শেষ করতে পারেননি।
রণবীর কাপুর
বোম্বাই স্কটিশ স্কুল দিয়ে শুরু। গ্রাজুয়েশন করেছেন মুম্বাই এইচ আর কলেজ থেকে। নিউইয়র্কের লি স্ট্রাসবার্গ থিয়েটার এন্ড ফিল্ম ইনস্টিটিউটে অ্যাক্টিং মেথডে কোর্স করেছেন । কারিনা ছাড়া কাপুর বংশের একমাত্র সদস্য যিনি কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা নিয়েছেন।
নায়িকা মানেই প্রাণোচ্ছল কলেজ পড়ূয়া তরুণী – এই দৃশ্যটা বলিউডি ছবির কমন ব্যাপার।
কিন্তু পর্দায় কলেজ প্রাঙ্গনে রোমান্টিক প্রেমে মজে থাকলেও বাস্তব জীবনে এদের অনেকে কলেজ পর্যায়েও যাননি। ব্যতিক্রম ও কম নেই অবশ্য।
ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন
জয়হিন্দ কলেজে পড়েছেন এক বছর । উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন মাতুঙ্গার রুপারেল কলেজ থেকে। উচ্চমাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষায় গড় নাম্বার পেয়েছেন ৯০! কিন্তু যার অভিনেত্রী হওয়ার কপাল তার এ সাফল্য বোধহয় অতি তুচ্ছ!
জয়হিন্দ কলেজে পড়াবস্থায় কলেজের ইংরেজির শিক্ষক যিনি আবার শখের ফটোগ্রাফার, ঐশ্বরিয়ার কয়েকটি ছবি তুলেছিলেন এক ফ্যাশন ম্যাগাজিনের জন্য। সে ছবি চোখে পড়ে এক বিজ্ঞাপনি সংস্থার। তার পরই টিভি কমার্শিয়ালের ডাক।
পড়ালেখার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে পড়াশোনা ঐশ্বরিয়ার মডেলিংয়ের পথ খুলে দিয়েছে।
পরে এই মডেলিংয়ের জন্যই পড়ালেখা আর খুব বেশি দূর করেননি। একসময় রাহেজা কলেজে স্থাপত্য পড়ার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। তবে ততদিনে মডেলিংটাই হয়ে গেছে ধ্যানজ্ঞান।
কারিনা কাপুর
দেরাদুনের ওয়েলহাম গার্লস স্কুলে থাকাকালীন ভালো ছাত্রী বলেই পরিচিতি ছিল। ফার্ষ্ট ক্লাস পেয়েছেন সব কোর্সেই। শুধুই গণিত ছাড়া। তবে ক্যারিয়ার অংকে একদম খারাপ করেননি। অভিনয় ক্যারিয়ারে ভালোই জমিয়েছেন।
মুম্বাইয়ের মিথিবাই কলেজে দুই বছর বাণিজ্য বিষয়ে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হার্বার্ড ইউনিভার্সিটিতে তিন মাসের মাইক্রোকম্পিউটার বিষয়ে গ্রীস্মকালীন কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। এছাড়া মুম্বাইয়ের আইন কলেজেও পড়েছেন এক বছর। এরপরই অভিনয় আর অভিনয়…।
প্রীতি জিনতা
মেধা সৌন্দর্যের মিশ্রণ বলা যায় তাকে। যত মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছেন, অভিনয়ে তার অর্ধেক মনোযোগও ছিল বলে মনে হয় না।শিমলার সেন্ট বেদ’স কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। তারপর মনোবিজ্ঞান বিষয়েও গ্রাজুয়েশন। আর মাষ্টার্স করেছেন অপরাধ মনোবিজ্ঞানে।
দিপীকা পাড়ূকোন
সোপিয়া হাইস্কুল, ব্যাঙ্গালোর। মাউন্ট কার্মেল কলেজ, ব্যাঙ্গালোর। কিন্তু মডেলিং আর অভিনয়ের জন্য পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছেন। একসময় ইন্ধিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটিতে সমাজবিজ্ঞানের ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য ভর্তি হলেও শেষ করতে পারেননি। হাইস্কুল লেভেল থেকেই জাতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। পরে আর ইচ্ছে হয়নি।
প্রিয়াংকা চোপড়া
লক্ষৌর লা মার্টিনিয়ের গার্লস স্কুলে পড়েছেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রে নিউটন নর্থ হাইস্কুল। এরপর জন এফ কেনেডি হাই স্কুল।
ভারতে ফিরে উত্তর প্রদেশের ব্যরিলির আর্মি স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন। এরপর জয়হিন্দ কলেজ। ইচ্ছে ছিল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা অপরাধ মনোবিজ্ঞানী হবেন। কিন্তু মিস ওয়ার্ল্ড জেতায় আর এগোনো হয়নি।
সোনম কাপুর
আরিয়া বিদ্যা মন্দির স্কুল। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজ অব সাউথ এশিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষা কোর্সে পড়েছেন কিছুদিন। মুম্বাই ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে অনার্স করেছেন। সিঙ্গাপুরে দুই বছর থিয়েটার এবং আর্টস বিষয় নিয়েও পড়েছেন।
ক্যাটরিনা কাইফ
বাবা ভারতীয় মা ইংরেজ। জন্ম হংকংয়ে। অলপ বয়সে বাবা মায়ের বিচ্ছেদ। মা এনজিওতে কাজ করতেন। মায়ের সাথে চীন,জাপান, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, পোলান্ড, জার্মানী, বেলজিয়াম, হাওয়াইতে ঘুরেছেন সারা বছর ধরে। পড়ালেখার জন্য স্থির সময় পাননি কোথাও। তবে শেষের দিকে লন্ডনে কিছুদিন ছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন স্থাপত্য পড়তে। কিন্তু ভালো লাগেনি বলে পড়ালেখা ছেড়ে ভারতে পাড়ি দিয়েছেন অভিনয়ের জন্যে।
কাজল :
পড়ালেখা তেমন করেননি কাজল। ছোট থাকাবস্থায় বাবা মায়ের ছাড়াছাড়ি। বড় হয়েছেন নানীর কাছে। পঞ্চগনির সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে পড়েছিলেন। এ নিয়ে কাজলের আক্ষেপ। মেধাবী ছিলেন। প্রচুর বই পড়তেন।
বিদ্যা বালান
বলিউড অভিনেত্রীদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত দুইজন। একজন বিদ্যা অন্যজন সোনাক্ষী।
বিদ্যা বালান সেন্ট জেভিয়ার কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন সমাজবিজ্ঞানে। আর ইউনিভার্সিটি অব মুম্বাই থেকে সম্পন্ন করেছেন মাষ্টার্স ডিগ্রি।
সোনাক্ষী সিনহা
অভিনয়ের মানুষ, ফ্যাশন বিষয়ে জানাশোনা থাকাটা খুব দরকারী। সোনাক্ষী সিনহা একমাত্র অভিনেত্রী যার এ বিষয়ে শুধু ব্যবহারিক না, প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান আছে। এসএনডিটি ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেছেন এই দাবাং কন্যা।