বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
প্রচ্ছদপ্রবাসী সময়কেমন কাটছে নিউইয়র্কের হোম কোয়ারেন্টিন : এম এ লতিফ

কেমন কাটছে নিউইয়র্কের হোম কোয়ারেন্টিন : এম এ লতিফ

করোনায় কাঁপছে পৃথিবী। এর আঘাতে পুরো লন্ড ভন্ড পূর্ব থেকে পশ্চিম।একের পর এক মৃত্যুর মিছিল। এ বিপদ মুহূর্তে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত গোটা দুনিয়া বেশ অসহায় হয়ে পড়েছে। সবার মুখেই শোনা যাচ্ছে, প্রার্থনার কথা। আল্লাহর নাম নেওয়ার কথা। সৃষ্টিকর্তার সাহায্য কামনার কথা। মানুষ আল্লাহমুখী হচ্ছে। এটি বিপদের একটি বড় ইতিবাচক অর্জন। নাস্তিক, ধর্মনিরপক্ষেতার বিষবাষ্প কিছুটা হলেও স্থিমিত হয়ে যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে নাস্তিকতা ছিল একটি ফ্যাশন। ধর্মহীনতা ছিল এক ধরনের স্মার্টনেস। ভাইরাসের বিপদ নামার পর দুনিয়াজুড়ে লোকজন ধর্মমুখী হচ্ছে। নাস্তিকতার তুফান দুর্বল হয়ে আসছে। সারা পৃথিবীতে চলছে 144 ধারা ,যারা পরাশক্তি মনে করতো সে সকল শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো মহান পৃথিবীর মালিক আল্লাহর নিকট সারেন্ডার করল।পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন যা প্রায় বিরল হয়ে গিয়েছিল, ইদানীং তা বিপদের কারণে অনেকটা আগের জায়গায় ফিরে এসেছে। পড়া বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েরা যেমন ঘরে, ঠিক তেমনি বাইরে অল্প সময় দিয়ে মা-বাবাও দ্রুত ঘরে ফেরায় তাদের পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা, একসাথে খাওয়া-দাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ মা-বাবা, ভাইবোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর খবর নিতে পারতো না। এখন জরুরি অবস্থায় সবাই একে-অপরকে যেভাবে পারে যোগাযোগের মধ্যে রাখছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের জীবনাচার শেয়ার করতো, এখন তারা বাস্তব জগতে বসবাস করছে।

প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আজ এ লেখা তৈরী পর্যন্ত আমেরিকায় প্রায় এক লাখ চল্লিশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে , শুধু নিউইয়র্কে প্রায় ষাট হাজার। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় সাতশ। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে।
আঠারই মার্চ থেকে চাকরি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হোল, Email এ জানতে পারলাম যা হতাশার মাঝে একঝলক আনন্দের হাসি। আজ প্রায় তের দিন গৃহবন্দি বা হোম কোয়ারেন্টিন। সারাদিন বিভিন্ন কার্যক্রম, আড্ডা, মৌমাছির মতো ঘুরে বেড়ানো যার অভ্যাস, হঠাৎ গৃহবন্দি সত্যি কষ্টদায়ক!
টেনশনে রাতে ঘুম হয়না – সকালে ঘুম ভাঙেনা।
এরই মধ্যে নিজস্ব একটি দৈনন্দিন রূটিন দাড় করালাম।
মসজিদ বন্ধ, এক জুমার নামাজ পড়ার সুযোগ হয়েছিল তারপর থেকে জুমা পড়ার সুযোগ হয়নি।মনটা খুব বেশি খারাপ। ঘরে বসে পরিবারের সবাই মিলে জামায়াতে নামাজ পড়ার চেষ্টা করি, কোরআনের তাফসীরসহ বিভিন্ন বই পড়ার বিরল সুযোগ গ্রহণ করলাম। অপরদিকে বড়মেয়ে সায়মা অনলাইনে হোমওয়ার্ক করে । ছোট ছেলে আইয়ান টিভিতে কার্টুন নিয়ে ব্যস্ত, মাঝে মধ্যে smart boy বলে তৈল মালিশ করলে নামাজে এসে দাঁড়ায়। পড়ালেখার কথা বললে বিভিন্ন বাহানা!
আর হোমমিনিষ্টার তিনবেলা খানার যোগান দিচ্ছে আর আমি নিজেকে মেহমান মনে করে ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ত সময় পার করছি। ঘুমানো, অধ্যয়ন,খবর দেখা, ওয়াজ শুনা, দেশ বিদেশে ফোনে যোগাযোগ রক্ষা করা নিত্যদিনের কাজ। সরকারের লকডাউন যেন আমার জন্য সোফাডাউন হয়ে গেল।
প্রায় নিউইয়র্কের চট্টগ্রাম সমিতির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কথা হয় শ্রদ্ধেয় আজম ভাই, মাকছুদ ভাই এর মাধ্যমে বিভিন্ন খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করি।অপরদিকে আমেরিকান বাংলাদেশ সোসাইটি অব বাফেলোর প্রেসিডেন্ট হাসেম ভাই, সেক্রেটারি তানভীর ভাই, আকতার ভাই, মিজান ভাই,মুন্না ভাই,আজমল ভাই, আনোয়ার ভাই, মাহবুব ভাই , তসলিম ভাই, কাসেম ভাই, মাসুমবিল্লাহ , করিম ভাই, এডভোকেট শহিদুল্লাহ, ইউছুপ ভাই,মুছা ভাই সহ বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে করোনা উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করার জন্য সাংগঠনিক আলোচনা করে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি।
শীতের আমেজ ভেঙে এখন বসন্ত। গাছে গাছে ফুলের কলি, নানা রঙের সাজে সজ্জিত প্রকৃতি।
আজ রৌদ্রজ্জল সকাল। মুখে মাক্স ও হাতে গ্লাবস পরে গাড়ীটা নিয়ে বের হলাম প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে। আহ! কি প্রশান্তি। দীর্ঘদিন পর বাসার বন্দিজীবন থেকে মুক্ত।
পরিশেষে, দেশের যে পরিস্থিতি জানিনা কার ডাক কখন আসে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে কে কখন চলে যাই, জানিনা ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ হবে কিনা, আমার কথা ও কাজে চলার পথে কেই যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে নিজগুণে ক্ষমা করে দিবেন এই আমার প্রত্যাশা। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, বাসায় নিরাপদে থাকুন। নিরন্তর শুভেচ্ছা।
আল্লাহ্ সকলকে হেফাজত করুন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ