শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদটপঅসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগে বিমানের কেবিন ক্রু রাহাকে ভাওয়াল রিসোর্ট থেকে গ্রেফতার...

অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগে বিমানের কেবিন ক্রু রাহাকে ভাওয়াল রিসোর্ট থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগে বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু মেহনাজ তাবাস্মুম রাহাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গভীর রাতে তার কক্ষ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে লন্ডন প্রবাসী সাদ বিন মুরাদ (৪০) নামে এক ব্যবসায়ীকেও। ১১ ফেব্র“য়ারী গভীর রাতে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ভাওয়াল রিসোর্টের ৩০৭ নম্বর স্যুট থেকে এই দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত বিমানের কেবিন ক্রু রাহা

পুলিশের এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে দুই আসামী স্বামী-স্ত্রী না হওয়ার পরও ভাওয়াল রিসোর্টের একই কক্ষে রাত্রি যাপন করেন। বিশ্বস্ত সুত্রে খবর পেয়ে পুলিশ রাত ২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকা অবস্থায় দেখেন।

পুলিশের জবাবে তারা একেক সময় একেক নাম ঠিকানা এবং একই কক্ষে থাকার বিষয়ে কোন ধরনের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। একারণে রাতেই দুজনকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রেফতারের পর দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

আদালতে দেয়া পুলিশের ফরোয়াডিং

এই ঘটনার ১৮ দিন পার হয়ে গেলেও বিমানের পক্ষ থেকে রাহার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিমানের প্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। তবে অভিযোগ প্রমানিত হলে চাকরীচ্যুতসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

পুলিশ জানায় গ্রেফতারকৃত আসামী মেহনাজ তাবাস্মুম রাহা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু হিসাবে কর্মরত আছেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাহা স্বীকার করেছেন, সাদ বিন মুরাদকে নিয়ে তিনি এর আগেও একাধিকবার এই রিসোর্টে এসেছেন। শুধু মুরাদই নয়, বিত্তশালী, সোনা চোরাকারবারি, হুন্ডি ব্যবসায়ীকে নিয়ে তিনি এই রিসোটসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তারকা হোটেলগুলোতে রাত যাপন করতেন।

পুলিশ আরো জানায়, রাহা একজন বিবাহিত নারী। প্রায়শ তিনি ফ্লাইটের নাম করে এভাবে দেশে বিদেশে সমাজের বিত্তশালীদের নিয়ে বেপোরোয়া জীবন যাপন করে আসছেন। এই তালিকায় সমাজের অনেক প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গ ও রাজনৈতিক নেতাও আছেন বলে তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। পুলিশ এসব নামের তালিকা ধরে তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানাগেছে। তবে তালিকায় কাদের নাম রয়েছে সেসম্পর্কে তথ্য দিতে অস্বীকার করেছে থানা পুলিশ।

অভিযোগ আছে রাহার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া লন্ডন প্রবাসী মুরাদ বিন সাদ একজন প্রভাবশালী গোল্ড স্মাগলার। অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাহাসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বেশ কয়েকজন কেবিন ক্রুকে সঙ্গে নিয়ে টাকা পাচার, হুন্ডি ও সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

রাহাকে চোরাচালানের কেরিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতেন তিনি। জানাগেছে রাহাসহ সংশ্লিস্ট কেবিন ক্রুরা ফ্লাইট নিয়ে বিদেশ গেলে চোরাকারবারীরা সোনার চালান ধরিয়ে দিতেন। একইভাবে বিদেশে টাকা পাচারের ক্যারিয়ার হিসাবেও কাজ করেতন।

রাহার সঙ্গে উত্তরা এলাকায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী হুন্ডি ব্যবসায়ী ও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গেও ঘনিষ্টতা রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশ এসব হুন্ডি ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতার নাম- ঠিকানা খতিয়ে দেখছেন এবং রাহার মাধ্যমে বিদেশে কোন টাকা পাচার হয়েছে কিনা সেটা তদন্ত করবেন। সোনা চোরাচালানের বিষয়টিও তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জয়দেবপুর থানাধীন হোতাপাড়া পুলিশ স্টেশনের সাব ইন্সপেক্টর নাজমুল হুদা বলেন, গ্রেফতারের পর ভাওয়াল রিসোর্টের এইচআর ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত দুজনকে আলাদা আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমান অনুযায়ী প্রমানিত হয়েছে তারা দুজন অসামাজিক কর্মকান্ড করার জন্য রিসোর্টের এই রুমটি ভাড়া নিয়েছিলেন। রাহার সঙ্গে আর কারা কারা এই রিসোর্টে আসতেন, এবং রাহা ও মুরাদ সোনা চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন কিনা এ সম্পর্কে তিনি কোন তথ্য দিতে অস্বীকার করেন।জানাগেছে বর্তমানে রাহা জামিনে আছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ