শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপপাপিয়াদের পাপাচারে দেশের রাজনীতি সমাজ আজ কলুষিত

পাপিয়াদের পাপাচারে দেশের রাজনীতি সমাজ আজ কলুষিত

পাপিয়াদের পাপাচারে দেশের রাজনীতি সমাজ আজ কলুষিত। যুব মহিলা লীগের তৈরি পাপিয়াদের সীমাহীন লোভ অর্থবিত্ত ক্ষমতার মোহে যে বেআইনি অপরাধের বীভৎস ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে তার ঝড় যেন থামছে না। হতবাক দেশবাসী। ব্যথিত ক্ষুব্ধ বিস্মিত সমাজের নানা পেশার মানুষই নয় আওয়ামী লীগের লাখো লাখো নেতাকর্মী সমর্থক। এঁদের বিশাল অংশের কোনো চাওয়া পাওয়ার জন্য নয়, গভীর আবেগ প্রেম শ্রদ্ধা ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনার সাথে তাদের হৃদয় বাধা। তাঁদের ভালোবাসতে গিয়ে এই কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে। বঙ্গবন্ধু যেমন রাষ্ট্রের প্রাণ তেমনি শেখ হাসিনা আজ আওয়ামী লীগেরই প্রাণ নন, দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক আদর্শিক রাজনৈতিক দেশপ্রেমিক শক্তির বাতিঘর, শেষ ভরসার জায়গা। তিনিই আজকের আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র বা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার সফল প্রতীক।

পুরো দেশ আজ পাপিয়াজ্বরে ভুগছে। এই জ্বর করোনা ভাইরাসের চেয়েও ভয়ঙ্কর, মরণঘাতি। সবচেয়ে সরব এবং উৎকণ্ঠিত দলের ভেতরের শিক্ষিত, মার্জিত, সৎ, প্রতিশ্রুতিশীল দেশপ্রেমিক মানুষগুলো। পাপিয়ার এই অস্বাভাবিক উত্থানে সবাই একেবারে হতবাক। সবচেয়ে বেদনাহত এবং বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়েছেন মাননীয় নেত্রী, জননন্দিত নেত্রী, মানবতার বাতিঘর, মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা। নিজের জীবন, যৌবন, পরিবারকে বাজি রেখে নিজের সমস্ত সুখ আর স্বাচ্ছন্দ্যকে বিসর্জন দিয়ে রাত-দিন পরিশ্রমের মাধ্যমে চরম প্রতিকূলতা ও সংগ্রামের ভেতর দিয়ে স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে কেটে যে দলকে গুছিয়েছেন এইসব পাপিয়াদের পাপাচার তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। কিন্তু এতো বড় সংগঠন আমাদের প্রাণের সংগঠন এই পাপের দায় নেবে কেনো!

দীর্ঘদিন ধরে এই পাপিয়াদের দৌরাত্ম আর দম্ভের কাছে নিজের মান ইজ্জত, সম্মান বাঁচাতে দলের অনেক বড় বড় নেতৃবৃন্দও অসহায়ের মত নিশ্চুপ হয়ে থাকতেন। লাজ-লজ্জা আর চোখের পর্দা না থাকলে মানুষ যা খুশি তাই বলতে পারে, যা খুশি তাই করতেও পারে, ক্ষেত্র বিশেষ স্বার্থের দ্বন্দ্বে পাগলা কুকুরের চেয়েও তাঁরা ভয়ংকর। অসততা, অসভ্যতা আর নোংরামিই তাঁদের ক্ষমতা আর দম্ভের উৎস। মানুষ তাই নিজের ইজ্জত বাঁচাতে এই পাপিয়াদের থেকে যত দূরে থাকা যায় ততোটাই মঙ্গল বলে মনে করতেন। ভয়ে সমীহ করে চলতেন, পারলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেন।

আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী যদি ন্যাকারজনক, কলঙ্কিত এই ঘটনা উদঘাটন করতে না পারতেন তবে ভবিষ্যতে পাপিয়া যে কোনো কিছুর বিনিময়ে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কারণ পাপিয়াদের রাজনীতিতে আসার মূল উদ্দেশ্য জনসেবা নয় ক্ষমতার আড়ালে বাণিজ্য করে যেন তেন উপায়ে নিজেদের উদর পূর্তি করা, পয়সা কামানো। অবাধ তথ্য প্রবাহে ভার্চুয়াল জগতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অজানা আরও অনেক পাপিয়ার সুন্দর সুন্দর মুখশ্রী ভাইরাল হচ্ছে। স্বল্প সময়ে রাজনীতিকে ব্যাবহার করে অনৈতিকপন্থায় সম্পদের চূড়ায় উঠা, তাঁদের জীবনাচরণ বের হয়ে আসছে। একসময় প্রতিটি সেক্টরে পুরুষরা নারীদের অনৈতিক উপায়ে অসম্মানিত করতো, চরিত্র হনন করতো। তাঁদের চোখে নারী মানেই ভোগ্য বস্তু কেবলই পণ্য।

শোনা যায় বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতায় নারীরা গোপনে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও করে ক্ষমতাবান পুরুষদের চাকরের মতো ব্যবহার করে। পদ-পদবি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বদলি, ভর্তি, টেন্ডারবাজিতে এরা যা চায় তাই হয়। দেহের ক্ষুধা মিটানোর পরিবর্তে এরা কেবল দল নয় পুরো দেশটাও কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। আমাদের চারপাশের সম্মানিত, শ্রদ্ধেয় অনেক নেতা, সচিব, আমলা এবং সমাজের নাম করা ব্যক্তিবর্গ যাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও ধারণ করে এইসব নারীদের হাতে বন্দি, দীর্ঘদিন ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার ।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরলেন তখন অমানিশার অন্ধকার দেশজুড়ে। বাবা-মা ভাই, গোটা পরিবারের রক্তে ভেজা পবিত্র মাটি, ঘাতক খুনিদের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত স্বাধীন বাংলাদেশ। নিরাপত্তার অভাবে মাতৃ হৃদয়ের সাথে সমঝোতা করে দুই শিশু সন্তানকে বিদেশ ভুঁইয়ে রেখে সম্পূর্ণ একা। ছিপছিপে গায়ে টাঙ্গাইলের সূতি শাড়ি, হাতে দুগাছি চিকন সোনার চুড়ি, মাথার পেছনে দীঘল কালো লম্বা বিনুনি অথবা হাতখোঁপা। নিরাভরণ লম্বা মিষ্টি মুখটিতে প্রসাধনীর লেশমাত্র নেই। অথচ এখন পার্টি অফিসে গেলে ফেশানেবল শাড়ি, গহনা, চর্চিত মুখে পাউডার আর লিপিস্টিকের আধিক্যে অতীব সাধারণ আমাদের উপস্থিতি জানান দেওয়াই দায়। উৎকট সাঁজসজ্জায় কেবলই গ্লামারের ছড়াছড়ি, রূপের বাহার। অথচ এখন পার্টি অফিসে পোড়খাওয়া কর্মীদের প্রবেশেরই যেনো সুযোগ নেই, কদর নেই।

নতুন আসা বেশিরভাগ তরুণী আমাদের সন্তানের বয়সী। জেনারেশন গ্যাপে বেড়ে উঠা এদের ঠিক দোষ দেওয়া যায় না কারণ এরা যা দেখবে তাই শিখবে। আমরা যেমন মাতৃতুল্য বড় বোন আমাদের প্রিয় আপা, বুবু প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিখেছিলাম। কেবল নীতি আর আদর্শ নয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেত্রীর তাঁতের শাড়ি থেকে শুরু করে শুদ্ধ জীবনাচরণ এমন কি সাজসজ্জায় কেবল নেত্রীই আমার মত অনেকেরই আদর্শ আর অনুপ্রেরণা।

প্রিয় নেত্রীর কাঁধে সমস্ত দেশের দায়িত্ব, গুরুভার। তাঁর পক্ষে আগের মত সবদিক সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এখনকার তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষিত, মার্জিত, ভদ্র তারুণ্যের ধারায় উজ্জীবিত নীতি ও আদর্শবান অপেক্ষাকৃত তরুণ মডেল দরকার। তরুণ সৈয়দা জহুরা তাজউদ্দীন, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, আইভি রহমানের মতো নেত্রী প্রয়োজন। যাকে দেখে তরুণ প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবে, অনুপ্রাণিত হবে। যাতে করে শিক্ষিত, সভ্য, ভদ্র পরিবারের নারীরা দুশ্চরিত্রা নারীদের হাতে অপমান অপদস্তের ভয় নয় নিশ্চিন্তে রাজনীতিতে আসতে পারবেন। রাজনীতিতে শিক্ষিত নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে। দল এবং দেশ তখন সমৃদ্ধ আর সুন্দর হবে।

রাষ্ট্রনায়ক মানবততার জননী শেখ হাসিনা হাসলেই দেশ হাসে। তিনি নিরাপদ থাকলেই দেশ নিরাপদে ঘুমায়। বলা হয় যতক্ষণ শেখ হাসিনার হাতে দেশ, ততক্ষণ পথ হারাবে না বাংলাদেশ। দেশবাসীই নয়, বিশ্বনেতৃত্বও আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ক্যারিশমায় বাংলাদেশের সাফল্যের জয়গান করছেন। তাকে মানবতার জননী বলছে বিশ্ব। তার সাফল্যে আনন্দলাভ করেন কোটি ভক্ত আদর্শের অনুসারীরা। কিন্তু তিনি যখন তার জীবনকে বাজি রেখে একের পর এক সাফল্য অর্জন করে এগিয়ে যাচ্ছেন তখন দলের একটি অংশের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সমালোচনার ঝড় তাকে বিব্রত করে। তিনিও ব্যথিত ও মর্মাহত হন। মাঝখানে ছাত্রলীগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের একাংশের কর্মকাণ্ড তাকে ব্যথিত করেছে, বিব্রত করেছে। কর্মীদরদি শেখ হাসিনা কঠোর হয়েছেন, ব্যবস্থা নিয়েছেন। নেতৃত্ব হারিয়েছেন সেসব সংগঠনের বিতর্কিত নেতারা। সেই সব ঘটনা আড়াল হতেই যুব মহিলা লীগের পাপিয়াদের পাপের বিতর্কের ঝড় করোনা ভাইরাসের মতোন এসেছে।

যুব মহিলা লীগের পাপিয়ারা একদিনে তৈরি হয়নি। নেতৃত্বের হাত ধরে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে জড়িয়েছে। অপরাধের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা এইসব অভিশপ্তদের জন্য তার স্বপ্ননষ্ট হতে দেবেন না। কঠোর ব্যবস্হা পাপিয়াদের বিরুদ্ধে তার নির্দেশেই নেয়া হয়েছে। যুব মহিলা লীগ নেতৃত্ব ১৮ বছরে সংগঠনের নেতৃত্ব তৈরি করতে ব্যর্থ হলে ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতদের সামলাতে প্রশ্রয় দিতে কার্পণ্য করেনি। নজর রাখলে এতদূর একজন জেলা নেত্রীর আসার কথা নয়, সংগঠনেরও এতোটা বিতর্কিত হবার কথা ছিল না। হয়তো শেষ ভরসা শেখ হাসিনাই দলকে ক্লিন ইমেজের নতুন নেতৃত্বে সাজাবেন সকল বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যারা সততা দক্ষতার সাথে নেতৃত্বে সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন, যারা সংগঠনকে বাণিজ্যের ধারায় না টেনে আদর্শের ধারায় শক্তিশালী করবেন,তাদেরই তুলে আনবেন।

লেখকঃ খুজিস্তা নূর-ই–নাহারিন (মুন্নি), সম্পাদক, পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ