শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......পুলিশের নানা সংকটের মাঝেও কোতোয়ালী থানার ওসির কর্মকাণ্ড আশা জাগাচ্ছেন : সিএমপি...

পুলিশের নানা সংকটের মাঝেও কোতোয়ালী থানার ওসির কর্মকাণ্ড আশা জাগাচ্ছেন : সিএমপি কমিশনার

পুলিশের নানা সংকটের মাঝেও কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের কর্মকাণ্ড আশা জাগানিয়া বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান। একই সাথে সিএমপির সব ইউনিটে, সব থানায় কোতোয়ালীর মতো পরিবেশ তৈরি করতে চান বলেও জানান তিনি। ২৩ ডিসেম্বর দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানায় নবনির্মিত ‘সেবা ছাউনি ও অফিসার্স কর্নারের উদ্বোধনকালে এসব মন্তব্য করেন সিএমপি কমিশনার। প্রথমবারের মতো দেশের কোনো থানায় এ ধরনের সেবা ছাউনি তৈরি করেছে কোতোয়ালী থানা। পাশাপাশি একই অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করা হয় থানা থেকে উর্ধ্বতন পর্যায়ে ‘দৈনিক অপরাধ প্রতিবেদন’ পাঠানোর জন্য একটি ডিজিটাল অ্যাপসেরও।CMP-commissioners-want-all-police-stations-like-Kotwali

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের একজন সাব ইন্সপেক্টর কয়দিন রাতে বাসায় ঘুমাতে পারে? কয়দিন তার স্কুলে সন্তানকে নিয়ে যেতে পারে কিংবা সন্তানের কথা চিন্তা করতে পারে কি না, এটাও গবেষণার বিষয়! এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যেসব পুলিশ অফিসার নতুন উদ্যমে কাজ করে আমাদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছেন— তার মধ্যে একজন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন। এত ব্যস্ততার মধ্যেও মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য তার যে অভিপ্রায় সেটা প্রশংসনীয়।

তিনি আরও বলেন, কোতোয়ালী থানার দেওয়ালে দেওয়ালে জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে কথা আছে, তেমনি মানবিক পুলিশিংয়ের কথাও আছে। আমরা শুধু কঠোর ভূমিকা নেব আর মানুষের সঙ্গে মানবিক আচরণ করব না, সেটা যেন না হয়। এই কথাগুলো সবসময় বলতে চাই এবং সিএমপির সব ইউনিটে, সব থানায় কোতোয়ালীর মতো পরিবেশ তৈরি করতে চাই। মানুষ সহজে থানায় আসবে, তার সমস্যার কথা মন খুলে বলবে এবং পুলিশ দ্রুত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগটা নেবে।

মানুষকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতির কথা তুলে ধরে নগর পুলিশের এ অভিভাবক বলেন, মানুষকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যে কর্মকাণ্ড, সেখানে আমরা এখনো কাঙ্খিত লেভেলে পৌঁছাতে পারিনি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের কর্মকাণ্ড যেমন কঠোর, এদিকে থানায় আসা মানুষদের ওপর আমরা তেমন নরম এবং কোমল হতে পারি না। আমরা সেভাবে মনযোগ দিতে পারি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। আবার এই ব্যর্থতার জন্য আমাদের যুক্তিও আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের থানাগুলোতে সঠিক পরিবেশ নেই। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হলো জনবল। ঘটনা ঘটার পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশ পৌঁছাবে এটা যেমন জনগণের প্রত্যাশা, তেমনি আমাদেরও প্রত্যাশা থাকে, আমরা কত তাড়াতাড়ি পৌঁছাব। কিন্তু আমাদের যানবাহন নেই, সেজন্য দ্রুত পৌঁছতে পারি না সবসময়।

সামনে এগিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের অনেক ভুলত্রুটি আছে, অনেক অন্ধকারের দিক আছে। পিছনে যাওয়ার দিকগুলো অতিক্রম করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এই সমাজ শতভাগ অপরাধমুক্ত হবে, এটা কল্পনা করি না। তবে অপরাধের পর অপরাধী ধরা পড়বে, এটা যেন ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে হয়। চট্টগ্রাম শহরে এমন কোনো অপরাধ নেই যা আমরা উদঘাটন করতে পারিনি, দুয়েকটি ছাড়া। এক্ষেত্রে আমরা ৯৫ ভাগ সফল। একইভাবে মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণের ক্ষেত্রেও আমরা সফল হতে চাই।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আমরা যখন জনগণের ভূমিকায় থাকি, তখন আমাদের প্রত্যাশা থাকে পুলিশের কাছে কী চাই? আবার আমরা যখন এক্সিকিউটিভ চেয়ারে থাকি তখন আমরা চিন্তা করি জনগণের কাছে আমরা কী চাই? দুইটি বিষয় যখন সমার্থক হয়ে যায় তখন কাঙ্খিত ফল পাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠাগুলো থেকে আমরা কখনও কাঙ্খিত সেবা পাই না। শুধু পুলিশ নয়, সরকারি যেকোনো সংগঠন- সেটা ভূমি অফিস হতে পারে, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ বিভাগ হতে পারে- আমরা প্রত্যাশিত সেবা পাইনা।

মাহবুবর রহমান আরও বলেন, পুলিশের কাছ থেকে জনগণের সেবা না পাওয়াটা যেমন বাস্তবতা তেমনি পুলিশও জনগণের কাছ থেকে কাঙ্খিত সহযোগিতা পায় না। সেবার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু আমরা কর্তব্যে সবসময় অবিচল, সবসময় দায়িত্ববান। বাংলাদেশকে এ অবস্থানে আনার ক্ষেত্রে সরকারের যে উদ্যোগ সেটাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে পুলিশ।

সম্প্রতি কোতোয়ালী থানা ভবনকে ভিন্নরূপ এনে দিয়েছেন ওসি মোহাম্মদ মহসীন। যা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন আশপাশের এলাকার সাধারণ লোকজনও। থানা প্রাঙ্গণে নির্মাণ করা হয়েছে সেবা ছাউনি, যেখানে থানায় বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা লোকজন বসতে পারবেন এবং প্রাথমিক সেবা পাবেন। পুরনো ভবনের বিভিন্ন স্থানে সংস্কার করা হয়েছে। থানার চারপাশ পরিচ্ছন্ন করে বাগান করা হয়েছে। থানার ভেতর ও বাইরে দেওয়ালে লাগানো হয়েছে ৫৯টি শিল্পকর্ম। মনীষীদের বিভিন্ন উক্তি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে এই শিল্পকর্মে। এছাড়াও আছে জঙ্গিবাদ, মাদক, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেওয়াল লিখন। আধুনিকায়ন করা হয়েছে থানার দ্বিতীয় তলায় উপ পরিদর্শকদের কক্ষটিও।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইউসিবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহামেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ