তলে তলে বিরোধ থাকলেও বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ক্ষণিকের জন্য এক হলেন নগর বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা। গতকাল বৃহস্পতিবার নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন একসাথে অংশগ্রহণ করেন। তাদের সাথে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকারও। আলোচনা সভা শেষে তারা সেখান থেকে একসাথে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগর বিএনপির এই তিন শীর্ষ নেতা একসাথে একই গাড়িতে করে দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন থেকে রাঙ্গুনিয়ায় জিয়াউর রহমানের প্রথম মাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। একসাথে একই গাড়িতে করে তারা রাঙ্গুনিয়ায় গেলেও সেখান থেকে তারা নগরে ফেরেন স্ব স্ব গাড়িতে করে আলাদাভাবে। নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর গাড়িতে করে এই চার শীর্ষ নেতা রাঙ্গুনিয়ায় যান। এর আগে সকাল ১০টায় তারা নাসিমন ভবন চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভায়ও একসাথে অংশগ্রহণ করেন।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমি তো সবাইকে নিয়ে চলতে চায়। ঐক্যবদ্ধভাবে একসাথে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে চাই। কারণ এখন আমাদের সবার লক্ষ্য একটাই এই সরকারের পতন। তাই সকল ভেদাভেদ ভুলে আমাদেরকে এ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সবাই চট্টগ্রামে ছিলাম বিধায় একসাথে গিয়েছি। আমাদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও দলই হচ্ছে আমাদের ঠিকানা। অনেক দিন ধরে তো নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। বয়সও হয়েছে। সামনে নতুন প্রজন্মের কাছে তো হাল ছেড়ে দিতে হবে। তারা আমাদের দেখে শিখুক-এটাই আমাদের চাওয়া।’
উল্লেখ্য, গত বছর নগরীতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী পালন করেছিল বিএনপি। রাঙ্গুনিয়ায় শহীদ জিয়ার মাজারে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অপরদিকে আবদুল্লাহ আল নোমান নগরীর দুই নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যানে তার অনুসারীদের নিয়ে জিয়ার মৃত্যূবার্ষিকী পালন করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরুর সাথে মীর নাছিরের তেমন একটা দূরত্ব না থকলেও নেতৃত্ব নিয়ে আবদুল্লাহ আল নোমানের সাথে তার তলে তলে বিরোধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে নগরীতে বিগত দিনে বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচিতে এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে স্লোগান-মিছিল নিয়ে আধিপত্য বিস্তার করতে দেখা গেছে। এমনও হয়েছে, কোন কর্মসূচিতে একজন উপস্থিত থাকলে আরেকজন উপস্থিত থাকতেন না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে নগর বিএনপির কমিটি গঠনের পর থেকেই তাদের মধ্যে এ বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রের দাবি, গঠিত ওই কমিটিতে আবদুল্লাহ আল নোমান সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সভাপতি করা হয় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। এরপর থেকেই এই দুই নেতার মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। গতকাল তারা ক্ষণিকের জন্য একে অপরের কাছাকাছি আসলেও তাদের মধ্যে বিরোধের বরফ গলেছে কি-না তা নিয়েই নেতাকর্মীদের কৌতূহল লক্ষ্য করা গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বশূন্যতার কারণেই জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন : নোমান
গতকাল সকালে নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদ্যকারামুক্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার।
আলোচনা সভায় আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বশূন্যতার কারণে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। শুধু ঘোষণা করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, তিনি নিজে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতার পরে আবার দেশের ক্রান্তিলগ্নে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন এবং আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা পালন করেন।
দেশের গণতন্ত্র আজ হুমকির সম্মুখীন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সরকার ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে এই চট্টগ্রামেই জিয়া শাহাদাত বরণ করেছেন। আর এই চট্টগ্রাম থেকেই গণআন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘শহীদ জিয়া ৭১ সালে শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই করেননি, স্বাধীনতার যুদ্ধে তিনি অংশও নিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি দেশের শাসনভার নিয়ে দেশকে বাকশালমুক্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’
‘শহীদ জিয়া হচ্ছেন আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার কারিগর’ উল্লেখ করে সভাপতির বক্তব্যে আমীর খসরু বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে যেভাবে তিনি ভূমিকা রেখেছেন স্বাধীনতার পরও জাতিকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ উপহার দিয়ে আত্মপরিচয়ে বাঁচতে শিখিয়েছেন। আমাদেরকে শহীদ জিয়ার সেই স্বপ্নকে বুকে লালন করে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, শহীদ জিয়া বারবার দেশের ক্রান্তিলগ্নে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
আলোচনা সভা শেষে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগর বিএনপির এই চার শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে নাসিমন ভবন থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী গাড়িবহর নিয়ে রাঙ্গুনিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারা সেখানে শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্তি করেন।