শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদদেশজুড়েজন্ম নিবন্ধনের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়লেও বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ শিশু এখনো ‘অদৃশ্য’ রয়ে...

জন্ম নিবন্ধনের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়লেও বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ শিশু এখনো ‘অদৃশ্য’ রয়ে গেছে : ইউনিসেফ

 ইউনিসেফের ৭৩তম জন্মদিনে প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম নিবন্ধন হওয়া শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও পাঁচ বছরের কম বয়সী ১৬ কোটি ৬০ লাখ বা প্রতি চার শিশুর একজন অনিবন্ধিত থেকে যাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি শিশুর জন্ম নিবন্ধন: আমরা কী সঠিক পথে আছি? – শীর্ষক প্রতিবেদনে ১৭৪টি দেশের উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যেখানে উঠে এসেছে যে, বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের হার ১০ বছর আগের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে– ৬৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী জন্মনিবন্ধন হারের এই উন্নতির মুলে ছিল দক্ষিন এশিয়া, বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল। ভারতে জন্মনিবন্ধন হার ২০০৫-২০০৬ সালের ৪১ শতাংশ থেকে বেড়ে তা ২০১৫-২০১৬ সালে ৮০ শতাংশে পৌছায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউনিসেফ ভারত সরকার ও তার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য সমুহের সাথে জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রবেশাধিকার বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহন করে। এর মধ্যে রয়েছে জনসচেতনতা বাড়ানোসহ নিবন্ধন কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষন কর্মকর্তা ও কমিউনিটি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি।

তবে এর মানে এই নয় যে, দক্ষিন এশিয়ায় জন্মনিবন্ধন পরিস্থিতি এ মুহূর্তে গ্রহণযোগ্য। পাঁচ বছরের কম বয়সী ৫ কোটি ১০ লক্ষ শিশুর জন্ম এখনো অনিবন্ধিত এবং এই শিশুদের অধিকাংশেরই বসবাস ভারত ও পাকিস্তানে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, “আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, কিন্তু এখনও অনেক শিশু ফাঁক-ফোকর দিয়ে বাদ পড়ে যাচ্ছে — যারা গণনার বাইরে এবং অনিবন্ধিত থেকে যাচ্ছে। জন্মের সময় একটি শিশুকে নিবন্ধনভুক্ত করা না হলে সে সরকার বা আইনের দৃষ্টিতে অদৃশ্য বা অস্বিত্বহীন থেকে যায়। পরিচয়ের প্রমাণ না থাকা শিশুরা অনেক ক্ষেত্রেই পড়াশোনা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা থেকে বাদ পড়ে এবং শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে থাকে। বিপরীতে, উপ-সাহারীয় আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ বিশ্বের অন্য দেশগুলো থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ইথিওপিয়া (৩ শতাংশ), জাম্বিয়া (১১ শতাংশ*) ও চাদে (১২ শতাংশ) শিশুর জন্ম নিবন্ধনের হার বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অনুযায়ী, জন্ম নিবন্ধনসহ সবাইকে বৈধ আইনি পরিচয় প্রদানের লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতি তিনটি দেশের প্রায় একটির বা বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রায় এক তৃতীয়াংশের জন্মনিবন্ধনে জরুরি ভিত্তিতে অগ্রগতি জোরদার করার প্রয়োজন হবে।

বিশ্বব্যাপী নিবন্ধকরণের প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে রয়েছে– কীভাবে একটি শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে হয় সে বিষয়ে জ্ঞানের অভাব, জন্ম নিবন্ধন করার জন্য বা জন্মসনদ গ্রহণের জন্য সাধ্যতীত বা মাত্রাতিরিক্ত মাশুল, দেরিতে নিবন্ধনের মাশুল এবং সবচেয়ে নিকটবর্তী নিবন্ধন কেন্দ্রটির দীর্ঘ দূরত্বে থাকার মতো বিষয়গুলো। কিছু কমিউনিটিতে নতুন মায়েদের ঘরের ভেতরে রাখার মতো প্রচলিত রীতিনীতি ও অভ্যাস রয়েছে, যা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুর জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমনকি জন্ম নিবন্ধন করার পরও অনেক শিশুর জন্মসনদ পাওয়া যায় না। বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৩ কোটি ৭০ লাখ শিশু বা প্রতি তিন শিশুর একজনের জন্ম নিবন্ধনের এই আনুষ্ঠানিক প্রমাণপত্র নেই। বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক শিশুর বাস দক্ষিন এশিয়াতে যার ৭ কোটি ৭০ লাখ শিশুর জন্মই অনিবন্ধিত।

 ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি শিশুর জন্ম নিবন্ধন শীর্ষক প্রতিবেদনে ইউনিসেফ সব শিশুর সুরক্ষার জন্য পাঁচটি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে:

  • জন্মের পরপরই প্রতিটি শিশুকে একটি সনদ প্রদান করা।
  • শিশুর জন্মের সময় নিবন্ধনের জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মা-বাবাকে সক্ষম করে তোলা
  • প্রতিটি শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সুরক্ষা ও শিক্ষাসহ সেবা প্রাপ্তির অধিকার রক্ষার সুবিধার্থে জন্ম নিবন্ধনকে অন্য ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করা
  • জন্ম নিবন্ধনের সুবিধার্থে নিরাপদ ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগত সমাধানের জন্য বিনিয়োগ করা
  • প্রতিটি শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য দাবি উত্থাপনে কমিউনিটিগুলোকে সম্পৃক্ত করা

ফোর বলেন, “প্রতিটি শিশুর নাম, জাতীয়তা ও আইনি পরিচয় থাকার অধিকার রয়েছে। তাই নিবন্ধনের হার বৃদ্ধিতে যেকোনো অগ্রগতিই হচ্ছে ভালো সংবাদ। তবে আমরা মাত্রই জাতিসংঘ শিশু অধিকার বিষয়ক সনদের ৩০তম বার্ষিকী পালন করেছি, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি শিশুকে গণনার আওতায় আনা না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের থামা উচিত হবে না।“

জন্ম নিবন্ধন হচ্ছে- কোনো দেশের আইনি প্রয়োজনীয়তা অনুসারে সিভিল রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে শিশুর জন্মের ঘটনা ও বৈশিষ্ট্যসমূহ আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ করা। জন্মসনদ একজন সিভিল রেজিস্ট্রার কর্তৃক প্রণীত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি, যেখানে একটি শিশুর জন্মের তথ্য উল্লেখ থাকে। যেহেতু এটি জন্ম নিবন্ধন রেকর্ড থেকে প্রত্যয়ন করা মূল তথ্য সংবলিত একটি সনদ, তাই এটি প্রমাণ করে যে জন্মের নিবন্ধন করা হয়েছে। এ কারণে এই সনদ, বিশেষ করে শিশুদের বৈধ পরিচয়ের প্রথম এবং অনেক ক্ষেত্রে একমাত্র প্রমাণে পরিণত হয়। ইউনিসেফের বৈশ্বিক তথ্যভাণ্ডারে ১৭৪টি দেশের জন্ম নিবন্ধের হিসাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা মূলত মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) এবং জনসংখ্যাতাত্ত্বিক ও স্বাস্থ্য জরিপের (ডিএইচএস) মতো জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বমূলক গৃহ জরিপ থেকে প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য। বৈশ্বিক তথ্যভাণ্ডারে থাকা অন্য তথ্যগুলোর উৎসের মধ্যে রয়েছে– অন্যান্য জাতীয় জরিপ, আদম শুমারি এবং নাগরিক নিবন্ধন ব্যবস্থা থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ