রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়আয়-ব্যয় ও প্রভিশনের ভারসাম্যহীনতায় ব্র্যাক ব্যাংক

আয়-ব্যয় ও প্রভিশনের ভারসাম্যহীনতায় ব্র্যাক ব্যাংক

সুদ আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন দশমিক ৩২ শতাংশ। সহযোগী প্রতিষ্ঠানের আয়ে ভর করে পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর বিপরীতে একই সময় পরিচালন ব্যয় ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও প্রভিশন ৪৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আয়-ব্যয় ও প্রভিশনের ভারসাম্যহীনতায় চলতি বছরের ৯ মাসে মুনাফায় পিছিয়েছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ব্যাংকটির কর-পরবর্তী মুনাফা ২৩ দশমিক ৩৫ শতাংশের বেশি কমেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি আর্থিক বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ব্র্যাক ব্যাংক প্রায় এক হাজার ১১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রকৃত সুদ আয় করেছে। এর আগের বছরের একই সময় ওই আয় ছিল এক হাজার ১৫০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে প্রকৃত সুদ আয় তিন দশমিক ৩২ শতাংশ বা প্রায় ৩৮ কোটি ২২ লাখ টাকা বেড়েছে।

ব্যাংকটির আয়ের বাকি তিন খাতের মধ্যে দুটিতে আয় (বিনিয়োগ ও অন্য পরিচালন আয়) কমেছে। তবে পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে পরিচালন আয়ে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালন আয় প্রায় দুই হাজার ১৬০ কোটি ৬৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ে ওই আয় প্রায় এক হাজার ৯২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ছিল।

ব্যাংকের ঋণ-আমানতের সুদহারে পরিবর্তন ও পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থাসহ ব্যাংক খাতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের কারণে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা ব্র্যাক ব্যাংক বিপাকে পড়েছে। যে কারণে এগিয়ে চলার ধারা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকটি। যদিও ব্যাংকটি কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা ও প্রচার খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে। বরং এ বাড়তি ব্যয়ই এখন ব্র্যাক ব্যাংকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পিছিয়ে পড়ার কারণ সম্পর্কে কথা বলার জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশের বাইরে আছেন বলে জানান। তার অনুপস্থিতিতে কোম্পানি সচিব রইস উদ্দিন আহমেদসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে চলতি বছরে ব্যাংকটির ১০ খাতের ৯টিতেই ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় বেড়েছে স্টেশনারি, প্রিন্টিং ও প্রকাশনা খাতে। ওই ব্যয় এক বছরের ব্যবধানে ৪৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বা প্রায় ৭৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বেড়ে ২৫০ কোটি ৩৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। একভাবে ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ব্যয়ও ১৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ বা ৯১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বেড়ে সর্বশেষ প্রান্তিক শেষে হয়েছে প্রায় ৫৮৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির পরিচালন ব্যয় এক হাজার ৪৮৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। এর আগের আর্থিক বছরের একই সময় এর পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ২৪২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। পরিচালন আয়ে শ্লথগতির বিপরীতে ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে বিপাকে পড়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এতে ব্যাংকটির মুনাফা এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় কমেছে।

তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ব্র্যাক ব্যাংকের কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ৩১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের আর্থিক বছরের একই সময় ব্যাংকটির ওই মুনাফা ছিল প্রায় ৪১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে ব্র্যাক ব্যাংকের কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ৯৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমেছে।

চলতি আর্থিক বছরে আয় বাড়লেও মুনাফায় পিছিয়ে পড়ার জন্য পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধিকেই দায়ী করা হচ্ছে। তবে ওই ব্যয়ের পাশাপাশি প্রভিশনকেও দায়ী করা হচ্ছে। কারণ, চলতি বছরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও ঋণ-অগ্রিমের বিপরীতে প্রভিশনও বেড়েছে। এবার ৯ মাসে ব্যাংকটিতে প্রায় ১১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা প্রভিশন রাখতে হয়েছে, যা এর আগের আর্থিক বছরের চেয়ে প্রায় ৪৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ৭৩ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে আসা ব্র্যাক ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন এক হাজার ২৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ব্যাংকটির প্রায় ১২৩ কোটি ৩৩ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৪৪ দশমিক ২৯ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে সাত দশমিক শূন্য চার শতাংশ, বিদেশিদের কাছে ৪৩ দশমিক ৪২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে পাঁচ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ব্যাংকটি এর আগের (২০১৮) আর্থিক বছরে ৫৬৭ কোটি টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ার ৫০ টাকা ১০ পয়সায় সর্বশেষ লেনদেন হয়। – শেয়ার বিজ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ