শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো বাধা নেই বলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তাই এই তিন সিটিতে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, প্রয়োজনীয় নির্বাচনী সামগ্রীর পরিমাণ নির্ধারণ, তিন সিটি নিয়ে দায়ের হওয়া পাঁচটি রিটের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তথ্য নেয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজও শেষ করে আনছে কমিশন সচিবালয়। নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণেরও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তিন সিটিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও ভোটগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে কমিশন। বৈঠকে তফসিল ঘোষণার বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তিন সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য দিয়েছে। ইসির ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ও নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। আর চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন মার্চের পরে হতে পারে। তবে পুরো বিষয়টি সরকারের গ্রিন সিগন্যালের ওপর নির্ভর করছে।

তারা বলেন, জানুয়ারিতে খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা এবং মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ সময়ে নির্বাচন করতে চায় না কমিশন। এসব বিবেচনায় ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ করতে চায় কমিশন। ওই সময়ে স্কুলগুলোতে পরীক্ষা থাকবে না এবং শীত মৌসুম থাকায় ভোটের উপযুক্ত পরিবেশ থাকবে।’ জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘কমিশন সভায় ঢাকার দুই ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। ওই সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সেই অনুযায়ী বাস্তবায়নে কমিশন সচিবালয় কাজ করবে।’ ভোটের সময়সূচির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিশন এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

জানা যায়, কমিশনের ওই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে আরও ছয়টি বিষয় রয়েছে। এগুলো হল- জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন-২০১৯ এর খসড়া পুনর্বিবেচনা, গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণ, উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন, স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচন, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য গোপনবিষয়ক নির্দেশনা এবং কমিশনের বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন ও প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা।

আরও জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন-২০১৯ এর সংশোধনী এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ- ১৯৭২ (আরপিও) সংশোধন করে আইনে রূপান্তর করার বিষয়ে সরকারের সায় নেই। ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হলে তা ফেরত এসেছে।

এদিকে কমিশন সভার জন্য তিন সিটি নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে কার্যপত্র তৈরি করা হলেও সেখানে তফসিলের সম্ভাব্য দিন-তারিখ প্রস্তাব করেনি কমিশন সচিবালয়। এতে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচন ও সিটি কর্পোরেশনগুলোয় ভোটগ্রহণের সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচিও উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোটের সময়সূচি কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

কার্যপত্রে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২০১৫ সালের ১৪ মে, দক্ষিণ সিটিতে ওই বছরের ১৭ মে এবং চট্টগ্রাম সিটিতে ৬ আগস্ট প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসাবে ঢাকার উত্তর সিটিতে ১৩ মে, দক্ষিণ সিটিতে ১৬ মে এবং চট্টগ্রাম সিটিতে ৫ আগস্ট মেয়াদ শেষ হবে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, এসব নির্বাচন নিয়ে মামলা বা জটিলতা নেই। নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনগত বাধাও নেই।

তাই ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন করার উপযোগী হবে। ওই সময়ে ভোট করতে হলে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। তবে একই দিন ভোট হলেও প্রথম সভা দেরিতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় চট্টগ্রাম সিটিতে মার্চের আগে ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে না। মার্চে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও পরে এইচএসসি পরীক্ষা রয়েছে। সেদিকটা বিবেচনা করে চট্টগ্রাম সিটির ভোটের সময় নির্ধারণ করা হবে।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন ও ঢাকা দক্ষিণে ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। গত নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে ৬৪৯টি ও দক্ষিণে ১ হাজার ২৯৫টি ভোটকেন্দ্র ছিল। সম্ভাব্য ভোটার ও ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা হিসাবে কী পরিমাণ নির্বাচনী সরঞ্জামের প্রয়োজন হবে, এর প্রাক্কলন তৈরি করেছে ইসি সচিবালয়। এ তিন সিটিতে ইভিএম ব্যবহার হওয়ায় ব্যালট পেপার মুদ্রণ, ভোট দেয়ার সিল, চটের বস্তাসহ কয়েক ধরনের জিনিসপত্রের প্রয়োজন হবে না। বাকি সরঞ্জামাদি কীভাবে সংগ্রহ করা হবে, সেগুলোরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নির্বাচনে ইভিএম কাস্টমাইজ করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, তিন সিটি নিয়ে উচ্চ আদালতে ৫টি রিট আবেদন রয়েছে। এসব রিট আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চেয়ে ইসির সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের চিঠি দেয়া হয়েছে। ঢাকার নির্বাচন অফিসগুলোতে যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের তালিকা জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ভোটার স্থানান্তরের যেসব আবেদন রয়েছে, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতেও বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ