বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনজানে আলম দোভাষের বাসভবন ছিল দুঃসময়ের আশ্রয়স্থল

জানে আলম দোভাষের বাসভবন ছিল দুঃসময়ের আশ্রয়স্থল

আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে যখন কোথাও আশ্রয় পেতাম না, চট্টগ্রামের একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিল জানে আলম দোভাষের বাসভবন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি আমাদের যাবতীয় সহায়তা করেছেন। এজন্য পাক সেনারা তার বাড়ি ঘেরাও করেছিল। তারপরও তিনি তার সাহায্য বন্ধ করেননি। আমরা বিকেলে জানে আলমের বাসায় নাস্তা করতে গেলে রাতে না খেয়ে ফিরতে পারতাম না। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি এম জানে আলম দোভাষ স্মরণে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সোমবার কাজীর দেউড়িস্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে এ স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু জানে আলম দোভাষকে নির্বাচনে দাঁড়াতে বললে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আমার কাছে টাকা নেই। বঙ্গবন্ধু উত্তরে বলেন, আমরা দোভাষের বাড়িতে যেতাম, ওর কাছ থেকে খেতাম। এখন নির্বাচনে ওর সব ব্যয় আমি বহন করবো। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু জানে আলম দোভাষের সব ব্যয় বহন করেন। জানে আলম দোভাষের মাঝে কোন লোভ ছিল না।

নির্লোভ একজন মানুষ ছিলেন। উনার ছেলে জহিরুল আলম দোভাষও বাবার মতো হয়েছেন। প্রধান বক্তার বক্তব্যে প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, জানে আলম দোভাষের বাবা আব্দুল হক দোভাষ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনকারীদের সহায়তা করেছেন। চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই দোভাষ বাড়ি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে আসলে অনেক নেতার বাড়িতে থাকতেন, তবে সবচেয়ে বেশি জানে আলম দোভাষের বাড়িতেই তিনি থাকতেন।

সংসদ সদস্য আফসারুল আমিন বলেন, জানে আলম দোভাষদের মত মানুষের জন্য চট্টগ্রামে ছয় দফা সফল হয়েছে। উনার কোন লোভ ছিল না। জানে আলমদের মত ত্যাগী নেতাদের রেখে যাওয়া আওয়ামী লীগের সংগঠনকে আমাদের ধারণ করতে হবে। তিনি দলের সমালোচনা করে বলেন, চট্টগ্রামেও কয়েকজন আছেন যারা ৫-৬ জন বডিগার্ড নিয়ে ঘুরেন। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে। কিছু কিছু জায়গায় আমাদের অঙ্গসংগঠনগুলো হোঁচট খাচ্ছে। এর সংশোধন করতে হবে। কর্মীর কাতারকে সংগঠিত করতে হবে। আমরা নীতি আদর্শের কথা শোনাই কিন্তু আমরা তা বাস্তবায়ন করি না।

জানে আলম দোভাষের ছেলে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আমার বাবা সম্পর্কে আমি কিছু বললে হয়তো বেশি হয়ে যেতে পারে। তাই আমি কিছু বলবো না। তবে কিছু বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারি। তা হচ্ছে, তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি নীতি নির্ধারণের সময় এম এ মান্নান, এম এ আজিজসহ তৎকালীন সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ নিতেন।

সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা এমন একজন মানুষের স্মরণ সভায় উপস্থিত হয়েছি, যিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করেছেন। জানে আলম দোভাষ চট্টগ্রামে একজনই ছিলেন। ছাত্রলীগের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনারা স্মরণ সভায় এসে কার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের বক্তব্যের সময় স্লোগান দেয়ায় তিনি তার কাছে ক্ষমা চান।

মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় ও মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, জানে আলম দোভাষের বন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতা এম এ গণি, মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম, নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সফর আলী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আব্দুচ ছালাম, নগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুল হক মিয়া, স্বেচ্ছা সেবকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কে বি এম শাহজাহান, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল মনছুর, আলকরণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলক তারেক সোলেমান সেলিম, আলকরণ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান, ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা স্বপন কুমার মজুমদার, নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর প্রমুখ।

সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি এড. সুনীল কুমার সরকার, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসান মাহমুদ শামসের, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, হাজী মো. হোসেন, জালাল উদ্দিন ইকবাল, জোবাইরা নার্গিস খান, আবদুল আহাদ, আবু তাহের, শহিদুল আলম প্রমুখ। সভার প্রারম্ভে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল পরিচালনা করেন মাওলানা আলহাজ্ব হারুনুর রশিদ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ