শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপচয়নের নেতৃত্ব যুবসমাজের অগ্রগতির পথ দেখাক : বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

চয়নের নেতৃত্ব যুবসমাজের অগ্রগতির পথ দেখাক : বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

নৈতিকতার চরম অধঃপতনে আমরা দিশাহারা। কোথাও সম্ভাবনার আলো দেখছি না। সবখানেই কেমন মারাত্মক ভাটির টান। মেরে কেটে কেউ বড় হতে পারলেই যেন বেঁচে যায়। অন্যের প্রতি কোনো দয়া-মায়া-শ্রদ্ধা-ভক্তি নেই। কেমন যেন দানবীয় পশুত্বের ভাব। অন্যকে আঘাত করতে, মানহানি করতে কেন যেন কারও এতটুকু বাধে না। পরকে হেঁট করতে পারলেই যেন মহা আনন্দÑ এ তো কোনো সভ্যতা হতে পারে না, মনুষ্যত্ব হতে পারে না। মানুষের বুদ্ধি, বিবেক-বিবেচনা থাকবে, অন্যের ক্ষতি চাওয়ার আগে দশবার ভাববে কারও চরিত্র হনন করলে তার যে ক্ষতি হবে, যেমন লাগবে; অন্য কেউ তার চরিত্র হনন করলে তারও তো তেমন লাগবে। অতিসম্প্রতি পীর হাবিবের চরিত্রহননে কিছু লোক মাঠে নামায় অবাক-বিস্মিত না হয়ে পারিনি। পীর হাবিব ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করেছেন এটা তার গর্ব। আমিও ছাত্রলীগ করেছি। আজকের ছাত্রলীগ আর সেদিনের ছাত্রলীগে সত্যিই লাখো গুণ গুণগত পার্থক্য। আমি জীবন দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। যৌবনে প্রেম করিনি, আমার প্রেম দেশ ও দেশের নেতা। সতী নারীর পতি যেমন একজন, সৎ রাজনৈতিক কর্মীর নেতাও তেমন একজন। নেতৃত্ব বদলাতে মন সায় দেয় না। তাই কখনো কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নেতা বদলাইনি। বঙ্গবন্ধুই আমার আদর্শ নেতা-পিতা। কোনো দিকে না তাকিয়ে জীবনের প্রায় পূর্ণতা অর্জন করেছি। তাই কখনো জানা মতে কোনো অসত্যের পেছনে ছুটিনি। আমার অন্তরাত্মা, আমার বিবেক যেভাবে চালিত করেছে সেভাবেই এতটা পথ চলেছি। তাই পীর হাবিবকে নিয়ে যখন নানা রটনার চেষ্টা হয়েছে বড় বেশি মর্মাহত, ব্যথিত হয়েছি। অন্যায়ভাবে কাউকে ছোট করে লাভ কী? আর যাকে কেউ অন্যায়ভাবে ছোট করার চেষ্টা করে সেও হয়তো আল্লাহর তরফ থেকে একদিন প্রকৃত অর্থেই অপমানিত, ছোট হতে পারে। যত চকচকই করুক মিথ্যা মিথ্যাই, মিথ্যার কোনো স্থায়ী অস্তিত্ব নেই। পীর হাবিবকে অসম্ভব ভালোবাসি, স্নেহ করি। চরিত্রহননের এসব চেষ্টায় তার কোনো ক্ষতি হবে না বরং লাভই হবে। আমরা তাকে ভালোবেসেই যাব আমাদের অপরিসীম শুভ কামনা নিয়ে।

দেখতে দেখতে কোলে নেওয়া রাসেলের ৫৫তম জন্মদিন চলে গেল। আজ রাসেল বেঁচে থাকলে জাতির পিতা যে বয়সে চলে গেছেন সেই বয়স হতো। কি বিচিত্র জীবন! রাজনীতির কি প্রতিহিংসা, কি নোংরামি। যাঁর সারা জীবনের শ্রমে-ঘামে, যাঁর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেলাম সেই নেতাকে সেই পিতাকে হত্যা করলাম! সারা দুনিয়ায় বাঙালি জাতি পিতৃহত্যার দায়ে কলঙ্কিত হলাম। মহাভারতের মহান নেতা মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করে ভারতবাসী পিতৃহত্যার যে কলঙ্কে কলঙ্কিত হয়েছে আমরা বাঙালিরাও সেই কলঙ্ক মাথায় নিলাম। আজ কত অন্যায়-অবিচার, কত অবহেলা, কিন্তু কারও কোনো আকার-বিকার নেই। রাতদিন দেশের চিন্তায় যিনি বিভোর থাকতেন, ভালোভাবে পরিবার-পরিজন-সন্তান-সন্ততিদেরও খবর রাখতে পারতেন নাÑ সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু কিছু কুলাঙ্গারের হাতে জীবন দিলেন। বয়স হয়ে গেছে তাই আজ তেমন কিছু পাওয়ার আশা করি না। জেলখানায় লতিফ ভাইয়ের পাশে এখন যখন বসি তার হাত কাঁপতে দেখে বড় কষ্ট হয়। যদিও আমার হাত এখন কাঁপে না। সবকিছুই এখনো মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু আমারও তো বয়স কম হয়নি। বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী আমার থেকে সাত-আট বছরের বড়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এক মাস হলো ৭৩-এ পা দিয়েছেন। আমি সাত মাস আগেই ৭৩-এ পা দিয়েছি। আমার জন্ম ১৪ জুন, ১৯৪৭, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭। আমার এক বড় ভাই ও বোন মারা গেছেন। আমি মায়ের মতো বড় বোন পাইনি। শেখ হাসিনা আমার সে অভাব পুরো করেছেন। যতটা সময় কাছাকাছি থেকেছি তাকে মায়ের বিকল্প মনে করেছি। তাই কেন যেন খুব কষ্ট হয়, ভয় লাগে। মাত্র ১০-১২ বছরের শিশু রাসেল ঘাতকের হাতে নিহত হয়েছে। তখন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবাই ছিলেন ভালো, একমাত্র পিতা খারাপ, নেতা খারাপ। তাই পিতাকে হত্যা করে পুত্রদের সবাইকে মন্ত্রী করা হয়েছিল। নেতৃত্বে ছিলেন খন্দকার মোশতাক, অন্যদিকে আজকাল ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী তৎকালীন এক সচিব ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী মন্ত্রিসভার সব আয়োজনের মূল ব্যক্তি। আজ আবার প্রবল বেগে বাতাস বইছেÑ সবই খারাপ, বোন ভালো। দলে ত্রাহি ত্রাহি। কিছু মানুষ সুখের ঢেঁকুর তুলছে তাই ভীষণ দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। এ রকম সময় নানা জায়গায় পরম ধুমধামে রাসেলের ৫৫তম জন্মদিন পালিত হয়েছে। দু-চারটি অনুষ্ঠানে নেত্রী শেখ হাসিনাও গেছেন। অন্যখানে স্থানীয় নেতারা, জাতীয় নেতারা যারা একসময় বঙ্গবন্ধুর নামে যা তা বলতে দ্বিধা করেননি তারা এবার কত উচ্চকণ্ঠই না ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে আমাদের ’৬০-’৬২ সাল থেকে সম্পর্ক। যাতায়াত ছিল অবারিত। আমার ছোটবোন রহিমা একবার এক ছাত্র সম্মেলনে ধানমন্ডির ৩২-এর বাড়িতে ছিল। বড় ভাই তাকে রেখে গেলে পরদিন আসতে দেরি হওয়ায় বঙ্গমাতা বলেছিলেন, ‘তুমি তো জানো না, লতিফ তোমাকে আমাদের কাছে বিক্রি করে গেছে। তুমি চিন্তা কোরো না। আমরা তোমাকে দিয়ে কোনো কাজ করাব না। তোমাকে ভালো স্কুলে পড়তে দেব।’ রহিমা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, ‘ওসব চিন্তা করছি না। মাকে দেখতে না পেলে আমি থাকব কী করে, আমি বাঁচব কী করে।’ বঙ্গমাতা তারও উত্তর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘বেশ তো তোমার যখন মন কাঁদবে তুমি মাকে দেখে আসবে, আমরা কোনো আপত্তি করব না।’ পর দিন একটু দেরিতে লতিফ ভাই এলে রহিমা বড় আকুল হয়ে কেঁদেছিল। বঙ্গমাতা রহিমার মাথায় বার বার হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে, তোমাকে বিক্রি করে লতিফ টাকা নিয়েছে নিক আমরা সে টাকা ফেরত চাই না। তোমার যখন মায়ের জন্য এত খারাপ লাগছে তোমাকে আমরা ছেড়ে দিলাম।’ এমন ছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। রাসেলকে কতবার কোলে নিয়েছি তার হিসাব নেই। ঢাকা দখল করে ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে গিয়েছিলাম বঙ্গমাতাকে এবং তার সন্তান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রেহানা, জামাল, রাসেলকে দেখতে। তখনো পাকিস্তানি পাহারা ছিল। বাড়ির গেটে গেলে হানাদাররা গুলি চালিয়ে ছিল। ডাটসান গাড়িতে পথ দেখিয়ে নেওয়া তিনজন নিরীহ মানুষ সেখানেই মারা গিয়েছিল। আমার গাড়িতেও গুলি লেগেছিল। আল্লাহ রাখবেন তাই বেঁচে আছি। ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনসভায় জামালকে নিয়ে গিয়েছিলাম। রাসেলকে অনেকবার কোলে নিয়েছিলাম। ২৪ জানুয়ারি, ’৭২ স্বাধীন বাংলাদেশে রাজধানীর বাইরে প্রথম জাতির পিতা টাঙ্গাইল এসেছিলেন আমার হাত থেকে অস্ত্র নিতে, কাদেরিয়া বাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র নিতে। সেখানে জামাল, রাসেল এসেছিল। এসেছিলেন শেখ শহীদ, জননেতা তোফায়েল আহমেদ। অন্যরা ইঁদুরের গর্তে লুকিয়ে ছিলেন। গুজব ছড়িয়ে ছিল, বঙ্গবন্ধু টাঙ্গাইল এলে তাকে আটক করে আমরা ক্ষমতা নিয়ে নেব। হ্যাঁ, রাজনীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় কখনোসখনো এমন হয়। পিতাকে পুত্র বন্দী করেছে, ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। আল্লাহ আমাকে অমন দুর্ভাগা পুত্র বানাননি। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেব পিতার হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আগ্রা দুর্গে তাকে বন্দী করে রেখেছিলেন। যে যাই বলুক, আমি অমন দুর্ভাগা সন্তান ছিলাম না। জীবনে অনেক অবহেলা সয়েছি, দুর্ভোগ সয়েছি, দুঃখে পড়েছি। কিন্তু ধৈর্যহারা হইনি। আমার মহান স্রষ্টা আমাকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন আমি তাঁর সেই উদ্দেশ্য সাধন করতে পারলেই আমার জীবনের সফলতা। আমি কোনো অন্যায় সহ্য করিনি, করতে পারি না। অজ্ঞতাবশত ভুল করি, জেনেশুনে কোনো অন্যায় করি না। যখন কোনো ভুল বা না জেনে অন্যায়ের দিকে যাই বোঝামাত্র আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করি। তাই বর্তমান অবস্থায় খুবই বিচলিত হই, কিন্তু স্বাধীনতার পর কি আনন্দময় জীবনই না ছিল। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গেলে সবাই আকুল হয়ে যেত, কি যত্নই না করত। রাসেল ছোট ছিল। টু টু বোর বন্দুক নিয়ে বড় বেশি ছোটাছুটি করত। ভাবত সব বন্দুকের মালিক আমি। কারণ ২৪ জানুয়ারি, ’৭২ বঙ্গবন্ধু অস্ত্র নিতে জামাল, রাসেলকে নিয়ে এসেছিলেন। ওরা আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল। মাঠভর্তি অস্ত্র দেখে বিস্মিত হয়েছিল। যতবার ওদের বাড়ি গেছি আমাকে দেখলেই শুধু অস্ত্র আর অস্ত্র চাই। কত রকমের অস্ত্র আছে তা জানার যে কী অপার আগ্রহ ছিল রাসেলের কল্পনা করা যায় না। চিটাগাংয়ের মাননীয় পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরী বন্দুক হাতে রাসেলকে দেখলেই ভয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতেন। আমারও ভয় হতো হঠাৎ রাসেলের হাত থেকে গুলি বেরিয়ে না জানি কোনো অঘটন ঘটে। না, শিশু রাসেলের গুলিতে কেউ আহত-নিহত হয়নি। বরং শিশু রাসেলই আমাদের সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু বর্বরের গুলিতে ঝাঁজরা হয়েছে। দিল্লিতে রমার কাছে শুনেছি, রাসেল শেষ পর্যন্ত বেঁচে ছিল, মার কাছে যাব বলে কান্নাকাটি করছিল। ওকে দেয়ালের কাছে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এক পর্যায়ে ঘাতকরা ওর ওপর গুলি চালায়। রাসেলের রক্ত-মাংস অনেকদিন ঘরের দেয়ালে আটকে ছিল। কী মর্মান্তিক! এ যেন কারবালার ঘটনাকেও হার মানায়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব লোক কী করে আপনার কাছে ঠাঁই পায়? মনোনীত (মহিলা) এমপি হয়ে প্রক্সি দিয়ে পরীক্ষাÑ এ তো জুয়া খেলার চাইতে বড় অপরাধ, খারাপ কাজ। বুবলী বেগমকে প্রতারণার জন্য এখনই জেলে পাঠান। আপনি যদি যুবলীগের সভায় গণভবনে শেখ মারুফকে ঢুকতে না দিতে পারেন তাহলে বুবলী বেগম কে? শেখ মারুফ আপনার রক্ত। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণির আপন ভাই। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর শেখ পরিবারের ওই একজনই জাতীয় মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করে প্রত্যক্ষ প্রতিরোধে অংশ নিয়েছিল। শেখ সেলিমের মারুফকে দেখাশোনার জন্য ওর যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য লতিফ ভাইকে লেখা বেশ কটি চিঠি আমার কাছে আছে, আমাকে লেখা চিঠি আছে। এমনকি মারুফের মা বড় ভাইকে এবং আমাকে মারুফের জন্য যেসব চিঠি দিয়েছিলেন এখনো সেসব সযতেœ রক্ষিত আছে। ’৭৫-এর প্রতিরোধের সময় আমাদের খাবার ছিল না, মেঘালয়ের পাদদেশে তীব্র ঠান্ডায় শীতবস্ত্র ছিল না। খাবারের মারাত্মক অনটনে মাঝেধ্যে মারুফকে পাশে বসিয়ে খাইয়েছি। আমি মাংস মুখে দিতাম না। পাহাড়ি ঝর্ণার পানির ছোট মাছ এটাওটা রান্না করে দিত। এটা সত্য, আমাদের পর্যাপ্ত সম্পদ, জিনিসপত্র ছিল না। কিন্তু মন ও আন্তরিকতা ছিল। পাহাড়ি লতাপাতা তুলে ছোট দারকিনা-মলা-ঢেলা-বাইজা মাছ কাবলী যখন রান্না করে দিত সে হাত চেটে খাবার মতো অবস্থা হতো। স্বাধীনতার পর ’৭২-এর শেষার্ধে বা ’৭৩-এর শুরুতে ধানমন্ডির বাড়িতে পিতার সঙ্গে সকালের নাস্তায় বসেছিলাম। মুরগির কষানো মাংস আর কীসব ভাজি। খেতে খেতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এসব কে রেঁধেছে?’ বঙ্গমাতা একটু ঠেস দিয়ে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তোমার বাড়িভর্তি ছড়ানো ছিটানো কাজের লোক। তারাই করেছে। তাই না? আমি ছাড়া তোমার রান্না আর কে করে?’ কথাটি আমি জীবনে প্রথম শুনেছিলাম। কারও সুন্দর রান্নার জন্য কীভাবে পৃথিবী উপহার দেওয়া যায় বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতাকে বলেছিলেন, ‘আসো, তোমার হাত চেটে দেই।’ পিতৃহত্যার প্রতিরোধ সংগ্রামে কাবলীর ভাজি-ভর্তা এটাওটা খেয়ে মনে হতো হাত চেটে দিই। পাশে যখন মারুফ থাকত একটা স্বস্তি পেতাম। ওদেরই কেমন আত্মীয় কাইয়ুম চান্দভূই হেডকোয়ার্টারে কয়েক মাস আমার পরম সেবাযত্ন করেছে। জানি না, কেন মারুফ সেদিনের যুবলীগের সভায় গণভবনে যেতে পারেনি। আমার বুকের পাঁজর ভেঙে গেছে ১৫ আগস্ট পিতার হত্যার দিনে তিনি যে সিঁড়িতে পড়ে ছিলেন সেখানে আমি গিয়ে নামাজ পড়তে পারিনি। কী এমন অপরাধ করেছে মারুফ যে যুবলীগের সভায় গণভবনে যেতে পারে না? তার অপরাধের কথাটা তো আমাদের বা দেশবাসীকে বুঝতে হবে। সে তো এ দেশের নাগরিক। মুক্তিযুদ্ধে ছোট ছিল তাই হয়তো তেমন ভূমিকা নেই, ’৭৫-এ ভূমিকা আছে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের অনেকেরই নেই। তাহলে মারুফকে কি ওমর ফারুক চৌধুরী, সম্রাট, জি কে শামীম, খালেদ ভূইয়ার কাতারে শামিল করা হলো? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি দয়া করুন, মাফ করুন। এর মধ্যে ড. কামাল হোসেন স্যার জনাব রাশেদ খান মেননকে ভোট ছাড়া নির্বাচিত হওয়ার কথা স্বীকার করায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তার আগে ভোট চুরি করায় বা চুরিতে শামিল হওয়ায় স্যার কি ঘৃণা জানাবেন না? জনাব রাশেদ খান মেননের দ্বিচারিতায় তার আত্মহত্যা করা উচিত। জনাব মেননের বিচার করুন, তামান্না নুসরাত বুবলীর বিচার করুন।

চয়নকে যুবলীগের সফল সম্মেলনের দায়িত্ব দিয়েছেন। সেখানে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুন তো আছেই। এটা খুবই ভালো কাজ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর চয়নের বাবা ড. মাজহারুল ইসলাম ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে চয়নও ছিল। এক পর্যায়ে শান্তিনিকেতনে ভর্তি হয়েছিল। কি আর্থিক দুর্গতি, কি কষ্ট করেছে। তখন যা ক্ষমতা ছিল সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। দেশে এসেও মাজহার স্যারের মিটিংয়ে গেছি, প্রবল বৃষ্টিতে স্যার গাড়িতে বসে থেকেছেন, জনতার সঙ্গে আমি ভিজেছি। আরেকবার বৃহত্তর রংপুর সফরে গিয়েছিলাম। প্রায় ১৫ দিন ছিলাম। সেদিন ছিলাম নীলফামারীতে। একসময়ের হুইপ আবদুর রউফ তখন বেঁচে। তার বাড়ি থেকে চয়ন নিজে সারা রাত গাড়ি চালিয়ে নিয়ে এসেছিল ওদের বাড়িতে। পরদিন বিরাট সভা ছিল শাহজাদপুর। সেই চয়নকে যুবলীগ সম্মেলনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দু-তিন দিন থেকে শুনছিলাম মণি ভাইয়ের ছেলে তাপসকে দেওয়া হবেÑ সেটাও ভালো হতো। দেশে ফিরে স্যার গার্মেন্ট ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেখানেই চয়ন হাত পাকিয়েছে। স্যার এমপি হতে পারেননি, চয়ন হয়েছে। দোয়া করি, আমরা যে মনমানসিকতা নিয়ে শেখ ফজলুল হক মণির নেতৃত্বে যুবলীগের জন্ম দিয়েছিলাম যুবলীগের প্রস্তুতি কমিটি চয়নের নেতৃত্বে এমন একটা যুবশক্তি বেরিয়ে আসুক, দলমতনির্বিশেষে বাংলাদেশের যুবসমাজের অগ্রগতির পথ দেখাক, মানবতার পথ দেখাক।

লেখক : রাজনীতিক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ