শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনপাউবো’র ভবন দখল করে ছাত্রলীগ নেতার আয়েশি জীবন যাপন

পাউবো’র ভবন দখল করে ছাত্রলীগ নেতার আয়েশি জীবন যাপন

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরোনো ভবনের এক ইউনিট দখল করে আয়েশি জীবন যাপন করছেন নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নোমান চৌধুরী। এসি লাগানো ওই বাসার বিদ্যুৎ, পানির বিলসহ যাবতীয় খরচ বহন করে পাউবো। তার বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে রাজনৈতিক আড্ডা ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। তবে ছাত্রলীগ নেতা নোমান চৌধুরী গতকাল রাতে দাবি করেছেন সেই বাসাটি অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু বাসাটি তার দখলে রয়েছে বলে দুই প্রকৌশলী নিশ্চিত করে বলেছেন, নোমানের বাসা দখলের ঘটনাটি ওপেন সিক্রেট। উধ্বর্তন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারাও অবহিত রয়েছেন। কারণ দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমি যোগদানের পর থেকে ওই বাসাটি তার (নোমান চৌধুরী) দখলে রয়েছে। ৫ বছরের বেশি সময় ধরে নোমান বাসাটি দখল করে রেখেছে বলে জানান তিনি। বাসার পানি বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাসার খরচ তো আমাদের বহন করতে হবে।’ দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের সাথে লাগোয়া পুরোনো একটি ভবনের একাংশ দখল করে নিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা নোমান চৌধুরী। আরেকপাশে রয়েছে আনসার সদস্যদের বসবাস। নিচে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ছাত্রলীগ নেতা নোমান চৌধুরী দাবি করেন, আমার জন্মও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলোনিতে। এক সময় থাকতাম। অনেক আগেই বাসাটি ছেড়ে দিয়েছি। বাসা দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হয় তো কেউ ভুল তথ্য দিয়েছে। ছাত্র রাজনীতি করি। আমাদের বিষয়ে তো আপনারা জানেন। দখল-বেখলের বিষয়ে জড়িত নই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা নোমান ওই বাসায় এসি লাগিয়েছেন। বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলের ছাত্রদের অবাধ বিচরণ রয়েছে বাসাটিতে। শুধু তাই নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাংলো ও বাংলো সংলগ্ন মাঠ হচ্ছে নোমানের রাজনৈতিক মঞ্চ। বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করে আসছেন ওখানে। এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক প্রকৌশলী ও কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তারা বললেন, নোমানের কাছ থেকে বাসা উদ্ধারের জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবার পিছু হটতে হয়েছে পাউবোকে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রকৌশলী ও আনসারদের ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে দখলে রয়েছে বাসাটি। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশ করা হয়েছে। ছাত্রলীগ সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার দাবি করে পওর (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ)-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহার অপসারণ দাবি করে চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের উদ্যোগে মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। নোমানকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাসা ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হলে কৌশলে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করে নোমানের অনুসারীরা।

এছাড়াও পাউবো’র এক উপ-সহাকারী প্রকৌশলীকে লাঞ্চনা ও হুমকি দিয়ে ছিল বলে জানা যায়। তার প্রতিবাদে কর্মবিরতি ঘোষণার কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল। পরে রাজনৈতিকভাবে তা মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমাদের কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছিল নোমান। ওইখানে তা মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা নোমানেরও রয়েছে কিশোর গ্যাং। ফরিদাপাড়ার মুখে মাইক্রো স্ট্যান্ড থেকে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে দুই গ্রুপের কিশোর গ্যাং বাহিনীর সদস্যরা। ওই মাইক্রো স্ট্যান্ড থেকে দুই গ্রুপকে বিভিন্ন সময়ে বিনা ভাড়া মাইক্রো সরবরাহ করতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯১-৯৬ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন শ্রমিকদলের ( রেজি.বি-১৯০৯) সভাপতি ছিলেন কাদের চৌধুরী। মরহুম কাদের চৌধুরীর দূরসম্পর্কের আত্মীয়তার সূত্রে বাসাটিতে তাকে আশ্রয় দেন। কাদের চৌধুরী অবসর যাওয়ার পর বাসা ছেড়ে দিলে ফরিদাপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা নেন নোমান চৌধুরী। সিটি কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর আবারো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলোনিতে নজর পড়ে নোমানের। ২০০৮ সালের দিকে এক কর্মচারীর সঙ্গে সাবলেট হিসেবে একটি বাসায় উঠেন তিনি। কিন্তু ওই কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পরও বাসা ছাড়েনি নোমান। এতে পেনশন ভাতা পেতে বিপত্তিতে পড়েন ওই কর্মচারী। শেষ পর্যন্ত ওই বাসাটি ছেড়ে আরেকটি বাসা দখল করে নোমান। দখল করা ওই বাসায় জলাবদ্ধতার কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ইউনিট দখল করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানান, এক সময়ে ওই বাসাটি দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের বাংলো হিসেবে ব্যবহার করা হতো। – পূর্বকোণ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ