শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনহকার্স মার্কেটে ভয়াবহ আগুন

হকার্স মার্কেটে ভয়াবহ আগুন

নগরীতে পাশাপাশি দুটি পোশাক মার্কেটে আগুন লেগে অন্তত ১৩২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। শনিবার ভোররাত ৩টা ৫০ মিনিটে নগরীর কোতোয়ালী থানার জুবিলী রোডে পাশাপাশি জহুর হকার্স মার্কেট ও জালালাবাদ মার্কেটে আগুন লাগে। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন জানান, অগ্নিকা-ের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। ভোর পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সকাল সাড়ে নয়টার সময় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জসীম জানান, আগুনে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ এখনো নিরুপণ করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে একটি কমিটি গঠন করবে ফায়ার সার্ভিস। উক্ত কমিটি ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিবেন। তবে ব্যবসায়ীদের ধারনা আগুনে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, আগুনে জালালাবাদ মার্কেটের ১০৭টি এবং জহুর হকার্স মার্কেটের ২৫টি দোকান পুড়ে যাবার তথ্য তারা পেয়েছেন। এরমধ্যে নারীপুরুষ ও শিশুর বিভিন্ন পোশাকের দোকান, কম্বলের গুদাম এবং ছোট টেইলারিং কারখানা আছে। এদিকে আগুন লাগার খবর পেয়েই দুটি মার্কেটের সব প্রবেশপথ ঘিরে রাখা হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মী এবং প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অতীতেও এসব মার্কেটে অগ্নিকা- হয়েছে। প্রতিবারই আগুনের সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতকারীরা লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। এবার আমরা লুটপাট যাতে না হয়, সেজন্য সতর্ক ছিলাম।

ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা এবং অপ্রশস্ত সড়কের কারণে শাহ জালালাবাদ মার্কেট ও জহুর হকার মার্কেটে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সাথে দুই মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতা এবং সাধারণ ব্যবসায়ীরাও তা স্বীকার করেছেন। পরীর পাহাড়ের পশ্চিম পাশে আদালত ভবনের সীমানা দেয়াল ঘেঁষে টিনশেড আধাপাকা শাহ জালালাবাদ মার্কেট। এর সাথে লাগোয়া পৌর জহুর হর্কাস মার্কেট। দুই বিপণিকেন্দ্রের মাঝে শুধু একটি দেয়াল। দুটো বিপণিকেন্দ্রেই আধাপাকা কাঠামোর ওপর দুইতলা গুদাম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ওপরের অংশ টিনের ছাউনি দেওয়া। শনিবার ভোর পৌনে চারটায় লাগা আগুন ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের ১৯টি গাড়ি নিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। ১৯টি গাড়িতে থাকা পানি ব্যবহারের পর সংলগ্ন দুটি মসজিদের ট্যাংক এবং সবশেষে অদূরে লালদিঘি থেকে পানি এনে আগুন নেভানো হয়। জালালাবাদ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে সবগুলো দোকানের দুই তলার ছাদ টিনের আর একটার সাথে অন্যটা লাগানো। টিনের নিচে আছে বোর্ড। এতে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। মার্কেটটির গলিগুলোর প্রশস্ততা ছয় থেকে আট ফুট। বিকালে এসব গলিতে পুড়ে যাওয়া কম্বল, শীতের পোশাক, টিশার্টের কাপড়, সেলাই মেশিন এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির অংশ জড়ো করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দীন বলেন, সেখানে আমাদের গাড়িগুলো ঢোকার সুযোগ নেই। তাই পার্শ্ববর্তী অন্য দোকানের ছাদে দাঁড়িয়ে পানি ছিটাতে হয়েছে। এসব অননুমোদিত কাঠামো। নিচে হয়ত সেমিপাকা, ওপরে টিনের দোতলা। কোথাও কোথাও কাঠের কাঠামোও আছে। দেয়ালে কোনো আস্তরণ নেই। বৈদ্যুতিক লাইন এলোমেলোভাবে টানা। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাঠামোগুলো।

মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত হওয়ায় মার্কেটের দোকান ও গুদামগুলোতে লোকজন তেমন ছিল না। শাহ আলম নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, বৃহস্পতিবার তিনি শীতের পোশাকসহ বিভিন্ন রকমের দুই টন কাপড় তুলেছিলেন, এর প্রায় সবই পুড়ে গেছে। মোহাম্মদ তারিকুল নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, সবশেষ দেড় টন টি শার্টের কাপড় তুলেছিলাম। সেগুলো সোমবার ডেলিভারি দেওয়ার কথা। সব শেষ হয়ে গেল। শাহ জালালাবাদ মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি কাজী আবদুল আজিজ বলেন, ৮০-৮৫টি প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা মেয়র ও জেলা প্রশাসককে দিয়েছি। এখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার মত রাস্তা নেই। খবর পেয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসেছে। কিন্তু আগুন ছড়িয়ে পড়ায় নিয়ন্ত্রণে সময় লেগেছে।

জালালাবাদ মার্কেট সংলগ্ন পৌর জহুর হর্কাস মার্কেটের ২৫টি দোকান আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেন ওই মার্কেটটির ব্যবসায়ী সমিতির সংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল আমিন। তিনি বলেন, এখানে ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢোকানো যায় না। আমাদের কাঠামোগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছরের শুরুতে ফায়ার সার্ভিস নগরীর যে ৪৩টি বিপণিকেন্দ্রকে ঝুঁকিপুর্ণ ঘোষণা করেছিল তার মধ্যে জহুর হকার্স মার্কেটও আছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন বলেন, আগেও একবার জহুর হকার্স মার্কেটে আগুন লাগার পর যেসব সুপারিশ দিয়েছিলাম তার কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। এই দুই বিপণিকেন্দ্রে অগ্নি নির্বাপণের কোনো সরঞ্জাম নেই, এমনকি ফায়ার লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। আমাদের প্রাণান্ত চেষ্টায় আজ প্রাণহানি হয়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারত।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ