আর্ন্তজাতিক কন্যা শিশু দিবস ”২০১৯ উদযাপন করেছে আর্ন্তজাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি উইমেন । এই উপলক্ষে ১১ অক্টোবর,২০১৯ এইউডব্লিও রুফটপ কনফারেন্স হলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের স্টুডেন্ট গর্ভনমেন্ট এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিমা আবদুল্লা’র সঞ্চালনায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এইউডব্লিও রেজিষ্ট্রার ড.ডেভ ডোল্যান্ড । অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের ফিল্ড অফিস প্রধান মাধুরী ব্যানার্জী । তিনি তাহার বক্তব্যে বাংলাদেশের কন্যা শিশুদের ও বাল্যবিবাহের চিত্র তোলে ধরেন । পাশাপাশি বাল্য বিবাহের ঝুকির বিষয় গুলি সবার সামনে তোলে ধরেন । তিনি বলেন “ সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমাদের মেয়েদের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে । কেননা মেয়েদের জন্য বিনিয়োগ মানে একটি ভাল ও শ্রেষ্ট ভবিষ্যতের পেছনে বিনিয়োগ করা”। এরপর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের প্রাক্তন ছাত্রী ও বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কর্মরত অক্সফাম এর সিনিয়র পাবলিক হেলথ প্রমোশন অফিসার মৌরি রহমান রোহিঙ্গা শরনার্থীদের বাল্য বিবাহের ঝুকি ও ভয়াবহতা সম্পর্কে তোলে ধরেন । এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের দুইজন বর্তমান শিক্ষার্থী তাদের উদ্দোক্তা হওয়ার বিষয়ে তাদের স্টার্টআপ কার্জক্রম সম্পর্কে সবাইকে অবগত করেন ।
জাতিসংঘ ২০১২ সাল হতে ১১ অক্টোবর আর্ন্তজাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করে আসছে । তারই ধারাবাহিকতায় এই দিবসের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লিংগ বৈষম্য দূর করা। প্রতিবছর এটির একটি প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে । আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘কন্যা শিশুর অগ্রযাত্রা, দেশের জন্য নতুন মাত্রা’ । এরই উপর ভিত্তি করে “কন্যা সন্তানদের বাল্য বিবাহ ”শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় । এতে মডারেটর করেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ছাত্রী শ্রাবস্তী রায় নাথ । এতে অংশগ্রহন করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চট্টগ্রামের (সংরক্ষিত) মাননীয় সাংসদ এবং শিশু অধিকার বিষয়ক পার্লামেন্টারী ককাসের সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান,ইনার হুইল ক্লাব চট্টগ্রামের প্রেসিডেন্ট এবং মেরিস্টোপস্ ক্লিনিক সোসাইটি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রতিষ্টাতা চেয়ারপার্সন প্রফেসর রেহেনা আলম খান, ইউসেপ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পারভীন মাহমুদ এফসিএ এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের জেন্ডার স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক শেহরিন শাহজাহান নাওমী ।
আলোচনায় ইনার হুইল ক্লাব চট্টগ্রামের প্রেসিডেন্ট এবং মেরিস্টোপস্ ক্লিনিক সোসাইটি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রতিষ্টাতা চেয়ারপার্সন প্রফেসর রেহেনা আলম খান অল্প বয়সী মেয়েদের বাল্য বিবাহের কারণে তাদের শারীরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুকির ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোকপাত করেন । ইউসেপ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পারভীন মাহমুদ এফসিএ বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ দারিদ্রতার ভূমিকা বিষয়ে সবার সামনে তোলে ধরেন । পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে অন্যতম পাথেয় বা মুক্তির বাহক হিসেবে ভোকেশনাল প্রশিক্ষন বা জীবন ও কর্মমূখী শিক্ষা গ্রহনের জন্য আহবান জানান । এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের জেন্ডার স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক শেহরিন শাহজাহান নাওমী বলেন মেয়েদের বাল্য বিবাহের জন্য সামাজিক ও স্বাংস্কৃতিক ভূমিকা ও অন্যতম কারণ ।তাই আমাদেরকে অভ্যাসগত পরিবর্তনে সচেতন হতে হবে । সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চট্টগ্রামের (সংরক্ষিত) মাননীয় সাংসদ এবং শিশু অধিকার বিষয়ক পার্লামেন্টারী ককাসের সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের গৃহিত বিভিন্ন কার্যক্রম সবার সামনে তোলে ধরেন । বিশেষ করে শিশু সুরক্ষা ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে ১০৯ ও ৯৯৯ হেল্প লাইনের ভূমিকা সম্পর্কে সবাইকে অবগত করেন । তিনি বলেন “আমাদের মেয়ে সন্তানদের গুরুত্বের বিষয়ে আমাদের পরিবার থেকে অনুধাবন শুরু করতে হবে,তারপর সমাজ এবং তারপর দেশ করবে । যুবতী মেয়েদেরকে বিভিন্ন রিসোর্স এর মাধ্যমে সচেতন করতে হবে । পাশাপাশি নিজেদেরকেও সচেতনতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহন করতে হবে। আর সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে সুরক্ষার ক্ষেত্র নিশ্চিত হবে ।অনুষ্টানের ২য় পর্বে কানেক্টহারের সহযোগিতায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে নির্মিত স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচিত্র প্রদশিত হয় । এতে মডারেটরের দায়িত্বপালন করেন প্রফেসর টিফিনি কোণ॥
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে এশিয়ার পিছিয়ে পড়া ও ঝুকিঁর মধ্যে বসবাসকারী ২০টি দেশের মেয়েরা লেখাপড়া করে । যাদের মধ্যে বেশীর ভাগই হলো পরিবারের ১ম সন্তান যে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে এবং উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করছে । আর্ন্তজাতিক কন্যা শিশু দিবসকে সামনে রেখে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও কমিউনিটি সার্ভিসের মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকারে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি উইমেনের স্থায়ী ক্যাম্পাস আরেফিন নগর, বায়েজিদে চালু করেছে এইউডব্লিও-কমিউনিটি বেইজড্ লার্নিং সেন্টার ফর গার্লস । এই সেন্টারের মাধ্যমে আরেফিন নগর ,বায়েজিদ এলাকায় বসবাসকারী গার্মেন্টস শ্রমিক ও সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষ ও তাদের কন্যা সন্তানদের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের তত্তাবধানে স্পোকেন ইংলিশ,বেসিক ইংলিশ,বেসিক সায়েন্স,বেসিক ম্যাথ,জীবন দক্ষতা ,আইসিটি সহ জীবনমান ও জ্ঞান দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে । এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের শিক্ষার্থীরা সেখানে সেচ্ছাসেবী হিসেবে তাদের সাপ্তাহিক ছুটির সময় তাদেরকে সহযোগিতা করবে । এই সেন্টার মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মেয়ে সন্তানদের প্রশিক্ষিত ও ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখবে। এইউডব্লিও-কমিউনিটি বেইজড্ লার্নিং সেন্টার ফর গার্লস এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হোস্ট কমিউনিটির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে, পাশাপাশি তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অবদান রাখতে পারবে ।