শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়কৌশলগত অবস্থানের কারণে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে :

কৌশলগত অবস্থানের কারণে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে :

কানেকটিভির সুযোগ নিয়ে চার বিলিয়ন মানুষের বিশাল বাজার ধরতে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা করতে ভারতীয় বড় বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৪ অক্টোবর দুপুরে নয়াদিল্লির আইসিটি মৌর্য হোটেলে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্বোধনী সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কৌশলগত অবস্থানের কারণে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমে ভারত, উত্তরে চীন ও পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাঝখানে বাংলাদেশ চার বিলিয়ন মানুষের বিশাল একটা বাজার।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের, বিশেষ করে ভারতীয় বড় বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা একই সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চাই। ইন্ডিয়ার বড় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে কলকারখানা স্থাপন করতে পারে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার (কানেকটিভিটি) সুবিধা নিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করতে পারে।

বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতি সবচেয়ে উদার। বৈদেশিক বিনিয়োগ সুরক্ষায় আইন, উদার ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড়, প্রস্থান করার সময় লভ্যাংশ এবং মূলধনের সম্পূর্ণ প্রত্যাবাসন সুযোগসহ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও বহু সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের লাগাতার প্রবৃদ্ধি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আস্থা বৃদ্ধির প্রতিফলন।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশে একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। এগুলোর মধ্যে ডজনখানেক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত হয়েছে, যার মধ্যে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তিনটি দেশের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি হাই-টেক পার্কও প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট রাখার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোংলা, ভেড়ামারা ও মিরসরাইয়ে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের বড় বিনিয়োগ বাংলাদেশের রপ্তানি ভিতকে আরও প্রশস্ত করতে সহায়তা করবে।

বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যকার সুসম্পর্কের সুযোগ লুফে নিতে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারত সবচেয়ে ভালো সুসম্পর্ক উপভোগ করছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের প্রচেষ্টায় সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমি এই প্ল্যাটফর্মটির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং দু’দেশের জনগণের স্বার্থে দু’দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার আহ্বান জানাই। এভাবে আমরা আমাদের দেশ ও অঞ্চলকে আরও সমৃদ্ধ এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত রাখতে পারি।

দুই দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত, দু’দেশের বিনিয়োগ বাড়ছে। বিগত বছরগুলোতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। বাণিজ্য ভারসাম্য এখানও ভারতের অনুকূলে।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো। ৮.৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশ ভারতের অষ্টম বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। গেলো বছর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ভারতে এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানিসীমা অতিক্রম করে। সুতরাং অগ্রগতি দৃশ্যমান, কিন্তু বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও গভীর করার আরও অনেক সুযোগ রয়েছে।

প্রতিবেশী দেশে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জানি বিশ্বের বেশির ভাগ বিকাশমান অর্থনীতির দেশ প্রতিবেশী দেশগুলোতে তাদের প্রাথমিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রকল্প নিয়েছে। ভারতের ব্যবসায়ী নেতারাও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

পারস্পরিক সুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলো শনাক্ত করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বদা বিশ্বাস করি, যেকোনো সফল উদ্যোগের জন্য রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীদের নেতাদের অবশ্যই একত্রে কাজ করতে হবে এবং চ্যালেঞ্জ চিহ্নিতকরণ প্রাধান্য দিয়ে আইডিয়া ও চিন্তাগুলোকে শেয়ার করতে হবে।

আগামী দিনগুলোতে দু’দেশের সম্পর্ক আরও উঁচুতে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সর্বকালের সর্বোচ্চ ‌পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেটাকে প্রধানমন্ত্রী মোদীজি ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গভীর ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ (প্রতিবন্ধকতা) সত্ত্বেও ‘পারস্পরিক স্বার্থ’ এবং অভিন্ন ভবিষ্যৎ নীতির ভিত্তিতে আমরা আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী ও সুসংহত করতে সক্ষম হয়েছি। নিরাপত্তা, জ্বালানি, কানেকটিভিটি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, সংস্কৃতি, জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগসহ সবক্ষেত্রে দু’দেশের সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে।

অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং বাংলাদেশ ‘উন্নয়ন মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশগুলো অন্যতম। দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক, তৃতীয় বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ, চতুর্থ বৃহত্তম স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনকারী, চতুর্থ বৃহত্তম ধান এবং অষ্টম বৃহত্তম রেমিট্যান্স উপার্জনকারী দেশ।

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে আমাদের গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ, যা গত বছর ৮ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হবে আশা করছি।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০০৬ সালে ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে সাড়ে তিনগুণ বেড়ে ২০১৯ সালে মাথাপিছু আয় প্রায় ২ হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীত হওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হওয়া, ২০০৫-০৬ সাল থেকে রপ্তানি তিনগুণ বেড়ে ২০১৮-১৯ সালে ৪০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়ার উন্নীত হওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারস এর পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৯তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

তিনি বলেন, এই অর্জন প্রমাণ করে এখানে শক্তিশালী নেতৃত্ব, সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালী ম্যাক্রোইকোনোমি নীতি রয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ এবং টেক-মাহিন্দ্রা; বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন্‌স অথরিটি এবং আদানি পোর্টস ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে দু’টি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ভারতের শিল্প ও রেলপথমন্ত্রী পিযূষ গয়াল, বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, অ্যসোসিয়েটেড চেম্বারস অব কমার্স অব ইন্ডিয়ার (অ্যাসোচাম) সভাপতি বালকৃষাণ গোয়েঙ্কা, ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট সন্দীপ সোমানি, কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট বিক্রম এস কিরলোসকারসহ দু’দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বাংলাদেশের অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ