শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনপ্রশাসনের নজরদারি নিরবতায় ট্যানারী মালিক ও আড়তদারদের সাজানো কারসাজি ও সিন্ডিকেটের ...

প্রশাসনের নজরদারি নিরবতায় ট্যানারী মালিক ও আড়তদারদের সাজানো কারসাজি ও সিন্ডিকেটের কারনে চামড়ার সংকট, শাস্তি দাবি : ক্যাব

কাঁচা চামড়ার প্রকৃত মূল্য প্রাপ্তিতে বাঁধা সৃষ্ঠি, দেশীয় চামড়া শিল্পকে গুটিকয়েক ট্যানারী মালিকদের নিয়ন্ত্রণে নেবার ধারাবাহিক ষডযন্ত্র, স্থানীয় প্রশাসনকে নিরব রাখার কৌশলের কারনে ট্যানারী মালিক ও আড়তদারা পরস্পকে দোষারূপ করে চামড়া শিল্পে নজিবিহীন ধস নেমেছে। সরকার ট্যানারী মালিকদের বিপুল পরিমান ব্যাংক ঋন দিলেও তাঁরা আড়তদারদের কোন অর্থ প্রদান করেনি। আর আড়তদারদের বিপুল বকেয়া বিষয়ে তাঁরা এই বকেয়া আদায়ে কোন আইনী বা প্রশাসনিক প্রতিকার চায়নি। বিষয়টি অনেকটাই সাজানো গেম ছাড়া কিছু নয়। ফলে বিপুল পরিমান কাঁচা চামড়া অবিক্রিত থেকে গেছে, অনেকেই দাম না পেয়ে রাস্তায় ও ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারী এতিমখানা ও মাদ্রসাগুলির আয়ের একটি বড় অংশ চামড়া সংগ্রহ ও বিক্রি। ট্যানারী মালিক ও আড়তদারদের এ চক্রান্তের কারনে গরীব ও মিসকিন ও এতিমের হক ধবংসের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প মারাত্মক হুমকির মূখে পড়তে যাচ্ছে। তাই চামড়ার প্রকৃত মূল্য নিশ্চিত করতে কাঁচা চামড়া রূপ্তানির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে চামড়া রূপ্তানী হলে ট্যানারী মালিকদের কর্তৃত্ব ছাড়া সরকারী উদ্যোগে চামড়া রূপ্তানী করা এবং চামড়ার কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ।

পবিত্র কোরবানীতে ভয়াবহ চামড়া সংকটে সৃষ্ঠ জঠিলতায় ১৭ আগষ্ঠ ২০১৯ইং এক জরুরী সভায় উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়। ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চান্দগাঁও সভাপতি মোঃ জানে আলম, ক্যাব পাঁচলাইশের যুগ্ন সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব চান্দগাঁও সহ-সভাপতি সেলিম সাজ্জাদ প্রমুখ।

বক্তাগন অভিযোগ করে বলেন ব্যবসায়ী সে-যে পণ্য বা সেবার হোক না কেন, তাদের সকলেরই আচার-আচরণ একটাই-তাঁরা জনগনকে জিম্মি করে মানুষের পকেট কাটবে। তারই ধারাবাহিকতায় ট্যানারী মালিকরা আড়তদারদের দোষারূপ করছে, আর আড়তদাররা ট্যানারী মালিকদের দোষারূপ করছে। বিষয়টি অনেকটাই সাজানো গেম। যা পবিত্র রমজান ও পুজা-পার্বনের সময় দেখা যায়। পাইকারী বিক্রেতারা খুচরাদের দোষারূপ করে, আর পাইকারীরা খুচরাদের উপর দোষ চাপায়। মধ্যখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজারে আগুনে পুড়ে মানুষ সর্বশান্ত হয়।

বক্তাগন আরও অভিযোগ করে বলেন সিটিকর্পোরেশন, পৌরসভা, স্থানীয় প্রশাসন, প্রাণী সম্পদ অফিস ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগে দেশীয় গবাদি পশু দিয়ে কোরবানীর নিশ্চিত করতে সফল হলেও চামড়ার প্রকৃত মূল্য নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নিরব ছিলেন। তাদের নিরবতার সুযোগে ব্যবসায়ীরা সাধারন জনগনকে চামড়ার প্রকৃত মূল্য প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতার সুযোগ পায়।

অন্যদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চামড়া ক্রয়ের জন্য বিপুল পরিমান ঋন প্রদান করলেও গার্মেন্টসসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ন্যায় চামড়ার ব্যবসায়ীরাও পুরো টাকাগুলি লুটপাটের উদ্দেশ্যে চামড়া ক্রয়ে বিনিয়োগ না করে দেশে বিদেশে গাড়ী, বাড়ী ও ভোগ-বিলাসে খরচ করেন। আর সরকার যখন কাঁচা চামড়ার রূপ্তানীর ঘোষনা দিলেন তাঁরা তার বিরোধীতা করে এ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে নানা নীল নকসা প্রণয়ণে ব্যস্ত। তাই গুটিকয়েট সিন্ডিকেটের হাত থেকে চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে না পারলে এ ধরনের বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হবে না। অন্যদিকে ভোক্তাদের ছাড়া ব্যবসায়িক নীতি নির্ধারনে সরকার ও ব্যবসায়ীদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা দেনদরারের ফায়সালা ছাড়া কিছু নয় এবং এ ধরনের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বন্ধ করে সকল নীতি প্রণয়ণে ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না হলে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী গোষ্ঠি সব সময় ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর সরকারের লক্ষ্য থাকা উচিত কম শক্তিশালীদের হাতকে সহযোগিতা করা। কিন্তু বর্তমান প্রচলিত বানিজ্য নীতিতে মুষ্টিমেয় গুটিকয়েককেই সব সময় সুবিধা দেয়া হয়, যার কারনে দেশে ন্যায্য ব্যবসার পরিবেশ বারংবার প্রতিবন্ধকতা সম্মুখীন হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ