শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদখেলার সময়চট্টগ্রামে সাকিবের বর্ণিল সংবর্ধনায়

চট্টগ্রামে সাকিবের বর্ণিল সংবর্ধনায়

স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারো ভক্ত তখনও অপেক্ষায় সাকিবের বক্তব্য শুনতে। এমনিতে মৃদুভাষী সাকিব আল হাসান সালাম দিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন। সাকিব তাঁর বক্তব্যে জানান, চট্টগ্রাম আমার খুব প্রিয় শহর। সেই ন্যাশনাল লিগ খেলতে আসতাম তখন থেকে খুব এনজয় করতাম চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রামের মেজবানি মাংস আর কালো ভুনা আমার খুবই প্রিয়। আমি চট্টগ্রামবাসীর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। তাঁরা আমাকে সম্মানিত করেছেন। এই চট্টগ্রামের মাটিতেই আমার টেস্ট অভিষেক হয়েছিল। তাই সময় সুযোগ পেলেই চট্টগ্রাম আসি। আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।sakib-al-hasan-chittagong-3

আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাকিব বলেন, আজকে আমার হাতে নগর চাবি তুলে দিয়ে আমাকে সম্মানিত করায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও আলী আব্বাসকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করবো অন্যান্য বিভাগও এভাবে বিভিন্ন খেলোয়াড়দের সংবর্ধিত করবে। তাতে খেলোয়াড়দের আরও দায়বদ্ধতা বাড়বে। আমি চাই, ভবিষ্যতে চট্টগ্রামেরই কোন ক্রিকেটারের হাতে এই নগর চাবি উঠুক।

সাকিব এরপর প্রায় আধাঘণ্টা ধরে খুদে ক্রিকেটারদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি উঠতি খেলোয়াড়দের বিভিন্ন উপদেশ-পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, ‘সবার আগে নিজের পড়ালেখা ঠিক রাখতে হবে, মা-বাবার কথা শুনতে হবে, নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে এবং অনেক বেশি শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাফল্যর জন্য কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। কোন স্বপ্ন দেখলে সেই স্বপ্ন পূরণে লেগে থাকতে হবে, শুধু স্বপ্ন দেখতে থাকলেই চলবে না।

মনের টানে চট্টগ্রামে সাকিব। বিশ্বকাপের টানা ব্যস্ততা শেষে পরিবারকে নিয়ে ইউরোপ ভ্রমণের পর মাত্র একদিন আগেই দেশে আসেন সাকিব। কয়েকদিন পর মাকে নিয়ে যাবেন হজ করতে। এতো ব্যস্ততার পরও সাকিব চট্টগ্রামের ডাকে সাড়া দেওয়ায় পুরো চট্টগ্রামবাসী সাকিবের প্রতি কৃতজ্ঞ।’ সিটি মেয়র, বিসিবি সহসভাপতি ও সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন সাকিবের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাকিবকে নিয়ে কথাগুলো বলেন।

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) ক্রিকেট কমিটির উদ্যোগে ও সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক সহযোগিতায় ৩০ জুলাই বিকেলে চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপে অনন্য ধারাবাহিক পারফর্ম করা সাকিব আল হাসানকে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনার আয়োজন করে। বিশ্বকাপের নয় ম্যাচের মধ্যে আট ম্যাচে (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছিল) ব্যাট হাতে নেমে সাত ম্যাচেই নিজের ইনিংসকে নিয়ে গেছেন পঞ্চাশোর্ধে। এর মধ্যে ছিল দুটি নান্দনিক শতক। টুর্নামেন্টে করেছেন তৃতীয় সর্বেোচ্চ ৬০৬ রান। এক বিশ্বকাপে ৬০৬ রান, ১১ উইকেট। কোনো একটি বিশ্বকাপে কমপক্ষে ১০ উইকেট আর ন্যূনতম পাঁচশোর বেশি রান করতে পারেননি দুনিয়ার আর কোনো ক্রিকেটার। তাই সংবর্ধনায় দেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সাকিবের হাতে নগর চাবি তুলে দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘সাকিবের সঙ্গে দীর্ঘদিন মেশার কারণে বুঝেছি চট্টগ্রামের প্রতি, চট্টগ্রামের মানুষের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা আছে। চট্টগ্রামকে তিনি নিজের এলাকায়ই মনে করেন। দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে বিশ্ব বরেণ্য এ ক্রিকেটারকে ‘নগর চাবি’ দেয়া হচ্ছে। তাকে সম্মানিত করে চট্টগ্রামবাসীই সম্মানিত হলো।’

মেয়র আরও বলেন, ‘কোটি ক্রিকেট ভক্তের মতো খুদে ক্রিকেটারদের কাছেও সাকিব স্বপ্নপুরুষ। তাকে কাছে পেলে খুদে ক্রিকেটাররা অনুপ্রাণিত হবে। এ জন্য এ অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে চট্টগ্রামের খুদে ক্রিকেটারদের কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। যাতে চট্টগ্রাম থেকে সাকিব, তামিম বা মাশরাফির মতো মানের ক্রিকেটার উঠে আসে।’

সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক ও সিজেকেএস ক্রিকেট কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আলী আব্বাস বলেন, ক্রীড়াবান্ধব মেয়র হিসেবে পরিচিত পাওয়া চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সার্বিক সহায়তার কারণেই সাকিবকে সম্মানিত করার মতো অসাধারণ একটি আয়োজন আমরা করতে পেরেছি। এ জন্য তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু হাসান সিদ্দিক বলেন, সাকিবের কারণেই সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ পরিচিত। সাকিব আমাদের কাছে শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনিই আমাদের বাংলাদেশ। তার মতো ব্যক্তিকে সম্মানিত করতে পেরে আমরা সম্মানিত হলাম। তাকে কাছে পেয়ে এখানকার তরুণরাও অনুপ্রাণিত হবে।

সংবর্ধনা হওয়ার কথা ছিল বিকেল চারটায়। কিন্তু বিকেল তিনটার আগেই পুরো স্টেডিয়াম এলাকা ঘিরে লোকে লোকারণ্য। লালখানবাজার থেকে শুরু করে কাজীরদেউড়ি পর্যন্ত সড়কের দুপাশে সাকিবের সংবর্ধনাকে ঘিরে বিলবোর্ড আর বিলবোর্ড। স্টেডিয়ামের গেইট দিয়ে ঢুকতেই হাজারো খুদে ক্রিকেটারদের মিলনমেলা। পুলিশের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার বেস্টনি পাড়ি দিয়ে একে একে ঢুকে পড়েন স্টেডিয়ামে। নানান রঙের ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘সাকিব, সাকিব’ বলে গগণবিদারী চিৎকার। সবাই সাকিবের অপেক্ষায়। ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে হাজারো ভক্তের ভিড় ঠেলে সাকিবকে নিয়ে সংবর্ধনা মঞ্চে আসেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক আলী আব্বাসসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

প্রথমেই সাকিবকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন সিজেকেএস ক্রিকেট কমিটির যুগ্ম সম্পাদক জিএম হাসান। মেয়রের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন ক্রিকেট কমিটির আরেক যুগ্ম সম্পাদক শওকত হোসাইন। ক্রিকেট কমিটির সম্পাদক আব্দুল হান্নান আকবরের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাকিবের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।

এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাবেক বিসিবি পরিচালক, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজুদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি আলী আব্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সিজেকেএস সহসভাপতি মো. আবু হাসানি সিদ্দিক। বক্তব্য শেষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে সাকিবের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের নেতৃত্বে প্রেসক্লাবের কর্মকর্তারা। সিজেকেএস ক্রিকেট কমিটির পক্ষ থেকে সাকিবের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন ক্রিকেট সম্পাদক আব্দুল হান্নান আকবরের নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট কমিটি।

সংবর্ধনার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ‘নগর চাবি’ তুলে দেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এই সময় তাঁর সাথে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, প্যানেল মেয়র নেছার আহমেদ মনজু, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ