শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপদুই পার্বত্য জেলার সঙ্গে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ

দুই পার্বত্য জেলার সঙ্গে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ

ভারী বর্ষণ ও পাহাড় ধসের কারণে রাঙামাটি ও বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সড়ক যোগযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ওই দুই জেলার মানুষদের। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যাওয়ার পথে কেরাণীহাটের বাজালিয়া এলাকার রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় ৯ জুলাই সকাল থেকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। চার দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এমন পরিস্তিতির সৃষ্টি হয়েছে। ০৬ জুলাই সকাল থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বড়দুয়ারা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কোমর পানিতে তলিয়ে যায় বেশ কয়েকটি সড়ক। এতে সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এছাড়া গত ০৮ জুলাই বান্দরবান-রুমা ও থানচি সড়কের কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় বান্দরবান-থানছি সড়কে যান চলাচল করতে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছে যানবাহন মালিক সমিতি। বান্দরবান বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঝন্টু দাশ জানান, বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হওয়ায় সাময়িক ভাবে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তা হতে পানি সরে গেলে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে বলেও জানান তিনি। বান্দরবান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন জানান, বান্দরবান-রুমা ও থানচি সড়কের ৯ মাইল এলাকায় সেনাবাহিনী, দমকল বাহিনী ও স্থানীয় লোকজন যান চলাচলের উপযোগী করার জন্য কাজ চালাচ্ছে।

এদিকে সাঙ্গু নদীর পানি বিদপসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় থানচির কয়েকটি পর্যটন স্পটে প্রায় ৩০ জন পর্যটক আটকা পড়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে তারা নিরাপদে রয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে রুমা ও থানচির বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকদের ভ্রমণের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছে স্থানীয় প্রশাসন।

অন্যদিকে ভারী বর্ষণের কারণে জেলা শহর ও আশেপাশের কয়েকটি এলাকায় ছোটখাট পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনো প্রাণহানি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লামা উপজেলা বাজারে নদীর পানি প্রবেশ করেছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত দু;দিন থেকে বান্দরবান শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত লোকজনদের সরে যেতে প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। তাছাড়া জেলার ৭টি উপজেলায় সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম জানান, প্রতিটি উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংসহ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাহাড়ি এলাকা হতে লোকজনদের সরে যেতে বেশ কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর আগে সোমবার বিকেল থেকে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির সঙ্গে চট্টগ্রামের সড়ক পথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে লংগদু ও খাগড়াছড়ির মেরুং-দীঘিনালার আভ্যন্তরীণ সড়ক ডুবে গেছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত পানি না বাড়লেও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানা গেছে। নতুন করে আর কোনো পাহাড় ধসে ঘটনা না ঘটলেও আতঙ্কে রয়েছে পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দারা। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন পাহাড়ি এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিং করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লংগদু উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের বামেছড়া মোড় ও মুরব্বি ক্লাব সংলগ্ন জায়গায় পাহাড়ের মাটি ধসে সড়কের ওপর এসে পড়েছে। অপরদিকে, তেঁতুলতলা এলাকায় বন্যার পানিতে সড়ক ডুবে সোমবার থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান চলাচল। শান্তি পরিবহনের লংগদুর বাইট্টাপাড়া স্টেশনের টিকিট কাউন্টার কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বাবু জানান, হ্রদের পানি বাড়ায় ও পাহাড় ধসে সোমবার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে মঙ্গলবারও লংগদু ও মেরুং-দীঘিনালার অভ্যন্তরীণ সড়ক দিয়ে ছেড়ে যায়নি কোনো দূরপাল্লার যানবাহন বা কোনো স্টেশনেও আসেনি যানবাহন।

লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) প্রবীর কুমার রায় জানান, বৃষ্টি কমলেই এলাকাবাসীদের নিয়ে সড়ক থেকে মাটি সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। পাহাড়ের আশপাশে বসবাসরত সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ