শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস

জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। এ বাজেট আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। ৩০ জুন জাতীয় সংসদে ‘২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরের কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল হতে র্অথ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণ বিল’ পাসের মাধ্যমে এই বাজেট গৃহীত হয়।

গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক এ বাজেট উথাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তার পক্ষে বাজেট বক্তৃতার একাংশ পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীরা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উথাপন করেন। দাবিগুলো সরকারি দলের সদস্যের কণ্ঠভোটে পাস হয়। ৪৮৪টি ছাঁটাই প্রস্তাবের মধ্যে ৪টি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের উপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবে বিরোধীদলের সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়। তারপর সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৯ পাসের মাধ্যমে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন। বিলটি উথাপন ও পাস করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর সরকারের এই মেয়াদের প্রথম বাজেট এটি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালেরও ঘোষিত প্রথম বাজেট এটি। গত অর্থবছরের মতো এবারও বিরোধীদলের সদস্যরা বাজেট আলোচনায় অংশ নেন। গত ১৩ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অন্যান্য মন্ত্রীসহ সরকারি-বিরোধীদলের সদস্যরা সম্পূরক বাজেট ও মূল বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।

নতুন অর্থবছরের জন্য পাস হওয়া ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট বিদায়ী ২০১৮-১৯ র্অথবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। নতুন বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির ধরা হয়েছে ৫ দশমকি ৫ শতাংশ। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী র্অথবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজটেরে চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।

নতুন বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। ভ্যাট থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করা হবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। বাজেটে জিডিপির ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫ শতাংশ।

বাজেটে অর্থ বিভাগের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। ব্যয়ের দিক থেকে সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে, ২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ ৩২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে ৩৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় খাতে ৩ হাজার ৫২৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং জাতীয় সংসদ খাতে ৩২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৪১ কোটি টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৯৪১ কোটি, সরকারি কর্মকমিশন খাতে ১০২ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে। অর্থ বিভাগ, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয় খাতে ২৩৮ কোটি ২২ লাখ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ২ হাজার ৮৯৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ৩ হাজার ৪১ কোটি ৫৬ লাখ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ খাতে ১৬ হাজার ৩২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

পাশাপাশি পরিকল্পনা বিভাগে ১ হাজার ২৩১ কোটি লাখ টাকা, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে ১৪৯ কোটি ১০ লাখ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৩৭৫ কোটি ৩৪ লাখ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ৬৩২ কোটি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৬২০ কোটি ৫৩ লাখ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ৩৮ কোটি ৩২ লাখ, আইন ও বিচার বিভাগে ১ হাজার ৬৫২ কোটি, জননিরাপত্তা বিভাগে ২১ হাজার ৯২৩ কোটি ১৭ লাখ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে ৩৫ কোটি ৩৮ লাখ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৪ হাজার ৪১ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি ৯০ লাখ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় খাতে ১৬ হাজার ৪৩৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ১৯ হাজার ৯৪৪ কোটি ৩০ লাখ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ৩৯ লাখ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৮৮১ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৭৮৪ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ৩১৩ কোটি ৪৮ লাখ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৪ লাখ, তথ্য মন্ত্রণালয়ে ৯৮৯ কোটি ১৫ লাখ এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৭৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৪৮৯ কোটি ১২ লাখ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে ২ হাজার ৪৪৯ কোটি ৪৭ লাখ, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৫৫৫ কোটি ৯১ লাখ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ৮০০ কোটি ১৬ লাখ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭৯ লাখ, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি ৪০ লাখ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৯৩২ কোটি ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয় হবে।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩১ লাখ, ভূমি মন্ত্রণালয় খাতে ১ হাজার ৯৪৩ কোটি ৮০ লাখ ৮৮ হাজার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি ৪৫ লাখ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ১৭ হাজার ১৫২ কোটি ৯৯ লাখ ৮৭ হাজার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৮৭১ কোটি ৫১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি ৮ লাখ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৬ হাজার ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৮৩২ কোটি ৭৭ লাখ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৪২৬ কোটি ৩৪ লাখ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ১৯৪ কোটি ৪৮ লাখ ৩২ হাজার, বিদ্যুৎ বিভাগে ২৬ হাজার ৬৪ কোটি ৬৯ লাখ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৪ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪৮ লাখ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ৫৯০ কোটি ৯৪ লাখ, দুর্নীতি দমন কমিশনে ১৪০ কোটি ১৭ লাখ, সেতু বিভাগে ৮ হাজার ৫৬৩ কোটি ৫৩ লাখ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ৭ হাজার ৪৫৩ কোটি ৬০ লাখ, সুরক্ষা সেবা খাতে ৩ হাজার ৬৯৪ কোটি ৯২ লাখ ২৪ হাজার এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৭৮৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ