২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ কাজের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় দশ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম এ টানেল।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকায় ৩ হাজার ৫ মিটার দীর্ঘ এ টানেল নির্মিত হচ্ছে। টানেলটি নেভাল একাডেমি পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে কাফকো ও সিইউএফএল পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে অপর প্রান্তে যাবে। নদীর তলদেশে সর্বনিম্ন ৩৬ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ ফুট গভীরে স্থাপন করা হবে দুটি টিউব। ২০২২ সালের মধ্যে এ টানেলটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা।
পতেঙ্গায় উদ্বোধন পরবর্তী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল। তিনি বেঁচে থাকলে আজ সবচেয়ে বেশি খুশী হতেন। মহিউদ্দীন চৌধুরী বলতেন কর্ণফুলী নদীর উপর ঘন ঘন ব্রিজ নির্মাণ করলে নদীর ক্ষতির হতে পারে। পলি জমে নদী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। টানেল নির্মানের জন্য তিনি আন্দোলনও করেছিলেন। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই, তিনি বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রামে ও মুক্তিযোদ্ধে তাঁর অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১০ সালে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে কর্ণফুলী টার্নেল নির্মাণের ঘোষনা দিয়েছিলাম। আজ তা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন বাংলাদেশের জন্য এ প্রকল্পে শতভাগ ঋণ সহায়তা দিয়েছে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এ টানেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এ টানেল আনোয়ারা উপজেলাকে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে যুক্ত করবে। ১০ কিলোমিটার সড়ক করা গেলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চার লেন সড়কের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে।
চট্টগ্রামে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। আরেকটি কাজ করে দিচ্ছি লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে। এটি পোর্ট সিটি। ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছু এ জায়গা থেকে হয়। চট্টগ্রামে বিশাল আকারে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। শহরে যানজট কমানোর জন্য বাইপাস করে দিচ্ছি। টানেল নির্মাণ হলে চট্টগ্রামে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়ন হবে। কক্সবাজার পর্যটন শহর। যাতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠে সে লক্ষ্যে আলাদা কর্তৃপক্ষ করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে বললাম। মামলায় বিশ্বব্যাংক কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। বিশ্বব্যাংক যা যা বলেছে সব ভুয়া, বানোয়াট। কত যে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তা আপনারা বুঝবেন না। আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। আমি নাম চাই না। জীবনে কোনো কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে এসেছি। আমার বাবা সারাটা জীবন এ দেশের জন্য কষ্ট করেছেন। আমার মাও কষ্ট করেছেন। তারা এদেশের গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন।
এ দেশের কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না। প্রতিটি মানুষ শিক্ষা পাবে। এটা বাবা চাইতেন। আমরা রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচবে এ দেশের মানুষ। দুর্ভিক্ষের দেশ বলে বদনাম ছিল। বিশ্বের বিস্ময় হবে বাংলাদেশ। ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মানুষ জানতে পারছে। এ টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রামের গোটা অঞ্চল সমৃদ্ধশালী হবে। জিডিপিতে আরও অনেক অর্জন যোগ হবে। ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাবো।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ নামে শতবর্ষের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছি। ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ। আমাদের প্রজন্ম উন্নত, সমৃদ্ধশালী দেশে তা উদযাপন করবে।
সুধী সমাবেশে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবাদুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, গৃহায়ন ও গণপুর্তমন্ত্রী শম রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুস ছালামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।