সোমবার, মে ৬, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনজিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে

জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সংলগ্ন জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে কোতোয়ালী আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব করেন। মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্য এতে সমর্থন দিয়েছেন । নীতিগত সমর্থন এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেও। তাই এই স্থাপনাটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে নব আঙ্গিকে উদ্বোধন এখন সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা। জানা গেছে, সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল এই প্রস্তাব করলে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। এর আগের দিন চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি টিম মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক পংকজ দস্তিদারের নেতৃত্বে কোতোয়ালী আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে মন্ত্রণালয়ে দেখা করে এই বিষয়ে তাদের দাবি জানান। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভায় তা উপস্থাপন করেন নওফেল।

এই প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানান, জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করা হচ্ছে। এটি চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। আমি এই আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে প্রস্তাবনা দিয়েছি। যেহেতু সবার সম্মতি আছে তাই এখন লিখিত প্রস্তাবনা দিলে হয়ে যাবে।

ব্যারিস্টার নওফেল বলেন, জিয়ার নামে স্থাপনা হওয়ায়, এই দর্শনীয় স্থানটিতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ যান না। অথচ এটিকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করে সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তর করলে এটি দেশের সম্পদে পরিণত হবে। পাশে যে শিশু পার্কটি রয়েছে সেটিকে একটি দৃষ্টি নন্দন পার্ক করারও সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান শিক্ষা উপমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই যাদুঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক স্মুতি রয়েছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের এনে নির্যাতন করা হতো। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যাও করা হয়েছিল।’ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে একটি প্রকল্প গ্রহণের অনুরোধ করেন উপ মন্ত্রী ব্যারিষটার নওফেল।
চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা জানান, যে ভবনটিকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর বানানো হয়েছে, সেটি বৃটিশ আমলে নির্মিত ভবন। সেখানে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতি নেই। ‘জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তখন এই সার্কিট হাউজে এসে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯১ সালে তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে সেটিকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর করা হয়। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের জনগন তা মেনে নেয়নি। বিভিন্ন সময়ে এটিকে ভেঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করার দাবি উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত তাই হচ্ছে। এই খবরে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা-জনতা-নানান শ্রেণি পেশার মানুষ খুশিতে উদ্বেলিত হয়ে উঠে। এই ভবনটিকে ঘিরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অনেক স্মৃতি আছে। কিন্তু তা মুছে ফেলা হয়েছে।
এই ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা সংবাদিক পংকজ দস্তিদার জানান, আমরা অনেক দিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছি-জিয়া স্মৃতি জাদুঘরটিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করা হোক। আমরা ঢাকায় গিয়ে শিক্ষা উপ মন্ত্রীকে এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছি। তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলিত হয়েছে। আমাদের মনে অনেক দিন ধরে একটি চাপা কষ্ট ছিল। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হলে সেই কষ্ট প্রশমিত হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ