বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে বিভেদ ভুলে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে বিভেদ ভুলে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে এখন আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখন আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। এ সময় বিএনপিকে শপথ নিয়ে সংসদে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ জানুয়ারি  সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, এই ঐক্যের যোগসূত্র হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতি। তিনি বলেন, বিজয়ের পর আমরা সরকার গঠন করেছি। সরকারের দৃষ্টিতে দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক সমান। আমরা সবার জন্য কাজ করব। সরকারি সেবাখাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় জীবনের সর্বত্র আইনের শাসন সমুন্নত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করব। জাতীয় সংসদ হবে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু।

তিনি বলেন, আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখে যে রায় দিয়েছেন, কথা দিচ্ছি আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব সে আস্থার প্রতিদান দিতে। এজন্য দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব, ইনশাআল্লাহ।

শেখ হাসিনা বলেন, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায় বলতে চাই:
‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ / প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, / এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি- / নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

বিএনপিকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাদশ সংসদে বিরোধীদলের সদস্য সংখ্যা নিতান্তই কম। তবে, সংখ্যা দিয়ে আমরা তাদের বিবেচনা করব না। সংখ্যা যত কমই হোক, সংসদে যে কোনো সদস্যের ন্যায্য ও যৌক্তিক প্রস্তাব/আলোচনা/সমালোচনার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। আমি বিরোধীদলের নির্বাচিত সদস্যদের শপথ নিয়ে সংসদে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছি। এ সময় তিনি দুর্নীতি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি, দুর্নীতি নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে অস্বস্তি রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের নিজেদের শোধরানোর আহ্বান জানাচ্ছি। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বড় ধরনের জয় প্রত্যাশিত ছিল মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ বছরের উন্নয়নে সাধারণ মানুষ সুফল পেয়েছে বলেই জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। এ জন্যই একাদশ সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বড় ধরনের জয় প্রত্যাশিত। ভাষণের শুরুতেই আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দল এবং নৌকার পক্ষে ও বিপক্ষের ভোটারদেরও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে বিপুলভাবে বিজয়ী করার জন্য আমি আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের বিজয়ী করেছেন আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। যারা আমাদের ভোট দেননি, আমি তাদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি; নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দল, জোট এবং প্রার্থীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য আমি নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এ সময় বিএনপির পরাজয়ের কারণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির এক আসনে ৩-৪ জন বা তারও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন, মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক বাণিজ্যের অভিযোগ এবং দুর্বল প্রার্থী মনোনয়ন, নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন-সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। নিজেরা জনগণের জন্য কী করবে, সে কথা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা ছাড়া নিজেদের সাফল্যগাথা তারা তুলে ধরতে পারেনি, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাতের দেশব্যাপী অগ্নি-সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ড সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। তিনি বলেন, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মনোনয়ন তরুণ ভোটাররা মেনে নিতে পারেনি। তরুণরা আর যাই হোক স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষ নিতে পারে না। নিরঙ্কুশ জয়ে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্ব নেতাদের অনেকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন।

এরমধ্যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট, সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিহাস গড়ে জয় পেয়েছে নৌকা। টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে আগামী পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার দায়িত্বগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে জয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন শেখ হাসিনা। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিওতে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ