শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়দেশে পৌঁছেছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ

দেশে পৌঁছেছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ

ব্যাংকক থেকে দেশে পৌঁছেছে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ‘মেঘদূত’ নামের একটি উড়োজাহাজ (ফ্লাইট নং- বিজি ০৮৯) দেশ বরেণ্য এই রাজনীতিকের মরদেহ নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছায়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা সৈয়দ আশরাফের ভাই সাফায়েত-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে মরদেহ গ্রহণ করেন। সৈয়দ আশরাফের একমাত্র মেয়ে রীমা ইসলামও এ সময় সঙ্গে ছিলেন।

সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে বিমান থেকে সৈয়দ আশরাফের কফিন নামিয়ে সেখানে কিছু সময়ের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়। এ সময় জাতীয় পতাকায় মোড়ানো হয় অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কফিন। পরে আওয়ামী লীগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ আরও দু-একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সৈয়দ আশরাফের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছয়টা ২০ মিনিটে মরদেহ বাংলাদেশ পুলিশের একটি লাশবাহী গাড়িতে তোলা হয়। সাড়ে ছয়টার দিকে মরদেহ নিয়ে সৈয়দ আশরাফের ২১ বেইলি রোডের সরকারি বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেয়া হয়।

এর আগে শনিবার বিকাল থেকেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা একে একে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। রাজনীতির মাঠে সুখে-দুঃখে যারা পাশে ছিলেন তাদের দেখা গেছে বিমানবন্দর এলাকায়। বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে বিকাল থেকেই অপেক্ষা করছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবদুল মতিন খসরু, সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপদফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম কামাল হোসেন, মারুফা আক্তার পপি, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু পঙ্কজ দেবনাথ প্রমুখ।

এদিকে মরদেহবাহী গাড়ির সঙ্গেই বেইলি রোডের বাসায় আসেন সৈয়দ আশরাফের স্বজন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়া সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধাদের আরও অনেকে। এসেছিলেন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মুকুল বোস, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু প্রমুখ।

প্রিয় মানুষটিকে একনজর দেখতে ও তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাতে ফুল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু বিপুল জনসমাগমের কারণে লাশবাহী গাড়ি থেকে মরদেহ নামানো সম্ভব হয়নি- এ কারণে দুঃখ প্রকাশ করেন সৈয়দ আশরাফের স্বজনরা। এ সময় সবাই মরদেহবাহী গাড়ির ওপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেকে সেখানে রাখা শোক বইয়ে সই করেন।

লেখেন প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে নিজের মনের কথা। ভিড় থামানোর জন্য বারবার মাইকিং করা হয়। পাশেই চলছিল পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত। এদিকে ভিড় সামাল দিতে বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবের মোড় থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। রাত নয়টায় সেখান থেকে মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

০৬ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সৈয়দ আশরাফের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর হেলিকপ্টারে মরদেহ নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে। দুপুর ১২টায় ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তৃতীয় জানাজা দুপুর ২টায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। বাদ আসর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন আদর্শবান-ত্যাগী-নিবেদিতপ্রাণ ও সর্বজনস্বীকৃত এই নেতা।

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই সৈয়দ আশরাফ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। এ অবস্থায়ই একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন সৈয়দ আশরাফ। দেশে ফিরে শপথ নিতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা আর হল না। অগণিত নেতাকর্মী আর শুভানুধ্যায়ীদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন সবার প্রিয়ভাজন সৈয়দ আশরাফ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এদিকে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর খবরের সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিমিষেই ফেসবুক পোস্টে ভাইরাল হতে থাকে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর খবর। বৃহস্পতিবার রাতেই শোক জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা। অন্যদিকে তার দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানান। শুক্রবার ও শনিবার দেশের বিভিন্ন মসজিদে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। এছাড়া অন্যান্য ধর্মের মানুষও সৈয়দ আশরাফের আত্মার শান্তি কামনায় আয়োজন করে বিশেষ প্রার্থনা সভার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ