শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনমহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণে মাটির বাসনে মেজবান পরিবেশন মনজুরের

মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণে মাটির বাসনে মেজবান পরিবেশন মনজুরের

বাংলার ঘর-গেরস্থালি জীবনে যখন প্লাস্টিক বা মেলামাইন সামগ্রী আসেনি সেসময় একমাত্র মাটির বাসন-কোসনের উপরই নির্ভরশীল ছিল বাঙালিরা। কলসি, হরা থেকে শুরু করে সমস্ত আসবাব ছিল মাটিরই তৈরি। এই মাটির আসবাব বাঙালি সমাজ জীবনের সাথে জড়িয়ে ছিল হাজার বছর ধরে। মাটির মানুষ বাঙালি এই মাটিকেই করে নিয়েছিল তার জীবন-জীবিকার অনন্য উপজীব্য। এই  মাটি বাংলা লোকাচার, লোকসাহিত্য, লোকগান তথা লোকসমাজে প্রস্ফুটিত হয়েছে নানা রঙে, নানা রূপে। কবি চন্ডীদাস গেয়েছিলেন, ‘মেরেছিস কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না।’ কোন এক পল্লী বালার বিরহ বাঁধতে গিয়ে বাউল ফকির গেয়ে উঠেছেন, ‘আমার কাঁখের কলসি গিয়াছে ভাসিয়া মাঝিরে তোর নৌকার ঢেউ লাগিয়া রে, কলসি মোর দিয়া যাও আনিয়া।

এই চট্টগ্রামে মাটির বাসন নিয়ে ধর্মীয় মিথও চালু আছে। অনেক অঞ্চলে বিশ্বাস প্রচলিত আছে, ‘মাটির হরায় খাওয়া সুন্নত। মাটির থালাকে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় হরা বলে। কাউকে মাটির হরায় খাওয়াতে পারলেও সোয়াব আছে। আজ আধুনিক জীবনে প্লাস্টিক বা মেলামাইন সামগ্রী এসেছে। চিরায়ত বাংলা গেরস্থালির মাটির জিনিস আস্তে আস্তে জায়গা করে নিয়েছে হেঁসেলের মাচাঙে। তবুও আজ লোকজ নানা কাজে মাটির আসবাব ব্যবহৃত হয়। পুরোনো ঐতিহ্যকে লালন করার মানসে অভিজাত সমাজ বা বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে আজকাল মাটির বাসনে পরিবেশনের রেওয়াজ দেখা যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগ সাবেক সভাপতি সাবেক মেয়র আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীও মাটির বাসনে সবাইকে খাওয়াতেন। তার চশমা হিলস্থ বাসভবনে আগত শুভানুধ্যায়ী, অনুসারী, নেতাকর্মীদেরকে তিনি খাওয়াতেন মাটির বাসনে।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে কেউ মাটির হরায় ভাত খাননি এমন কোন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী চট্টগ্রামে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম তার উত্তর কাট্টলীস্থ বাগানবাড়িতে আয়োজন করেছেন দোয়া মাহফিল এবং মেজবান। আর মেজবানে তিনি আমন্ত্রিতদেরকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন মাটির হরায়।

এমন ব্যবস্থাপনা দেখে অনেককে বলতে শোনা গেছে, মনজুর আলম রাজনীতিতে উঠে এসেছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় তিনি কাউন্সিলরশিপ করেন। আবার পরবর্তীতে নেতার সাথে মনজুর আলমের দ্বৈততা শুরু হয়। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিপরীতে এই মনজুর আলম বিএনপির নমিনেশনে মেয়র নির্বাচন করেন। বিপুল ভোটে তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে নগরের পিতা হন।

তবে গত মেয়র নির্বাচনে নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে পরাজিত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির উপদেষ্টা এম মনজুর আলম। পরাজিত হওয়ার পর তিনি আবার বিএনপি থেকে অব্যাহতি নেন। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই মনজুর আলম আবার সীতাকুণ্ড আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। তবে দল সীতাকুন্ড আসনে তার ভাইপো আওয়ামী লীগ সাংসদ দিদারুল আলমকেই আবার মনোনয়ন দিয়েছে।   কেউ কেউ বলাবলি করছেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাহচর্যে থাকার সুবাদে তিনি তার অনেক কিছু অনুসরণ করেন। মাটির বাসনে খাওয়ানোর এই রীতিও মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে শেখা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, সাবেক মেয়র মনজুর আলম পারিবারিক বিভিন্ন আাচার অনুষ্ঠান, ফাতেয়া বা দাওয়াতে মাটির বাসনে খাওয়ার পরিবেশন করেন। মাটির আসবাব বাঙালির কৃষ্টি কালচার। এটা আমাদের সংস্কৃতি।

দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।  এতে আরো উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড আসনের মহাজোট প্রার্থী দিদারুল আলম, প্যানেল মেয়র  ড.নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম জসিম, আবিদা আজাদ, আকবর শাহ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন, সীতাকুণ্ড থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো ইসহাক, সীতাকুণ্ড উপজেলা  আলাউদ্দিন।  অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আবদুর রহিম।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ