শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনঅবশেষে বহুল আলোচিত কাদের পরিবারের রাজনীতিতে অবসান ঘটলো!

অবশেষে বহুল আলোচিত কাদের পরিবারের রাজনীতিতে অবসান ঘটলো!

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার পুত্র সামির কাদের চৌধুরীর মনোনয়ন পত্র বাতিলের মধ্য দিয়ে অবশেষে বহুল আলোচিত কাদের পরিবারের রাজনীতিতে অবসান ঘটলো বলে মনে করছেন বিভিন্ন মহল। দীর্ঘকাল ধরে এ অঞ্চলে ছিল পরিবারটির দুর্দন্ড প্রতাপ। বিশেষ করে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি এলাকায় ছিল তাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। অর্থ-বিত্তের প্রাচুর্য, যশ, খ্যাতি ও ক্ষমতা আর নানা আচরণে এ পরিবারের পরিচিতি দেশের বাইরেও।

ফজলুল কাদের চৌধুরীর মাধ্যমে কাদের পরিবারের উত্থান। তিনি ১৯৪১ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম ষ্টুডেন্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং পাকিস্তান আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালে নির্বাচিত হন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। ১৯৬৩ সালে অধিষ্ঠিত হন তদানীন্তন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার পদে।

তবে ফজলুল কাদের চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ উত্থাপিত ছয় দফার বিরোধী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নেন।  বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর নৌকা যোগে বার্মা পালিয়ে যাবার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যু হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতার পরও ফজলুল কাদের চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার সন্তানরা সক্রিয় হয়ে উঠেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে। গড়ে তোলেন প্রচুর অর্থ-বিত্ত। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দেখা গেছে বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে। তার নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ ঘটে এনডিপি নামে বিতর্কিত একটি রাজনৈতিক দলের। চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে ছিলেন তিনি সাত মেয়াদের সংসদ সদস্য। পালন করেছেন মন্ত্রীর দায়িত্ব।  মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের  দণ্ডাদেশ অনুযায়ী তার ফাঁসি কার্যকর হয়।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর শূন্যতা পূরণ করতে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয় তার পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে প্রার্থী হিসেবে উচ্চারিত হয় হুম্মাম কাদের চৌধুরীর পাশাপাশি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীর নাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানামুখী সংকটের কারণে নির্বাচনী মাঠে তারা অনুপস্থিত।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীও আরেক আলোচিত নাম। ভাইয়ের পাশাপাশি তিনিও দীর্ঘদিন রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়ান। ছিলেন একাধিকবার সংসদ সদস্য। বর্তমানে তিনি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফটিকছড়ি ও রাঙ্গুনিয়া আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। রাউজানে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন তার পুত্র সামির কাদের চৌধুরী।

কিন্তু রোববার (২ ডিসেম্বর) রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচাই বাছাইয়ে মামলা ও ঋণখেলাপীর কারণে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও সামির কাদের চৌধুরীর মনোনয়ন পত্র বাতিল হওয়ায় তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া অনিশ্চিত। আপিলের মাধ্যমে মনোনয়ন বৈধ ঘোষিত না হলে বহুল আলোচিত কাদের পরিবারের রাজনীতিতে এখানেই অবসান ঘটলো বলে বিভিন্ন মহলের অভিমত। আগামীতেও তারা ঘুরে দাড়াতে পারবে কিনা তা নিয়েও অনেকের মধ্যে রয়েছে সংশয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ