শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউইয়াবার ছোবল থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে হবে

ইয়াবার ছোবল থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে হবে

শুধুমাত্র সহজপ্রাপ্যতার কারণে মাদকসেবীদের কাছে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভয়ংকর মাদক ইয়াবা। শুধু তাই নয় এই মাদক বিক্রির কৌশলগত কারণে এর ব্যবহার বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। এখনই তা রোধ করা না গেলে দেশে চরম সামাজিক বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা অনিবার্য হয়ে উঠবে।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ’র একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই মাদকের ব্যবহার, পাচারের কৌশল ও রুট এবং এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় তুলে ধরার পর সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিশেষ করে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। তারা সকলেই এই ভয়াবহ মাদক সেবন ও পাচার রোধে প্রশাসনের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
মাদক হিসেবে ইয়াবার ব্যবহার খুব পুরনো নয়। কিন্তু লক্ষণীয়ভাবে এর ব্যবহার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে উঠতি তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সমাজের অনেক সেলিব্রিটিদের মধ্যে পর্যন্ত। ফলে ইয়াবা বাণিজ্যের কাছে হার মানছে হেরোইন, ফেনসিডিল, চোলাই বা বাংলা মদ ও গাঁজার মতো পুরনো মাদক ব্যবসা। এই মাদক বা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িতরা সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষ, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও টিভি চলচ্চিত্রের নামকরা ও উঠতি তারকারা। অভিযোগ আছে ইয়াবা পাচারে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার দামি গাড়ি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা ও সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিতদের কেউ কেউ এমনকি সরকারি দলের জনপ্রতিনিধিও জড়িত। কাজেই সর্ষের মধ্যে ভূত থাকায় ভূত তাড়ানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এরপরে প্রতিমাসে যে পরিমাণ ইয়াবা ধরা পড়ে তার পরিমাণ দেখে আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। প্রশ্ন ওঠে এ ধরনের কত শত চালান পার হওয়ার পরে এমন একটি চালান ধরা পড়ে।
এ বিষয়ে আরও উদ্বেগের সংবাদটি হলো, ধরা পড়া মাদকের নাকি বিশাল একটি অংশ সংশ্লিষ্টদের দ্বারাই আবার বাজারে চলে আসে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ধ্বংস করার জন্য রাখা হয় নামমাত্র একটি অংশ। অন্যদিকে ধরা পড়া চালানের নির্দিষ্ট একটি অংশ সোর্সকে দিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ ওই অংশটিও ঘুরেফিরে আবার মাদক বাজারে চলে আসে। ইয়াবা সেবনকারীদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এই নেশায় একবার আক্রান্ত হওয়ার পরে পরবর্তী সময়ে এই নেশার খরচ তোলার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিটি একসময় বিক্রেতায় রূপ নেয় এবং সে সাথে তার নিজের লাভের কারণে সে নিজেই সৃষ্টি করে নেয় নতুন নতুন গ্রাহক।
এভাবে দেশের তরুণসমাজ যদি ইয়াবার মতো এমন মারাত্মক মাদকদ্রব্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং এর প্রসার যদি বর্তমানের মতো দ্রুত বাড়তে থাকে তবে তা সমাজের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। এরই মধ্যে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে এই মাদকের কারণে। অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ জীবনীশক্তি হারিয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সামনে সাধারণ নির্বাচন নিয়ে সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংকটের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে মাদক ব্যবসায়ীরা। কাজেই প্রশাসনকে খুব দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। জড়িতরা যে-ই হোক তাদের ধরে আইনের মুখোমুখি করতে হবে। নতুবা নিজ পরিবারেই হয়ত এই সর্বনাশা মাদকের ভয়ংকর রূপ অবলোকন করতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ