শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়ব্যারিস্টার মইনুল গ্রেফতার

ব্যারিস্টার মইনুল গ্রেফতার

সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তির ঘটনায় রংপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দায়ের করা মানহানির মামলায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে ডিবি পুলিশের একটি দল রাজধানীর উত্তরায় জেএসডি নেতা আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ব্যারিস্টার মইনুলকে রংপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ তাকে আদালতে নেয়া হবে।

রংপুরে সোমবার ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন মানবাধিকারকর্মী মিলি মায়া। তিনি রংপুর নগরীর মুলাটোল মহল্লার বাসিন্দা। মামলাটি তার পক্ষে রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আইনুল হোসেন। আদালতের বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা মামলাটি গ্রহণ করেন।

জানা গেছে, ব্যারিস্টার মইনুল রাতে উত্তরায় আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৈঠক করতে যান। আটকের আগে ডিবি পুলিশের একটি টিম তার সঙ্গে দেখা করে। তার গতিবিধি লক্ষ্য করছিলেন গোয়েন্দারা। একজন পুলিশ সুপার মর্যাদার কর্মকর্তা এর নেতৃত্ব দেন। ব্যারিস্টার মইনুলকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়ার খবরে অন্যদের মধ্যে ছুটে আসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যারিস্টার মইনুলের মামা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনে এলেও অনুমতি না পাওয়ায় ভাগ্নের দেখা পাননি তিনি। রাত পৌনে ১১টার দিকে তিনি মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।

ফিরে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মইনুলকে কোন মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে সংবিধান অনুযায়ী তার আইনজীবীর জানার অধিকার আছে। কিন্তু আমরা যখন তার গ্রেফতারের সংবাদ পেয়ে দেখা করতে এলাম তখন আমাদের ডিবি কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি।

ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গেও কথা বলতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, শুনেছি তাকে মানহানির মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। গত দু’দিনে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। ঠিক কোন মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হল তা জানতেই এসেছিলাম।

আমি ডিবি অফিসের গেটে থাকা অফিসারকে অনুরোধ করি ভেতরে ঢুকতে দেয়ার জন্য। কিন্তু সেখানকার কর্মকর্তারা উচ্চপর্যায়ে কথাবার্তা বলার পরামর্শ দেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কামাল হোসেনের উদ্যোগে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সক্রিয় আছেন ব্যরিস্টার মইনুল। রবসহ ফ্রন্টের বিভিন্ন নেতার বাড়িতে বৈঠকে তার নিয়মিত যাতায়াত। সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলার পর থেকে সমালোচনার মুখে পড়েন মইনুল। একপর্যায়ে তিনি টেলিফোনে ক্ষমা চাইলেও মাসুদা ভাট্টি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। তা না করায় মইনুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন মাসুদা ভাট্টি।

পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানেও মানহানির অভিযোগে একাধিক মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। এসব মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর মইনুল কয়েকটি মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনও নেন। সর্বশেষ তাকে রংপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান জানান, গ্রেফতারের পরপরই মইনুল হোসেনকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। দায়িত্বশীল এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, মইনুলকে গ্রেফতারের পর বিকাল থেকেই তাদের আয়োজন পাকাপাকি হয়।

তারপর সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ রবের বাসার দিকে যায়। ওই বাসায় মইনুল অবস্থান করছিলেন। পরে তাকে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতার করা হবে জানিয়ে একটি এসএমএস পাঠানো হয়। আজ (মঙ্গলবার) রংপুরের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে সোপর্দ করা হবে।

মইনুল হোসেমনকে গ্রেফতারের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমার চাওয়া প্রচলিত আইনে তার বিচার হোক। সত্য প্রকাশ পাক। তার ওপর আমার ব্যক্তিগত কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেই। ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম জানান, আটকের পরপরই ব্যারিস্টার মইনুলকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ব্যারিস্টার মইনুলকে যখন গাড়িতে তুলে নেয়া হয় তখন তিনি জানতে চান, তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে?

জবাবে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনাকে মিন্টো রোডে নেয়া হবে।’ গাড়িতে ওঠার পরই ব্যারিস্টার মইনুল বাসায় ফোন করে তাকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানান। কুমিল্লা ও ভোলায় ব্যরিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে আরও দুটি মানহানির মামলা হয়েছে।

ঝালকাঠিতে হয়েছে মানববন্ধন। এদিকে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি কোন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যারিস্টার মইনুলকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিটিংয়ে জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন, তা জাতির সামনে তুলে ধরতে তাকে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী।

কুড়িগ্রামে এক মামলায় ব্যারিস্টার মইনুলকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। যুগান্তর রিপোর্ট, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ইংরেজি দৈনিক অবজারভারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি আয়েশা আহমেদ লিজা। বিকালে মামলার শুনানিতে আদালতের বিচারক ফারজানা আহমেদ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। লিজা জানান, মইনুল হোসেনের মন্তব্য সব নারী সাংবাদিকের জন্য অবমাননাকর। তাই তিনি মামলাটি করেছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী সারোয়ার-ই-আলম জানান, ৫০০/৫০১ ধারায় মামলাটি হয়েছে।

মাসুদা ভাট্টিকে নোটিশ : সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি কোন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিটিংয়ে জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন বলে মন্তব্য করেন, তা জাতির সামনে তুলে ধরতে তাকে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সোমবার আইনজীবী সমাজের পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এসএম জুলফিকার আলী জুনু রেজিস্ট্রি ডাকযোগে মাসুদা ভাট্টিকে এ নোটিশ পাঠান। পাশাপাশি নোটিশের জবাব না পাওয়া গেলে মাসুদা ভাট্টির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে ডিএমপি পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া ওই উকিল নোটিশে মাসুদা ভাট্টিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।

নোটিশে আরও বলা হয়, মাসুদা ভাট্টি তার মন্তব্যের মাধ্যমে মইনুল হোসেনের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেছেন, যা ফৌজদারি আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আরেক মামলায় মইনুলের আগাম জামিন : কুড়িগ্রামে দায়ের করা মানহানির মামলায় ব্যারিস্টার মইনুলকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ব্যারিস্টার মইনুলের পক্ষে জামিন শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।

সঙ্গে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, একেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রোববার ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল কোর্টে পাঁচ হাজার কোটি টাকার এ মানহানির মামলা করা হয়। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অ্যাডভোকেট মাকসুদা বেগম বেবি বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

কুমিল্লা : রোববার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতে মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেন সুবীর নন্দী নামে একজন আইনজীবী। সোমবার বিকালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেল রানা মামলাটি সিআর হিসেবে গণ্য করেন এবং অধিকতর শুনানির জন্য আগামী ২৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। মামলার বাদী সুবীর নন্দী জানান, তিনি ইম্পটেন্ট নিউজ টুয়েন্টি ফোর নামে একটি অনলাইনের আইন উপদেষ্টা।

একাত্তর টিভির টকশোতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলায় সাংবাদিক হিসেবে তারও মানহানি হয়েছে। এজন্য তিনি দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মামলাটি করেছেন। মামলায় মাসুদা ভাট্টি ও মিথিলা ফারজানাকে সাক্ষী করা হয়েছে।

ভোলা : সোমবার অতিরিক্ত জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা হয়েছে। জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক নারী নেত্রী স্বপ্না ৫০০ ও ৫০৯ ধারায় ৫০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেন।

মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মো. সানাউল হক। ২৫ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া মইনুল হোসেনের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেত্রীরা। নারী নেত্রী কলেজ শিক্ষক রেহানা ফেরদৌস, অ্যাডভোকেট জান্নাতুল ফেরদৌস জুবলী, নাজনিন আক্তার রুমা, তারিন বেগম, ইয়াসমিন অভিযোগ করেন, ব্যারিস্টার মইনুল কেবল মাসুদা ভাট্টিকেই অসম্মান করেননি। তিনি গোটা নারী জাতিকে অসম্মান করেছেন। তার উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে তারা আন্দোলনে নামছেন।

ঝালকাঠি : ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিচারের দাবিতে সোমবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে মানববন্ধন করে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন। এ সময় জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুণ কর্মকার, পৌর কাউন্সিলর রেজাউল করিম জাকির, জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম-সম্পাদক সোয়েবুর মোর্শেদ সোহেল ও মানবাধিকার কমিশনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ খান বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ