শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
প্রচ্ছদখেলার সময়পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রথমে ব্যাট করতে নামার পর শুরুতে ঝাঁকুনি খেলেও মুশফিক-মিথুনের কাঁধে চড়ে পুঁজি আসে ২৩৯ রান। তখন সংগ্রহটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে ১০-১৫ রান কম মনে হলেও পাকিস্তান ব্যাট করতে নামার পর বাংলাদেশ দলের বোলিং সেই শঙ্কার মেঘ উড়িয়ে দিয়েছে নিমিষে। পাকিস্তানের ইনিংস রীতিমত গুড়িয়ে দিয়েছেন টাইগার বোলাররা। এক মোস্তাফিজই নিয়েছেন চার উইকেট। এরমধ্যে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের কথা খোদ দলপতি মাশরাফিই বলেছেন। তামিম-সাকিবের মতো সেরা দুই পারফরমার ছাড়াই উজ্জীবিত বাংলাদেশ ৩৭ রানের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে। সুপার ফোরের এই জয়ের মধ্য দিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে পা রাখলো টাইগাররা। ফাইনালে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রতিপক্ষ ভারত।

২৬ সেপ্টেম্বর আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে দিবারাত্রির ম্যাচে ২৪০ রানের মাঝারি সংগ্রহ নিয়েও শুরু থেকেই পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মাশরাফি। দলপতির আস্থার জবাব একেবারে সঙ্গে সঙ্গেই দেন মিরাজ। ওভারের শেষ বলে পাকিস্তানের ওপেনার ফখর জামানকে রুবেল হোসেনের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত করেন এই অফ স্পিনার।

দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নেন পেসার মোস্তাফিজ। ওভারের দ্বিতীয় বলেই বাবর আজমকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ‘দ্য ফিজ’। নিজের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজকেও তুলে নেন মোস্তাফিজ। এরপর পাকিস্তানের ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক। কিন্তু ৫১ বলে ৩০ রান করা মালিককে বিদায় করে দেন রুবেল হোসেন। অবশ্য রুবেলের এই উইকেট পাওয়ার পেছনে বড় অবদান মাশরাফিকেই দিতে হবে। মালিক মিডউইকেটের ওপর দিয়ে শট নিতে চাইলে ম্যাশ একেবারে উড়ে এক হাতে বলটি তালুবন্দি করেন। ধারাভাষ্যকাররাই তখন বলছিলেন, এ যেন ‘সুপারম্যান ক্যাচ’।

মালিকের বিদায়ের পর ৯৪ রানে পাকিস্তানের পঞ্চম উইকেট হিসেবে লিটন দাসের ক্যাচ হয়ে বিদায় নেন শাদাব খান (৪)। বোলার সৌম্য সরকারের প্রথম ওয়ানডে উইকেট এটি। তবে পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করতে থাকেন ওপেনিংয়ে নামা ইমাম-উল-হক ও আসিফ আলী। এই দু’জনের ৭১ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ। ৪৭ বলে ৩১ রান করা আসিফকে লিটন দাসের স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মিরাজ।

আসিফের পর ক্রিজে জাঁকিয়ে বসা ইমামকে (৮৩) বিদায় করেন মাহমুদউল্লাহ। এবারও লিটনের ক্ষিপ্র স্ট্যাম্পিং। মূলত তার বিদায়েই লড়াইয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর দ্রুত পাকিস্তানের লোয়ারঅর্ডার ব্যাটসম্যান নওয়াজ আর হাসান আলীকে তুলে নেন মোস্তাফিজ।

তবে ৪৬তম ওভারেই শেষ হয়ে যেতো পাকিস্তানের ইনিংস। কিন্তু মোস্তাফিজের অসাধারণ বলে ক্যাচ তুলে দিয়েও উইকেটরক্ষক লিটন দাসের ‘বদান্যতায়’ বেঁচে যান পাকিস্তানের শাহেন শাহ আফ্রিদি। নিয়মিত উইকেটরক্ষক মুশফিকের বদলে উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো লিটন ক্যাচ মিস করেছেন আরও একবার। সেবারও বোলার ছিলেন মোস্তাফিজ।

৩৪তম ওভারে আসিফ আলীর ব্যাটের কানায় লেগে লিটনের গ্লাভসে ধরা দিলেও ফেলে দেন তিনি। তবে ম্যাচ শেষে নিশ্চয়ই তার এসব ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা যায়। কারণ ম্যাচটা যে বোলারদের বীরত্বে জিতে গেছে বাংলাদেশ। তাও বেশ বড় ব্যবধানে। ১ উইকেট হাতে রেখেও ২০২ রানেই থেমে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। আর ৩৭ রানের জয় নিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

এর আগে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচের শুরুতেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের না খেলার ধাক্কা সঙ্গী করেই মাঠে নামে বাংলাদেশ। তার বদলে দলে ফেরেন মুমিনুল হক। বাদ দেওয়া হয় আরেক বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুকেও। আনা হয় পেসার রুবেল হোসেনকে।টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়ে ইনিংসের শুরুতেই সেই পুরানো চেহারা বাংলাদেশের।
শাদাব খানের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে যেন উড়তে চাইলেন সৌম্য সরকার। ছবি: সংগৃহীতজুনায়েদ খানের করা তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে ফেরেন এক বছর পর ওয়ানডে দলে ডাক পাওয়া সৌম্য সরকার। স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে ক্যাচ নেন ফখর জামান। তিন নম্বরে ব্যাট করতে আসেন মুমিনুল হক।

পরের ওভারের চতুর্থ বলে শাহীন শাহ আফ্রিদিকে দুর্দান্ত এক শটে ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান মুমিনুল। কিন্তু পরের বলেই আফ্রিদির অসাধারণ এক ডেলিভারিতে সরাসরি বোল্ড হয়ে ৪ বলে ৫ রান করে ফেরেন তিনি। পরের ওভারে ফেরেন ওপেন করতে নামা লিটনও। ১৬ বলে মাত্র ৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।

মাত্র ১২ রানের মাথায় যখন ৩ উইকেট নেই, তখন ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠেন সেই মুশফিকুর রহিম। ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’র সঙ্গী হন মোহাম্মদ মিথুন। এ চতুর্থ উইকেটজুটিতে আসে ১৪৪ রান। ৬৬ বল খেলে মাত্র ৩ চারের মারে মিথুন পূরণ করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। যদিও ইনিংসের ৩৪তম ওভারের চতুর্থ বলে বোলারের হাতেই ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি।

তার বিদায়ের পরও সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন মুশফিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মাত্র ১ রানের জন্য ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ এবং এশিয়া কাপের তৃতীয় সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন তিনি। ৯৯ রানে গিয়ে শাহীন শাহ আফ্রিদির দারুণ এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে সরফরাজ আহমেদের হাতে ক্যাচ দেন মুশফিক।

দলীয় ১৯৭ রানের মাথায় মুশফিকের বিদায়ের পর আর কেউই বেশি সময় উইকেটে টিকতে পারেননি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজের চেষ্টাও কোনো ফল দেখেনি। ১১ বলে ১ চারের মারে ১২ রান করেন মিরাজ। জুনায়েদ খানের বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান আগের ম্যাচের ‘নায়ক’ মাহমুদউল্লাহ। ৩১ বল খেলে ১ চারের মারে ২৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। শেষ দিকে ইনিংসের প্রথম ছক্কা হাঁকান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার ১৩ বলে ১৩ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটলে ২৩৯ রানে থামে বাংলাদেশ।

পাকিস্তানের পক্ষে একাই চার উইকেট নেন জুনায়েদ খান। এছাড়া দু’টি করে উইকেট নেন অন্য দুই পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি ও হাসান আলি। ঝলমলে ইনিংসের জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ