শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউগোয়েন্দা রিপোর্ট পেয়ে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর: কারাগারে বসেই গ্র“প নিয়ন্ত্রণ করেন তিন...

গোয়েন্দা রিপোর্ট পেয়ে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর: কারাগারে বসেই গ্র“প নিয়ন্ত্রণ করেন তিন শিবির ক্যাডার

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

তিনি শিবির ক্যাডার নাসির, আজম ও আলমগীর। কারাগারে বসেই নগরীর অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন। এদের মধ্যে নাসির ছাড়া বাকী দু’জন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি। দর্শনার্থীর বেশে অনুসারীরা এসব ক্যাডারদের সাথে যোগযোগ করেন। এরপর তারা এলাকায় গিয়ে নির্দেশনা মোতাবেক চাঁদাবাজি, জায়গা দখলসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করেন। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এসব তথ্য পাওয়ার পর চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ শনিবার সকালে, তিন শিবির ক্যাডারকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাদের সাথে দুর্ধর্ষ জঙ্গি জেএমবি ক্যাডার মিজানুর রহমান ওরফে বোমা মিজানকেও পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে কাশিমপুর কারাগারে। নাসির বিগত তিনমাস ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর দু’সন্ত্রাসী এক বছরের অধিক সময় ধরে চট্টগ্রাম কারাগারে রয়েছেন।
চট্টগ্রাম কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের প্রতি সপ্তাহে স্থানান্তর  করা হয়। এটি র“টিন ওয়ার্ক। নাসির ছাড়াও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর দুই শিবির ক্যাডার হলো আজম ও আলমগীর কবির ওরফে বাইট্টা আলমগীর।
জানা যায়, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি ও আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজি ও ভূমি দখলের ঘটনার বিষয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন তৈরি করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। ওই প্রতিবেদনে চাঁদাবাজির তিনটি ঘটনার সাথে শিবির ক্যাডার নাসির, আজম ও বাইট্ট্যা আলমগীরের নির্দেশ ও তাদের অনুসারীদের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সরকারের মেয়াদ শেষের দিকে হওয়ায় তিন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আবারো সক্রিয় হয়ে উঠছে। দর্শনার্থীর বেশে তাদের অনুসারীরা কারাগারে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া হাজিরা দিতে এসে আদালত ভবনেও নাসিরের সাথে দেখা করেন তার অনুসারীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থার এ ধরনের প্রতিবেদন পাবার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিন শিবির ক্যাডারকে কাশিমপুর সিকিউরিটি সেলে পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকাল ১০টায় চার আপরাধীকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানোর কথা স্বীকার করেন চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেলসুপার ছগির মিঞা। তিনি বলেন, দুর্ধর্ষ এ তিন আসামির বাড়ি চট্টগ্রামে। দর্শনার্থীর বেশে তাদের সাথে অনেকে দেখা করতে আসেন। আমরা তো আর সবাইকে চিনি না। ছগির মিঞা বলেন, দুর্ধর্ষ আসামিদের প্রতি সপ্তাহে এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানাš—র করা হয়। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
১৯৯৭ সাল থেকে টানা ১৬ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন শিবির ক্যাডার নাসির। তাকে এখনো আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়š¿ক বলে ধরে নেয়া হয়। তার বির“দ্ধে মামলা রয়েছে ২১টি। উনিশটি মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। দুটি মামলায় তিনি দেড় বছরের অধিক সময় ধরে জামিনের আবেদন করেন নি। ধারণা করা হ‡”ছ, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তিনি জামিনের আবেদন করছেন না। তবে মামলায় হাজিরা দিতে এসে আদালত ভবনে  অনুসারীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন নাসির। পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে তিন শিবির ক্যাডার কারাগারে বসে সহযোগী সন্ত্রাসী দের নিয়ন্ত্রণ করেন। এবিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। নাসির ছাড়াও অপর দুই শিবির ক্যাডার আলমগীর ও আজম নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃঞ্চ মুহুরী হত্যা ও চাঞ্চল্যকর এইড মার্ডার মামলার মৃতুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি। ২০০০ সালের ১২ জুলাই বহদ্দারহাট খাজা রোডে ব্রাশফায়ারে খুন হন ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মী।
২০০৮ সালে এ মামলায় আজম, বাইট্যা আলমগীর এবং আরেক দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ  হোসেনসহ চারজনকে মৃত্যুদন্ড ও তিন শিবির ক্যাডারকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালত। এদের মধ্যে সাজ্জাদকে গত বছরের ৮ নভেম্বর ভারতের কোলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ২০০৩ সালে গ্রেপ্তারের পর থেকে আজম ও আলমগীর কারাগারে রয়েছেন। ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর নগরীর জামালখানে নিজ বাসায় অধ্যক্ষ গোপাল কৃঞ্চ মুহুরীকে (৬০) মাথায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র  ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার  উমা মুহুরী বাদি হয়ে  কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০৫ সালের অক্টোবরে গিট্টু নাসির, তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু, আজম ও আলমগীর কবির ওরফে বাইট্যা আলমগীরের ফাঁসির আদেশ দেয় বিজ্ঞ আদালত। পরবর্তীতে গিট্টু নাসির ক্রসফায়ারে মৃত্যুবরণ করেন। একই রায়ে আসামি মহিউদ্দিন ওরফে মাইন উদ্দীন, হাবিব খান, শাহজাহান এবং সাইফুল ওরফে ছোট সাইফুলকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ  দেন আদালত। এরা সবাই পলাতক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ