শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু নেই, আছে আইয়ুব খানের ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু নেই, আছে আইয়ুব খানের ছবি

অনেক দিনের চেষ্টায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত বইটিতে তিনটি ছবি ছাপা হয়েছে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের। অথচ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছাপা হয়নি কোথাও। শেখ হাসিনা আগের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ৩০ তলা ভবনের উদ্বোধনের যে ছবি ছাপা হয়েছে, তাও খুব অস্পষ্ট। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় পুনর্মুদ্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে গ্রন্থটি।

ড. আতিউর রহমান গভর্নর থাকা অবস্থায় গ্রন্থটি প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের মার্চে তার পদত্যাগের পর প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থটি। এটির প্রকাশকাল উল্লেখ রয়েছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর। আনুষ্ঠানিকভাবে গত ২৫ মার্চ মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকর বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির। গ্রন্থ প্রকাশের আগে কয়েক দফা সম্পাদক পরিবর্তনের পর সর্বশেষ সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা। তার আগে সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন আরেক নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান। শুভঙ্কর সাহা ও মাহফুজুর রহমান অবসরে গেলেও ২৫ মার্চের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তারাসহ উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি শুভঙ্কর সাহা। আর ম. মাহফুজুর রহমান দেশের বাইরে থাকায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি তার।

গ্রন্থটি প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পর এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে এর বিতরণ। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে গতকাল সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা নামে দুটি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দুটি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করার পর গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পরপরই এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হওয়ায় গভর্নর ফজলে কবির এর বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে গ্রন্থটি পর্যালোচনার জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, পর্যালোচনা কমিটি এরই মধ্যে দুটি সভা করে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অন্যতম হলো- গত আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবেশদ্বারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে তার ছবিসহ গ্রন্থটিতে জাতির জনকের অবদানের যে ধারাবাহিক বর্ণনা (পৃষ্ঠা ৫১, ৭৭ ইত্যাদি) রয়েছে, তার ছবি সংগ্রহ করে সেগুলো সন্নিবেশ করা হবে সেখানে। গ্রন্থটির অ্যালবাম অনুচ্ছেদে বঙ্গবন্ধুর ছবিসংবলিত বিভিন্ন টাকার নোটের ছবি সংযোজন করা হবে। এ ছাড়া গ্রন্থটির সব অধ্যায় পুনরায় সম্পাদিত হবে এবং বাদ দেওয়া হবে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও ছবি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থ পর্যালোচনা কমিটির সভাপতি ও ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, অসামঞ্জস্যতার বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে গভর্নর ফজলে কবিরের নির্দেশনায় এর বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রন্থে যেসব অসঙ্গতি রয়েছে, তা দূর করে নতুন করে মুদ্রণের লক্ষ্যে কাজ চলছে।

৩৬১ পৃষ্ঠার বইটি দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্ব ১ থেকে ৩৪২ পৃষ্ঠাজুড়ে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, স্মৃতিচারণ এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ইতিহাস রয়েছে। আর ৩৪৩ থেকে ৩৬১ পৃষ্ঠায় রয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তির ছবি। এর মধ্যে ছবি পর্বের প্রথম পৃষ্ঠায় রয়েছে আইয়ুব খানের দুটি ছবি। আর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের একটি গ্রুপ ছবি। ৩৪৩ পৃষ্ঠায় আইয়ুব খানের প্রথম ছবির নিচে ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের, ঢাকার মতিঝিলস্থ প্রধান ভবনের পরিদর্শন বহিতে স্বাক্ষর করছেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আইয়ুব খান (১০ ডিসেম্বর ১৯৬৮)।’ একই পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় ছবির ক্যাপশনে রয়েছে- ‘পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আইয়ুব খান ও স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, ঢাকার প্রধান ভবনের কর্মকর্তারা (সন ১৯৬৮)।’ বইয়ের প্রথম পর্বের ৮২ পৃষ্ঠায় রয়েছে আইয়ুব খানের অন্য একটি ছবি। ছবির নিচে ক্যাপশনে লেখা আছে- ‘পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আইয়ুব খান ১০ ডিসেম্বর ১৯৬৮ তারিখে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, ঢাকার নতুন ভবন উদ্বোধন করেন।’ পরের পৃষ্ঠায় ছবি রয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মোনায়েম খানের।

বইয়ের ৮৪ পৃষ্ঠায় শেখ হাসিনা প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ৩০ তলা ভবনের উদ্বোধনের একটি ছবি ছাপা হলেও তা অস্পষ্ট। এ ছাড়া গ্রন্থটিতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মোহাম্মদ ইউনূস, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান, শাহ এএমএস কিবরিয়া ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছবি ছাপা হয়েছে। স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর আ.ন.ম. হামিদুল্লাহ, সাবেক গভর্নর নুরুল ইসলাম, লুৎফর রহমান, ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, ড. ফখরুদ্দিন আহমদ, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ড. আতিউর রহমান ও বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরের ছবি।

বইটির প্রকাশনা প্রকল্পের উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. সনৎকুমার সাহা, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী এবং সাবেক ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাশেম. আবু হেনা মোহা. রাজি হাসান ও এসকে সুর চৌধুরীর নাম উল্লেখ রয়েছে। সম্পাদকমণ্ডলী হিসেবে নাম রয়েছে শুভঙ্কর সাহা, ম. মাহাফুজুর রহমান, ড. আবুল কালাম আজাদ, নাসিরুজ্জামান, এফএম মোকাম্মেল হক, গোপাল চন্দ্র দাস, আনোয়ারুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন, জোবায়দা আফরোজ ও ইন্দ্রানী হকের।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ