শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউআ. লীগ নেতার স্ত্রী ঘুষ নিয়ে চাকরি দিলেন শিবির নেতাকে !

আ. লীগ নেতার স্ত্রী ঘুষ নিয়ে চাকরি দিলেন শিবির নেতাকে !

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি  (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের স্ত্রী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রুপালী ঘোষের কারিশমায় ১৫ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময় শিবির নেতা ও ছাত্রদল সম্পাদককে স্কুলে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

এঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীর পাশাপাশি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অধিকাংশ সদস্য ফুঁসে উঠেছে। তাঁরা আন্দোলনের পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে তালা সরকারি বিদে স্কুলে একাধিক চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র মহড়া ও পুলিশ প্রহরায়  নামমাত্র  পাতানো পরীক্ষায় তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

এসময় গেটের বাইরে পুলিশ মোতায়েন এবং ভিতরে চরমপন্থী ক্যাডারদের নিয়োজিত করে পাতানো পরীক্ষা সম্পন্ন করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও সভাপতি। এঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ উপজেলা আওয়ামীলীগ যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।

জানা যায় যে , ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকালে তালা উপজেলার আটারই গ্রামে অবস্থিত জেএনএ পল্লী মঙ্গল হাইস্কুলের ইসলাম ধর্ম ও কৃষি শিক্ষক বিষয়ের নিয়োগ পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষার কয়েকদিন পূর্বেই  ইসলাম ধর্ম শিক্ষকের প্রার্থী ছাত্রশিবিরের প্রাক্তণ নেতা মো. সাইদ এবং কৃষি শিক্ষক বিষয়ে তালা সদর ইউনিয়ন ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তারুল ইসলামের নিকট থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা উৎকোচ নেয় জেএনএ পল্লী মঙ্গল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা উপজেলা চেয়ারম্যানের স্ত্রী  রুপালী ঘোষ এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ আসাদুজ্জামান।

কিছুদিন আগে অকালে মারা যায় ঐ স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক মাও:আবুল কাসেম। লাশ দাফনের সময় শত শত মানুষের সামনে তাঁর পুত্রকে স্কুলে ধর্মীয়  শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও নগদ নারায়নে তুষ্ট হয়ে বেমালুম ভুলে গেছে। নিজের একমাত্র বোনকে পাগল সাজিয়ে তাঁর সকল সম্পত্তি আত্মসাৎসহ একাধিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জেএনএ পল্লী মঙ্গল হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান অভিভাবক সদস্য শেখ হাবিবুর রহমান, মো. আরিজ গাজী,লাইজুয়ারা খাতুন ও মো. আকবার মোড়ল সাংবাদিককে জানান, কমিটির কোন রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই প্রধান শিক্ষক, সভাপতি ও দুই বিতর্কিত সদস্য ছাত্রদলের আলোচিত সাধারণ সম্পাদক আক্তারুলকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা অভিযোগ দিয়েও কোন বিচার পায়নি। প্রয়োজনে আমরা মামলায় যাবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান,কয়েক দফায় উক্ত উৎকোচের টাকা প্রধান শিক্ষিকার বোনের স্বামীর মাধ্যমে নগদে এবং ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়।  বুধবারেও প্রধান শিক্ষিকার বোনের স্বামীর হিসাবে তালা সোনালী ব্যাংক শাখায় প্রায় তিন লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে বলে চাউর হয়েছে।

জেএনএ পল্লী মঙ্গল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রুপালী ঘোষ এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ আসাদুজ্জামান তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে ডিজি প্রতিনিধি গাজী মোহাম্মদ রফি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ নিয়েগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। এদিকে তালা বিদে স্কুলের পাশে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া অনেক পথচারী সন্ত্রাসী মহড়া আবার অনেকেই  গরু কেনাবেচার হাট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এই নিয়োগ বোর্ডকে।

তালা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার জাকির হোসেন জানান, বিএনপি জামায়াতের সাথে আতাত করে ওই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অর্থের মোহে পড়ে দলীয় ছেলে-মেয়ের চাকুরী হচ্ছেনা। যে কারণে দিন দিন উপজেলায় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে।

তালা উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক সরদার মশিয়ার রহমান জানান,দিনভর যারা বর্তমান সরকারের নিন্দা করে তাদেরই বিভিন্ন প্রতিষ্টানে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। জামায়াত বিএনপি ছাড়া দলীয় কোন নেতার উপজেলার কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি হয়নি।

তালা উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্নসাধারণ সম্পাদক পি.এম গোলাম মোস্তফা উক্ত ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন,অর্থের বিনিময়ে ছাত্রদল নেতাকে নিয়োগ দেওয়া ঠিক হয়নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান,বিষয়টি আমার জানা নেই। ওটা আমার বউয়ের ব্যাপার। তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক (পিপিএম) জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে  এবং সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রকৌশলি শেখ মুজিবুর রহমান জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী প্রধান শিক্ষিকার সাথে আলাপ করে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ দিতে বলি। কিন্তু নিয়ম বর্হিভূতভাবে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল নেতাকে নিয়োগ দেওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

এসব ঘটনায় দূর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভূক্তভোগীরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ