ন্যাশননাল ডেস্কঃ লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নে দরিদ্র এক পরিবারের কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। গণধর্ষণে তিন যুবক জড়িত থাকলেও পুলিশ ঘটনাটিতে কেবল একজনের নামে মামলা নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক সালিস বৈঠকে তিন যুবকের পরিবারের কাছ থেকে জরিমানার টাকাও আদায় করা হয়েছে।
মামলার পর এরই মধ্যে এক মাস ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও একমাত্র আসামিকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশ বলছে, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তের পর অন্যদের ব্যাপারটি দেখা হবে।
স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক প্রণব কুমার দাস বলেন, মেয়েটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন থানায় পাঠানো হয়েছে। ২০ দিন চিকিৎসার পর মেয়েটি বাড়ি চলে যায়। মেয়েটি এখনো মানসিক বিকারগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
মেয়েটির ভাইয়ের অভিযোগ, গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে। এর আগে থানায় তিনজনের নামে মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নিয়েছে একজনের নামে। অথচ গণধর্ষণের ঘটনায় যে সালিস হয়েছে, তাতে তিন যুবকের পরিবার উপস্থিত হয়ে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছে। এর মধ্যে অভিযুক্ত ঝড়ুর পরিবারের কাছ থেকে ৭০ হাজার, শচীন্দ্রর ২০ হাজার ও কাঙ্গালের পরিবারের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এই সালিস না মানলে সাদা কাগজে জোর করে কিশোরীর পরিবারের সই নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করতে গেলে তিনি তা না নিয়ে মৌখিক শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
ধর্ষণের শিকার কিশোরী জানায়, গত ৮ এপ্রিল বিকেলে সে বাড়ির পাশে শুকাতে দেওয়া খড়ি তুলছিল। এ সময় প্রতিবেশী যুবক ঝড়ু (২৬) এবং তাঁর সহযোগী শচীন্দ্র (২৫) ও বেলাল ওরফে কাঙ্গাল (২৪) তাকে পাশের ভুট্টাখেতে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে তাঁরা মেয়েটিকে এক দিন আটকে রাখেন। ১০ এপ্রিল ভোরে তাকে অচেতন অবস্থায় এক ভ্যানচালক উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন। এর পর থেকে ধর্ষকেরা মেয়ের পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন।
মেয়েটির পরিবার জানায়, ১১ এপ্রিল ওই তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলেও রহস্যজনক কারণে শচীন্দ্র ও কাঙ্গালকে বাদ দিয়ে শুধু ঝড়ুর নামে মামলা নেয় পুলিশ।
অভিযুক্ত তিনজনই বর্তমানে পলাতক। তবে শচীন্দ্র ও কাঙ্গালের পরিবার গণধর্ষণে এঁদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। স্থানীয় দেওয়ানিদের (মাতব্বর) কথা না শুনলে সমস্যা হবে—এই ভয়ে এবং পুলিশের হয়রানির আশঙ্কায় তাঁরা সালিসে অংশ নিয়ে জরিমানা দেন বলেও জানান।
সালিস বৈঠকের বিষয় জানতে চাইলে বাউরার ব্যবসায়ী মহাদেব ভুতরিয়া বলেন, সালিসকারীরা শুধু তাঁর জায়গা ব্যবহার করেছেন। জরিমানার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ কথাও আপনারা শুনেছেন!’
২৯ এপ্রিল বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের অভিযুক্ত ঝড়ুর বাবা হরেন চন্দ্র (৮৬) বলেন, ঘটনার সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন। মহাদেব ভুতরিয়ার বাড়িতে বৈঠকের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, তিনিসহ স্থানীয় অনেক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন এবং সালিসকারীরা তাঁকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। ওই পরিমাণ টাকা তিনি ইতিমধ্যে মহাদেব ভুতরিয়ার কাছে জমা দিয়েছেন। শচীন্দ্রের মা সমস্বরী রানী ও স্ত্রী সবিতা বলেন, ওই বৈঠকে তাঁরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তাঁদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং সেই টাকা তাঁদের পালিত গরু ও ছাগল বিক্রি করে সালিসকারী মহাদেব ভুতরিয়ার কাছে জমা দেন। কাঙ্গালের মা ফুলজান বলেন, তাঁরা ভুট্টার টাকা নিয়ে জমা দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পাটগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, একজনের নামে মামলা হলেও তদন্তকালে অন্যদের নাম বেরিয়ে এলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।