এক বছরে নতুন নয় ব্যাংকের নিট মুনাফা হয়েছে ৫০৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে আট ব্যাংকের মুনাফা ৫৬১ কোটি টাকা হলেও ফারমার্স ব্যাংকের ৫৪ কোটি টাকা নিট লোকসান হওয়ায় সার্বিকভাবে নিট মুনাফা কমেছে। এছাড়া নতুন অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে মুনাফার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক। এসবিএসি ব্যাংক ২০১৭ সালে ঝুঁকির বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ ও সরকারের কর পরিশোধের পর ১০০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া ব্যাংকগুলোর অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলো ২৪ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করেছে। আগের বছর যা ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা ছিল। এতে করে এক বছরের ব্যবধানে পরিচালন মুনাফা বেড়েছে তিন হাজার ৭৯ কোটি টাকা। আর এক বছরের ব্যবধানে নিট মুনাফা ৯৮৯ কোটি টাকা বেড়ে ৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা হয়েছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আগের তুলনায় বেড়েছে। এ কারণে অনেকের আশানুরূপ মুনাফা হয়নি। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২০১৭ সাল শেষে ব্যাংকগুলোর ৪৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা প্রভিশন রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আগের বছর রাখতে হয়েছিল ৩৬ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। এতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে ৮ হাজার ৮৬ কোটি টাকা।
নিট মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ এবং ৪০ শতাংশ হারে করপোরেট কর পরিশোধের পর ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফার হিসাব হয়। যদিও ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে নতুন ব্যাংকগুলোকে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশে করপোরেট কর পরিশোধ করতে হবে।
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ২০১৭ সালে ১৮ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করেছে। এর বিপরীতে নিট মুনাফা হয়েছে ৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। আগের বছর এসব ব্যাংক ১৭ হাজার ৫২১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফার বিপরীতে নিট মুনাফা করেছিল ৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। বেসরকারি ৪০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৩টি ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। কমেছে ১৭টি ব্যাংকের।
এর মধ্যে নতুন নয়টি ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৫০৬.৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আটটি ব্যাংকের মুনাফা হয়েছিল ৫৬০.৮৪ কোটি টাকা। অনিয়মের কারণে আলোচিত ফারমার্স ব্যাংক ২০১৭ সালে ৫৩.৮৯ কোটি টাকার নিট লোকসান হয়েছে। আগের বছর ব্যাংকটি ২৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। এর বাইরে ২০১৭ সালে এসবিএসি ব্যাংক ১০০.৬৫ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ৮৯ কোটি এক লাখ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৮৪ কোটি ৪৯ লাখ, মধুমতি ব্যাংক ৭৪ কোটি ৩৩ লাখ, মেঘনা ব্যাংক ৫১ কোটি ৬৩ লাখ, মিডল্যান্ড ব্যাংক ৬৯ কোটি ৪২ লাখ, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ৪৬ কোটি ২৫ লাখ, এনআরবি ব্যাংক ৪৫ কোটি ছয় লাখ টাকা প্রকৃত মুনাফা করেছে।
এ প্রসঙ্গে এসবিএসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. গোলাম ফারুক বলেন, আমাদের ব্যাংকের বিতরণ হওয়া ঋণের মান ভালো হওয়ায় মুনাফা বেশি হয়েছে। আমরা কৃষি ও শিল্পকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে গ্রাহক নির্বাচন করেছি। তাছাড়া আমাদের ঋণের ৩৮ শতাংশই বিতরণ হয়েছে এসএমই খাতে। সুতরাং কোন একক গ্রাহক বা খাতকে বেশি ঋণ দিয়ে ঝুঁকিতে পড়ি নাই। তিনি আরও বলেন, এসবিএসি ব্যাংক শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ধরনের নিয়মকানুন মেনে ব্যাংক পরিচালনা করে আসছে। সে জন্য ব্যাংকের সব সূচকে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। মুনাফাকে প্রাধান্য দিয়ে নয় বরং গ্রাহক সেবাই আমাদের লক্ষ্য।