শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনহাসিনা আলোর অভিযাত্রী, খালেদা অন্ধকার কানাগলির বাসিন্দা - মতিয়া চৌধুরী

হাসিনা আলোর অভিযাত্রী, খালেদা অন্ধকার কানাগলির বাসিন্দা – মতিয়া চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হবার জন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ‘ঐক্যবদ্ধ থাকলে জয় আর বিভক্তিতে পরাজয়। আগামীতে সংবিধান মোতাবেক যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে আমরা সবাই এক‍াট্টা হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করব। এক থাকলেই জয় হবে।’

রোববার বিকেলে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের সদস্য মনোনীত প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মতিয়া চৌধুরী এসব কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘হাসিনা আলোর অভিযাত্রী, খালেদা অন্ধকার কানাগলির বাসিন্দা। আলোর পথে এগিয়ে যেতে চাইলে শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকতে হবে। আর খালেদা জিয়া, জামায়াত আর হেফাজতের মত দুর্গন্ধযুক্তদের সঙ্গে থাকলে অন্ধকারের দিকে যেতে হবে।’

খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়া বলেছেন, উনি ক্ষমতায় গেলে নাকি দেশের চেহারা পাল্টে দেবেন, উনি অসত্য কথা বলেননি। উনি ক্ষমতায় গেলে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেয়া বন্ধ করে দেবেন। আমরা আলো দিয়েছি, উনি অন্ধকার দেবেন। ঢাকা শহরে আমরা পানির সমস্যা সমাধান করেছি, উনি ঢাকাকে কারবালা বানাবেন। আমরা হাতিরঝিল বানিয়েছি, উনি সেটাকে গণটয়লেট বানাবেন।’

মতিয়া বলেন, ‘বিএনপি মানে সারের সংকট। বিএনপি ক্ষমতায় এলে কৃষকেরা হায় সার, হায় সার করবেন। সার কোথায়, সার কোথায় বলে কৃষকদের কাঁদতে হবে।’

ড.ইউনূসের সমালোচনা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘ড.ইউনূস সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিস্কে সমকামী অর্থাৎ পুরুষে পুরুষে বিবাহের মত জঘন্য বিষয়ে সমর্থন দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে নাকি ইউনূসকে উচ্চ আসনে বসাবেন। আমি বেগম জিয়া আর হেফাজত ইসলামকে প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা ইসলামের কথা বলেন। আর যারা সমকামীদের পক্ষে কথা বলেন, তাদের কিভাবে পাশে বসান ?’

হেফাজতের ঢাকা অবরোধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘প্রথমে বলেছিল অবরোধের সময় তিন হাজার মানুষ মারা গেছে, পরে অধিকার বলল ৬১ জন মারা গেছে। আমরা বলেছি, নাম-ঠিকানা দাও, তারা বলছে দেবেনা। ফটোশপিংয়ের মাধ্যমে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। এত মানুষ মারা গেল, একটি ছবিও কি উঠলনা ? লাইট না হয় বন্ধ ছিল, মোবাইলের লাইটও কি বন্ধ ছিল ? যারা কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে তারা কোন ধরনের মুসলমান ?’

মন্ত্রী বলেন, ‘আদিলুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর এক রাষ্ট্রদূতকে দেখলাম একেবারে আদালত পর্যন্ত চলে গেছেন। আমি ওই রাষ্ট্রদূতকে জিজ্ঞেস করতে চায়, আপনার দেশে কোন বাংলাদেশী গ্রেপ্তার হলে কি আপনি এদেশের রাষ্ট্রদূতকে আদালতে যেতে দেবেন ?’

যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘গোলাম আজমের রায় হল আর মার্কিন রাষ্ট্রদূত তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে দিয়ে নানা কথা বলালেন। প্রকাশ্য আদালতে দেশের আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। আমরা ওয়াদা করেছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব, আমরা করবই।’

ভারতের ফেলানী হত্যার রায়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আমলে সীমান্তে এত লোক মারা গেছে, কোনদিন মামলা হয়নি। আমাদের সময় অন্ত:ত একটি মামলা হয়েছে। ফেলানীর রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নয়। আমরা এ হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য আরও উপরের দিকে যাবার চেষ্টা করব।’

ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতিতে কিছু নেতিবাচক চরিত্র ঢুকে গেছে। ছাত্রলীগ এ পর্যন্ত এক হাজার ৬’শ জনকে বহিস্কার করে শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার আমলে যখন ছাত্রদল নিজেরা মারামারি করত, মানুষ খুন করত তখন কতজনকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল ? জিয়া ক্ষমতায় এসে মেধাবী ছাত্রদের সিঙ্গাপুরে প্রমোদ ভ্রমণে নিয়ে গিয়ে ছাত্র রাজনীতির চরিত্র নষ্ট করেছিলেন। সাত খুনের আসামী ছাত্রলীগ নেতা শফিউল আলম প্রধানকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিয়েছিলেন।’

তারেক রহমানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান যাকে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করেছেন, তিনি শাহীন স্কুল, সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে বহিস্কার হয়ে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল থেকে টেনেটুনে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে মানিকগঞ্জ যাত্রা করেন। তিনি ডিগ্রী পাশ করেন কিন্তু কলেজের নাম নাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দিন বদলের কথা বলেছিলাম। এটা কোন অলীক স্বপ্ন নয়। আমরা ক্ষমতায় এসে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের বই দিয়েছি। সেই বইয়ের গন্ধই শিক্ষার্থীদের কাছে দিন বদলের গন্ধ। এটাই দিন বদল।’

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংবর্ধিত প্রেসিডিয়াম সদস্য সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড.হাসান মাহমুদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এবং সাংসদ চেমন আরা তৈয়ব প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম।

সভায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেবে। নিজামীরা আবারও রক্তেভেজা পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। আমরা সালাহউদ্দিন কাদেরের বিচার চাই, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। আমরা জঙ্গীবাদ চাইনা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেখানেই পরাজিত হয়েছি, আমাদের কারণে হয়েছি। আমরা এক থাকলে আমাদের কেউ পরাজিত করতে পারবেনা।’

বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড.হাসান মাহমুদ বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি যতদিন ক্ষমতায় ছিল, সেই সময়ে ৩৩৭টি সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আর আমাদের আমলে গত প্রায় পাঁচ বছরে সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে মাত্র ২১৮টি। ফেলানী হত্যার রায়ে আমরাও প্রচন্ড অখুশী। আমরাও মনে করি সঠিক বিচার পাইনি। বেগম জিয়া ভারতীয় শাড়ি পড়ে, ভারতের গরুর মাংস খেয়ে ভারতের বিরোধিতা করেন। আর ভারতে গেলে দেশের স্বার্থের পক্ষে কথা বলতে ভুলে যান।’

সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আগামী নির্বাচনে যিনি নৌকা মার্কায় প্রার্থী হবেন, তাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে বিজয়ী করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, আমরা নীতির প্রশ্নে আপোষহীন। আমাদের ভুলত্রুটি থাকতে পারে। আমরা আজ এ-দল, কাল ওই দল করিনা।’

সংবর্ধনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সহধর্মিনী আয়েশা সুলতানা, সাবেক সাংসদ সুলতানুল কবীর চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অধ্যাপক মো.মঈনুদ্দিন, জিতেন্দ্র প্রসাদ নাথ মন্টু, সিরাজউদ্দৌলা চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন প্রমুখ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ