রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউনির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেশে ফিরছেন রেহেনাপুত্র ববি

নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেশে ফিরছেন রেহেনাপুত্র ববি

বিশেষ প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাশাপাশি শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক ববি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এই নির্বাচনে অনলাইন প্রচারের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর অনলাইন ভিত্তিক প্রচার বা সাইবার যুদ্ধের মূল দায়িত্ব পালন করবেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক ববি।

ববি বর্তমানে লন্ডন রয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে শীঘ্রই ববি দেশে আসছেন বলে জানা গেছে। দেশে এসে তিনি অনলাইন প্রচারের কাজ শুরু করবেন। প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক, ব্লগ, টুইটারসহ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করা হবে। শুধু নির্বাচনী প্রচারই নয়, সরকার ও আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রচানারও পাল্টা জবাব দেয়া হবে। ববির নেতৃত্বে একটি টিম কাজ করবে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা বিশ্বাস করেন, প্রচারণায় যে দুর্বলতা ছিল সজীব ওয়াজেদ জয় প্রচারের কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার পর অনেক উত্তরণ ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও মনে করেন, জয়ের প্রচারের পর আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে প্রচারে অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এখন ধারণা করা হচ্ছে জয়ের পাশাপাশি ববি এই কাজে সংশ্লিষ্ট হওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রচারের পালে নতুন হাওয়া লাগবে। স্বচ্ছ ইমেজের ববির সম্পৃক্ততায় দলীয় প্রচার আরো বেগবান হবে এমনটিই ভাবছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

লন্ডনের স্কুল অফ ইকোনোমিক্স থেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত রেদওয়ান সিদ্দিক ববি ঢাকায় একটি বিদেশী সংস্থায় দুই বছর চাকরিও করেছেন। দেশে এসে ২০১১ সালে তিনি ইউএনডিপির অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পে যোগ দেন। দুই বছর মেয়াদী ওই প্রকল্পের কর্মকর্তা হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাজ করেন। এই প্রকল্পের দুই বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি চাকরি ছেড়ে লন্ডন চলে যান। যদিও এই প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে কিন্তু ববি চাকরির সময় বাড়াননি বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনি কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যই তিনি চাকরির মেয়াদ বাড়াননি। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে অথবা আগামী অক্টোবর মাসে তিনি দেশে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশে এসেই তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে অনলাইন প্রচারণার কাজ শুরু করবেন। এই কাজে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেবেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

রেদয়ান সিদ্দিক ববি ২০০৮ সালে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী পেপি সিদ্দিক ইউরোপীয়ান নাগরিক। ববি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ছেলের নাম কাইয়াস মুজিব সিদ্দিক, মেয়ের নাম লীলাতুলী হাসিনা সিদ্দিক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ববি বেশ কয়েকবার দেশে আসেন। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে তিনি সস্ত্রীক ভারত সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী পরিবারের সদস্য হওয়ার পরও তিনি নিয়মানুবর্তী জীবনযাপনের বাইরে কখনো চলেননি। এমনকি বর্তমান সরকারের আমলে কোনো তদবির কিংবা সরকারি কোনো সুবিধা নিতে কোনো ধরনের পারিবারিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ তার নামে কেউ করতে পারে নি।

সজীব ওয়াদের জয় গত জুলাইয়ে দেশে এসে রাজনৈতিক জনসভায় অংশ নেন। রংপুরের পীরগঞ্জে পৈতৃক এলাকায় নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা এবং ড. ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে জয়। পিতৃভূমিতে জয়ের জনসভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে জয়ের অভিষেক হয়েছে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশপাশি ভার্চুয়াল জগতেও নিজস্ব অফিসিয়াল ফেসবুক এবং টুইটার পেইজে ধারবাহিকভাবে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার অব্যহত রেখেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। জয়ের এই কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেছিলেন, বিদেশ থেকে সেনাপতি এনে পরাজয় ঠেকাতে পারবে না আওয়ামী লীগ। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতারা ফখরুলের এই কথাকে উড়িয়ে দিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, একজন সেনাপতি এসেছেন। আরো একজন দেশে আসছেন নির্বাচনের আগে। সাইবার যুদ্ধের সেনাপতি হবে রেদওয়ান সিদ্দিক ববি।

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, জামায়াত-বিএনপি জোটের অনলাইন কার্যক্রমের জবাবে আওয়ামী লীগও কাউন্টার অনলাইন কার্যক্রম শুরু করতে চায়। নির্বাচনের আগেই ব্যাপকভাবে এই কর্মকাণ্ড শুরু হবে। জামায়াত-শিবিরের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত ‘বাশের কেল্লা’, ‘টিনের চালে কাক আমি তো অবাক’ ‘মরি সখি তোর বগলের গন্ধে’ সহ বিভিন্ন ফেসবুক পেইজে আওয়ামী লীগের নেতিবাচক প্রচারণায় চালানো হচ্ছে। এসব প্রচারণায় ফটোশপে ছবি এডিট করে উদ্দেশ্যমূলক মন্তব্য ও লেখা পোস্ট করে সরকার বিরোধী বিভিন্ন তথ্য দেয়া হয়। শিবির পরিচালিত এসব পেইজে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য পেইজের নাম এবং কন্টেন্টের ক্ষেত্রেও ইদানিং আনা হয়ে বৈচিত্র। ১৮+ হিসেবে চিহ্নিত করা পেইজ, অল্প কিছু সুন্দরী নারীদের ছবি কিংবা কোনো তারকা খেলোয়ার বা মডেলের নাম ও ছবি দিয়েও একাধিক পেইজ খুলে রেখেছে জামায়াত-শিবির। এসব পেইজে ওই তারকা খেলোয়ার কিংবা মডেলের হাতে গোনা কয়েকটি ছবি থাকলেও জামায়াত শিবিরের উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছবি ও লেখার আধিক্য চোখে পড়ে। তারকা এবং সুন্দরীদের ছবি দিয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করে তাদের কাছে নিজেদের আওয়ামী বিরোধী তথ্য তুলে ধরার লক্ষ্যেই ফেসবুকে এসব পেইজ খোলা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অনলাইন যুদ্ধে পিছিয়ে আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। নির্বাচনের আগে অনলাইনে জামায়াত-বিএনপির আরো ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে আওয়ামী লীগের কাছে। অনলাইন যেহেতু উন্মুক্ত স্থান। তাই এখানে প্রচারণার বদলে পাল্টা প্রচার করে আওয়ামী লীগ নিজেদের তথ্যগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি বিরোধী শক্তিদের প্রচারণার জবাব দিতেই ববির নেতৃত্বে সাইবার যুদ্ধের একটি বিশাল টিমকে সক্রিয় করার কথা ভাবছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অনলাইনভিত্তিক এসব কর্মকাণ্ডে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন টেক্সট, পিক্স প্রস্তুতের কাজ চলছে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায়, রেদওয়ান সিদ্দিক ববির সার্বিক পরিচালনায় এবং অনলাইন প্রযুক্তিতে দক্ষ বেশ কিছু কর্মী নিয়ে খুব দ্রুতই শুরু করা হবে আওয়ামী লীগের সাইবার প্রচারণা। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করা ছেলেমেয়ে এই কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাতে একটি অফিস নিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয় এবং রেদওয়ান সিদ্দিক ববি বিদেশে বসেই এখানকার যাবতীয় কাজের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ