মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
প্রচ্ছদদেশজুড়েখুলনা বিভাগবাগেরহাটে নাম সর্বস্ব ভিত্তিফলকেই আছে জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্টে

বাগেরহাটে নাম সর্বস্ব ভিত্তিফলকেই আছে জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্টে

বাগেরহাটে নাম সর্বস্ব ভিত্তিফলকেই আছে জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্টে। ৩ জন দুস্থ আর নামে মাত্র প্রশিক্ষণ এই দিয়েই চলছে জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্টের এতিমখানা কার্যক্রম। এতিম ও দুস্থ্যদের লালন-পালন ও স্বাবলম্বী করার জন্য জেলার সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে ১৯৯৪ সালে ৩.৯০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠা করা হয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্জন কোলাহলহীন একটি প্রতিষ্ঠানের সামনে একটি নামফলক রয়েছে জিয়া মেমোরিয়াল ট্রাষ্টের নাম। নামফলকে ১৯৯৪ সালের ২৩ জুন  তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

তবে সেই প্রতিষ্ঠানে কোন নাম বা সাইনবোর্ড দেই। তবে প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ওমান সরকারের অর্থায়নে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলেছে বলে একটি ফলক লাগানো রয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে কেই নিদ্রিষ্ট করে নাম বলতে পারে নি। স্থানীয়রা একা ‘এতিমখানা’ বলেই জানে।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই  দেখা যাবে একটি প্রশাসনিক ভবন, কিছুটা সামলে গেলেই একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি প্রশিক্ষন ভবন, একটি আবাসিক ভবন কিছুটা দূরে একটি মসজিদ।

সাংবাদিক পরিচয় দিলে অফিস ভবনে এজন কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। তিনি জিয়া অর্ফানেজ অরফানেজ এর অধ্যক্ষ আফতাব আলম। কথা হয় তার প্রশাসনিক কক্ষে বসে। কক্ষের দেয়ালের বোর্ডে জিয়া অর্ফানেজ এর নামে কিছু নথি ঝুলানো দেখা যায়। অরফানেজ এর অধ্যক্ষ আফতাব আলম বলেন, ৫টি কক্ষ বিশিষ্ট্য অফিস ভবন, ৩০ সয্যা বিশিষ্ট্য ২ তলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষ বিশিষ্ট্য ২ তলা প্রশিক্ষন ভবন, একটি এক তলা কিনিক ভবন ও মসজিদ দিয়ে শুরু হয়। শুরুতে ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী ছিল। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন দিনই কিনিকটি চালু হয়নি। সব কিছু ভালই চলছিল। কিন্তু এখন আর জৌলুস নাই এ এতিম খানার।

তিনি জানান, বর্তমানে এখানে ১ জন অধ্যক্ষ, ১ জন শিক্ষক, ১জন প্রশিক্ষক, ১জন ইমাম, ১জন বাবুর্চি ও ২ জন গার্ড কর্মরত আছে। বর্তমানে ৩জন দুস্থ আছে। যাদেরকে দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে সেখানে ২২ জন শিশু পড়াশুনা করছে। মহিলাদের দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষনে ১৫ জন প্রশিক্ষানার্থী আছে। সকালে মসজিদে স্থানীয় শিশুদের কোরআন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।

যখন দুস্থ্য ও এতিমরা ভর্তি হচ্ছিলনা এখানে তখন কর্তৃপক্ষ মহিলা প্রশিক্ষন ও ফিডার স্কুল চালু করল। ২০০০ সাল থেকে ফিডার স্কুল চলে এখানে।

অধ্যক্ষ আফতাব আলম আরও বলেন, ২০০০ সালে আমি এখানের দায়িত্বে এসেছি। তারপর থেকে প্রতিমাসে যে খরচ হয় তা স্যারের (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান) ছেলে পাঠাতো। এখন সে আমেরিকায় থাকে। আমেরিকায় যাওয়ার পর থেকে একাউন্টেট হাসান সাহেব প্রতিমাসে কুরিয়ারে খরচের টাকা পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে প্রতিমাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। তা হাসান সাহেব প্রতিমাসে কুরিয়ারে পাঠান। তবে সরকারী কোন অর্থ সহয়তা পাইনি কখনো।

তিনি বলেন ‘দাপ্তরিক সব রিপোর্ট কুরয়ারে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.এম মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী রিয়াজুর রহমানের প্রতিনিধি মোঃ হাসানের কাছে পাঠাই। এর বেশি কিছু জানি না। সবকিছু মিলিয়ে সীমিত সম্পদ ও অবকাঠামো দিয়ে সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করি।’

এই প্রতিষ্ঠানের জায়গা কার নামে নিবদ্ধিত সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি এই কর্মকর্তা। কিছুক্ষণ পর অফিসের পুরানো ফাইলে ঘেটে হিসাব করে তিনি জানন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৬২  এতিম ও দুস্থ্য এখান থেকে পড়াশুনা করে প্রশিক্ষন নিয়ে গেছে। পরে ২ তলা বিশিষ্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দিয়ে নিচতলার একটি কক্ষে প্রক্ষিন কাজে ব্যবহৃত ৫টি সেলাই মেশিন দেখা যায়। বাকি সব কক্ষগুলো পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.এম মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী রিয়াজুর রহমানের প্রতিনিধি মোঃ হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, রিয়াজুর রহমান স্যার প্রতিমাসে টাকা পাঠাতে বলেন তাই পাঠিয়ে দেই। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারব না।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কানিজ ফাতেমা মোস্তফা বলেন, আমাদের নিবন্ধিত এতিমখানার তথ্য বাদে অন্য কোন এতিমখানার তথ্য আমাদেও কাছে থাকে না। জিয়া মেমোরিয়াল অর্ফানেজ ট্রাষ্টের ব্যপারে কিছু জানা নাই।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ