শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......হোটেল শৈবাল ওরিয়নকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্তে কক্সবাজারের বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ

হোটেল শৈবাল ওরিয়নকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্তে কক্সবাজারের বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ

পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা সভায় কক্সবাজারের হোটেল শৈবালসহ ১৩৫ একর জমি ওরিয়ন গ্রুপকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে কক্সবাজারের মানুষ। জানা গেছে, কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী পর্যটন শৈবালের ১৩৫ একর জমি মাত্র ৬০ কোটি টাকায় ওরিয়ন গ্রুপকে দীর্ঘমেয়াদি লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই মধ্যে শৈবালের লিজ ঠেকাতে কক্সবাজারবাসী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। সম্প্রতি প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে গেলে সেখান থেকে পুণরায় পর্যালোচনার জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরই অংশ হিসেবে গত রবিবার পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে সভাপতিত্ব করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল। ওই পর্যালোচনা সভায় পর্যটন শৈবালের ১৩৫ একর জমি ৫০ বছরের জন্য ওরিয়ন গ্রুপকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। তবে এর জন্য পাঁচটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় ওরিয়ন গ্রুপকে।  শর্তগুলো হলো : শৈবালের ওই ১৩৫ একর জমিতে ৭ তলার বেশি বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না, প্রকল্পে যেসব জনবল নিয়োগ করা হবে তারমধ্যে ২০ শতাংশ কক্সবাজারের স্থানীয়দের নিতে হবে, শৈবালের সামনের (রাস্তার পাশের অংশে) ৩০০ ফুটের মধ্যে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না, প্রতি সপ্তাহে একদিন কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের জন্য ওরিয়নের সকল স্থাপনা উন্মুক্ত রাখতে হবে এবং প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে একটি ঝাউগাছও কাটা যাবে না।

পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর মাধ্যমে ‘কক্সবাজার পর্যটন ও বিনোদন উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় ৫০ বছরের জন্য ওরিয়ন গ্রুপকে শৈবালের ১৩৫ একর জমিতে স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে উন্নয়ন করতে দেয়া হলেও জমির মালিক থাকবে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (বিপিসি)। নির্ধারিত সময় ৫০ বছর পার হওয়ার পর চুক্তি নবায়ন না হলে ওরিয়ন গ্রুপের কাছ থেকে ওই জমি নিয়ে নেবে পর্যটন কর্পোরেশন। এ প্রকল্পের আওতায় ওরিয়ন গ্রুপ সেখানে নির্মাণ করবে পাঁচ তারকা মানের হোটেল, ১৮ তলবিশিষ্ট গলফ কোর্স, বিনোদন পার্ক, অত্যাধুনিক একটি মিনি সিনেমা হলসহ নানা স্থাপনা।

পর্যালোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সদর–রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সচিব এসএম গোলাম ফারুক, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. নাঈম হাসান, পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান খান কবীর, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক মো. শামীম আলম, ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম, প্রকল্প পরিচালক লে. জেনারেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এবিষয়ে যোগাযোগ করা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শর্ত সাপেক্ষে ওরিয়ন গ্রুপকে পর্যটন শৈবালের ১৩৫ একর জমি বুঝিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। তবে কখন নাগাদ এই বিষয়ে চুক্তি হবে সেটি তিনি অবগত নন।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ জানান, সম্প্রতি পর্যটন শৈবাল ওরিয়ন গ্রুপের কাছে হস্তান্তর না করতে কক্সবাজারে মানববন্ধন বিক্ষোভসহ নানা আন্দোলন গড়ে তোলে কক্সবাজারের মানুষ। সভায় তিনি সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। কক্সবাজারের জনগণ ওরিয়ন গ্রুপকে হোটেল শৈবাল কিছুতেই হস্তান্তর করতে দেবে না বলে যে হুঁশিয়ারি করা হয়েছে সেটিও তিনি সভায় উল্লেখ করেছেন।

ফোরকান আহমদ আরও বলেন, বিষয়গুলো শোনার পর মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারী) কক্সবাজার সফরে আসার কথা বলেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী। এই বিষয় নিয়ে তিনি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্থানীয়দের সাথে বৈঠক করবেন। স্থানীয়দের মতামত নেওয়ার পরই মন্ত্রী চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে বির্তকিত ওরিয়ন গ্রুপকে মাত্র ৬০ কোটি টাকায় শৈবালের সমস্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার খবরে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, কক্সবাজারকে কোনোভাবেই বিক্রি করতে দেয়া হবে না। হোটেল শৈবাল রক্ষায় আমরা আজকালের মধ্যেই পর্যটনমন্ত্রীর সাথে কথা বলবো। প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো।

জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, পর্যটন মন্ত্রণালয় ও পর্যটন করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে এটি বিক্রি করে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। এই প্রক্রিয়ার সাথে কক্সবাজারের কিছু রাঘববোয়ালও জড়িত। কিন্তু শরীরের একবিন্দু রক্ত থাকতে আমরা তা হবে দেবো না।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে সাগরিকা রেঁস্তোরা চালুর মধ্য দিয়ে কক্সবাজার পর্যটনে শৈবালের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে আজ অবদি রেস্তোরাটি ভোজন রসিকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পায়। পরে ১৯৮৫ সালে এখানে আবাসিক প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। চড়াই–উৎরাই পেরিয়ে পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে হোটেল শৈবাল বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ