চার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ায় বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি চার সিটি কর্পোরেশনে প্রার্থী দিয়েছে। এর মানে তারা নির্বাচনের পথে আসছেন।” তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়ন করছে। আর সেটা দেখে বিএনপির অশান্তি শুরু হয়েছে।”
মঙ্গলবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া সংলগ্ন কুমারভোগ পদ্মা সেতু পূনর্বাসন প্রকল্পের অভ্যন্তরে লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আমাকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। বলেছিলেন আমি নাকি পালানোর পথ খুঁজে পাবোনা। আল্টিমেটাম ব্যর্থ হওয়ায় এখন তিনিই পথহারা পথিক হয়ে গেছেন।” তিনি আরও বলেন, “কিসের জোরে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। হেফাজতকে নিয়ে এসে আর জামায়াত-শিবিরের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ বন্ধ করতে আপনি সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। আওয়ামী লীগকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই বরং আপনার পায়ের নিচেই মাটিই সরে গেছে। আপনিই পথ হারা পাখি হয়ে গেছেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কাউকে আল্টিমেটাম দেইনা। বাসে আগুন, পুলিশের ওপর হামলা, মানুষ হত্যাকরে সরকার উৎখাত করা যাবে না।” সময়মতো নির্বাচন হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখুন। অগণতান্ত্রিক ধারায় আর কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবেনা।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ জনগণকে ভোট ও ভাতের অধিকার দিয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুদা ও দারিদ্রতামুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।”
সমুদ্র বিজয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা জিতেছি, ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গেও জিতবো। সমুদ্রজয়ের মতো ক্রিকেটেও সিরিজ জয় করেছি আমরা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা জানি মুন্সিগঞ্জে প্রতি বছর নদী ভাঙনে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই কারণে আমরা ইতোমধ্যেই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এখানে প্রচুর আলু উৎপাদন হয়। কৃষকরা আলু রাখার জায়গা পায় না। তাই আমরা হিমাগার তৈরি এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “মুন্সিগঞ্জে মেরিন একাডেমি খোলার পরিকল্পনা নিয়েছি এতে এখানকার সন্তানরা প্রশিক্ষিত হয়ে বিদেশে গিয়ে কাজ করতে পারবে। এছাড়াও গজারিয়ায় একটি ওষুধ শিল্প ও গার্মেন্টস পাড়া খোলার পরিকল্পনা নিয়েছি। এবারের বাজেটে এসব কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দও রাখা হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ক্ষমতায় এসে রাস্তা, স্কুল-কলেজ, মন্দির, মসজিদ সংস্কার করেছি। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। ১৯৯৬ সালে বিএনপি বলেছিল, খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভাল কথা নয় এতে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যায় না। বঙ্গবন্ধু বলেছিল যে, দেশে একটি বীজ ফেললে গাছ হয়, সে দেশের মানুষ খাদ্যে কষ্ট করতে পারে না। এখন কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে এবং কোনো জামানত ছাড়াই ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারে। নিয়মিত ভর্তুকী পায়।”
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “মা-বোন যেন ঘরে বসে স্বাস্থ্য সেবা পায় সে কারণে আমরা ১১ হাজার কমিউনিটি মেডিকেল সেন্টার চালু করেছিলাম অথচ বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ মা-বোন ঘরে বসে স্বাস্থ্য সেবা পেলে বিএনপিকে ভোট দেবে না। আগে সরকারি ওষুধ বাজারে বিক্রি হতো। আমরা ওষুধের রঙ বদলে দেওয়ার পরে সরকারি ওষুধ আর বাজারে বিক্রি হয় না।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটি জাতিকে উন্নতি করতে হলে যা যা করা দরকার আমরা সব করেছি। আমাদের সন্তানরা যেন শিক্ষিত হতে পারে সে কারণে আমরা ১ লাখ ১৬ হাজার শিক্ষার্থীদের স্নাতক পর্যন্ত বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” এসময় তিনি আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি জনসভায় আগত মুক্তিযোদ্ধাসহ মুন্সিগঞ্জবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এর আগে নৌ দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজে গতি বাড়াতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বহরে যুক্ত হওয়া ‘নির্ভীক ও প্রত্যয়’ নামে দুটি উদ্ধারকারী জাহাজসহ বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দুপুর সোয়া দু’টায় লৌহজংয়ের মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দোগাছি হেলিপ্যাডে নেমে প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে গাড়িতে করে মাওয়ায় পৌঁছান।