ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একসঙ্গে এক পরিবারে চার সদস্য থাকার সুযোগ তৈরিতে আইন সংশোধনের প্রস্তাবটি পাসের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে বিলটি নিয়ে আলোচনা শেষে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়। বুধবার সংসদে তা পাসের জন্য উপস্থাপন হতে পারে বলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন। চলতি বছরের ৮ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংশোধিত আইনের খসড়া অনুমোদনের পর থেকে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আসছেন। নতুন এই সিদ্ধান্তে বেসরকারি ব্যাংকে ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েমের সুযোগ তৈরি হবে বলেও প্রতিক্রিয়া আসে। প্রভাবশালীদের সুযোগ দিতে আইনে এই সংশোধন আনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যেই গত সেপ্টেম্বর মাসে বিলটি সংসদে ওঠার পর তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। কমিটির সভাপতি রাজ্জাক মঙ্গলবার বলেন, “বিলটি যেভাবে এসেছে, সেভাবে কমিটি পাস করার সুপারিশ করেছে। গত অক্টোবর মাসে বিলটি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার কথা ছিল। তবে ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থিত না থাকায় আলোচনা করেনি সংসদীয় কমিটি।
ওই বৈঠকের পর সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা জানতে চাই, কোন যুক্তিকে আইনের সংশোধন করা হচ্ছে। তবে মঙ্গলবারের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী ছিলেন না। কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, গত ২৯ অক্টোবর বৈঠকে সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, “এক পরিবার থেকে চারজন সদস্য থাকতে পারবে, একটানা নয় বছর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে পারবে- এ বিষয়গুলো পুনর্বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন। তিনি বৈঠকে বলেছিলেন, নিশ্চয়ই নানান দিক বিবেচনা করে মন্ত্রিসভা এই বিল অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতি ও সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য আবার ফেরত পাঠানো যায় কি না, সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।
কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, “বিলটি উত্থাপিত আকারে পাস হলে ব্যাংক খাত আরও বেশি পরিবারকেন্দ্রিক হয়ে কিছুটা নিরপেক্ষতা হারাতে পারে। বিলটি পুনর্বিবেচনার পক্ষে ফরহাদ মত দিয়েছিলেন বলে বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা যায়। একই মত দেন কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহানও। ওই বৈঠকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, মন্ত্রিসভা ‘গভীরভাবে বিবেচনা’ করেই বিলটির অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন, যা অনুসরণ করেই কাজ করল সংসদীয় কমিটি। বিদ্যমান আইনে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দুজন সদস্য একটি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন। আর তিন বছর করে পরপর দুই মেয়াদে মোট ছয় বছর একই ব্যক্তি পরিচালক হতে পারেন। এরপর তিন বছর বিরতি দিয়ে আবারও পরিচালক হতে পারেন।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোতে অনেকেরই পরিচালক থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছিল। তার আগে আইন সংশোধনের উদ্যোগ ব্যাংক পরিচালকদের কাছে সরকারের নতি স্বীকার হিসেবে দেখেছেন অনেকে। সংশোধিত আইনে একটানা নয় বছর পরিচালক পদে থাকার বিধানও রাখা হয়েছে। সংশোধনীতে পরিচালকের মেয়াদ সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার পরে কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক পদে একাদিক্রমে নয় বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। একই ধারায় বলা হয়, একাদিক্রমে নয় বছর পদে থাকার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন বছর অতিবাহিত না হলে তিনি পরিচালক পদে পুনঃনিযুক্তির জন্য যোগ্য হবেন না। এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়, কোনো ব্যক্তি পরিচালক পদে তিন বছরের চেয়ে কম সময় অধিষ্ঠিত না থাকলে একাদিক্রমে নয় বছর গণনার ক্ষেত্রে উক্ত সময়েও অন্তর্ভুক্ত হবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ পাস হওয়ার পর থেকে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালকদের মেয়াদ-সম্পর্কিত ধারাটি পাঁচবার সংশোধন করা হয়েছে। এই ধারায় ব্যাংকের পর্ষদে একজন পরিচালক কত বছর পরিচালক থাকতে পারবেন, সে কথা বলা রয়েছে। সর্বশেষ ধারাটি সংশোধন করা হয় ২০১৩ সালে। এবার ষষ্ঠবারের মতো সংশোধন হতে যাচ্ছে।