সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এক সভায় তারা একথা বলেন। স্মরণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। অন্য কোনো পন্থায় নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, “১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করেছিল তখন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। এখন তিনি কোন মুখে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করেন?
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে। আগামী নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়ে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “কোনো সহায়ক সরকার হবে না, কোনো ভাবনার সরকার হবে না। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। আপনারা আসলে আসবেন, না আসলে রাস্তায় গিয়ে চিৎকার করুন। আপনাদের সঙ্গে কোনো কথা হবে না। এরা একাত্তরের, পঁচাত্তরের খুনি। খুনিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “সাংবাদিক ভাইদের বলছি, লিখে রাখুন- আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। ২০১৯ সালে বিজয়ের মাসে এ নির্বাচন হবে। বিএনপির আন্দোলনের হুমকি উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আন্দোলন করে লাভ নেই। আওয়ামী লীগ আন্দোলনে চ্যাম্পিয়ন। আমরা মার খেয়ে মাঠে থেকেছি। আর বিএনপি?
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে নাসিম বলেন, “যদি সাহস থাকে আগামী নির্বাচনে আসেন। নির্বাচনের মাঠ থেকে পালাবেন না। দেখব, জনগণ কাকে চায়। মিথ্যাচার, মানুষ হত্যা, লুটপাট, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির জন্য জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করবে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠ চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ চার সংগঠক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে বন্দি এবং কারাগারে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে হত্যা করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় এখনও ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনার পিছু তাড়া করছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
স্মরণ সভার আমু বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যারা স্বীকার করতে পারেনি, তারাই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে। আর এই জিয়া-মোস্তাকের ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় এখনও শেখ হাসিনার উপর বার বার আক্রমণ আসচ্ছে। মতিয়া চৌধুরী বলেন, “ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ক্ষমতার লোভে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ক্ষমতার লোভ এখনও শেষ হয়নি। তাই বারবার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। জাতীয় চার নেতার একজন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথও রুদ্ধ করে গেছে। একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনিরাই জেল হত্য এবং ২১ অগাস্ট হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। নইলে কলঙ্কিত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসুস্থতার কারণে এই সভায় অংশ নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “অস্ত্রোপচারের পর উনার যতটুকু বিশ্রামে থাকার কথা ছিল, উনি তা ছিলেন না। তিনি চাপ নিয়ে কাজ করেছেন। উনি এ রকম জাতীয় দিবসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি, এমনটা ঘটেনি। উনি অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। আগামী ৫ নভেম্বর কমনওয়েলথ পার্লামেন্টরি কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করবেন আশা করছি।
সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।